সপ্তাহ খানেক হলো আমরা নতুন বাসায় উঠেছি। এ বাসায় ওঠার পর থেকেই দেখছি, প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে একটা বেড়াল বাসায় আসে।
Published : 07 May 2017, 03:13 PM
আমি বোধ হয় আগেই একবার বলেছিলাম যে, সিঙ্গাপুরের বাসাগুলোর দরজায় দুটো স্তর থাকে। একটি কাঠের দরজা, আর একটি লোহার গ্রিলের দরজা। সচরাচর কাঠের দরজাটি লাগানো হয় না। সারাদিন লোহার গ্রিলের দরজা আটকে রাখা হয় যা দিয়ে বাসায় আলো-বাতাস ঢোকে, এমনকি একটা বেড়ালও অনায়াসে ঢুকতে পারে এই দরজার ফাঁক দিয়ে। আর এভাবেই প্রতিদিন আমাদের বাসায় ওই বেড়ালটি প্রবেশ করছে।
বাসায় ঢুকেই বেড়ালের প্রধান কাজ হলো আমাদের শোবার ঘরের খাটের নিচে গিয়ে লুকিয়ে থাকা অথবা রান্নাঘরে গিয়ে ওয়াশিং মেশিন বা বেসিনের ওপর দিয়ে হেঁটে বেড়ানো আর জিনিসপত্র ফেলে দেয়া। ফলে, বেড়ালটা বাসায় ঢুকলেই ভয়ে থাকি কখন রান্নাঘরে গিয়ে কী ফেলে দিলো বা ঘরে ঢুকে খাটের নিচে গিয়ে ময়লা ফেলে আসলো। সে একেবারে শোবার ঘরের দরজার পাপোশের ওপর বসে থাকে, দরজা খুললেই ঘরে ঢুকবে। তো সারাক্ষণ কে তার পেছনে লেগে থাকবে? কার এতো সময় আছে?
বিরক্ত হয়ে একদিন ফেসবুকে লিখলাম, “বাসায় একটা বেড়াল খুব বিরক্ত করছে, বেড়ালকে কিছু বলতেও ভয় পাই”। আমার এই লেখাটা পড়ে ফেইসবুকে আমার বন্ধুরা হাসাহাসি করছিল আর বেশ মজার মজার মন্তব্য করছিল। কেউ বলছিল বেড়ালকে কাঁটা খেতে দিন, কেউ বলছিল বেড়ালকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিন, কেউ কেউ আবার বেড়ালটাকে তার কাছে পাঠিয়ে দিতেও বলছিল।
বুঝতে পারলাম, আমার সমস্যাটা আসলে কেউ ধরতেই পারেনি। সমস্যাটা ধরতে পারলে, সবাই আমার সমস্যাটার ব্যাপারে সিরিয়াস হয়ে যেত।
তাহলে, এবার একটা সিরিয়াস ঘটনাই শোনাই। কি বলেন আপনারা? এ বছরের মার্চ মাসে, বেড়াল হত্যা ও অপব্যবহারের দায়ে সিঙ্গাপুরের আদালত এক ব্যক্তিকে ১৮ সপ্তাহের জেল দিয়েছে। এই কথা শোনার পর তো বেড়ালের আশপাশে দিয়ে যেতেও আমার ভয় হয়। জানি, আমার বাংলাদেশি ফেইসবুক বন্ধুরা এই ভয়ের ব্যাপারটা বুঝতে পারবে না। কারণ, যে দেশে প্রকাশ্যে মানুষ জবাই করে পালিয়ে যাচ্ছে আততায়ীরা, বিচার না পেয়ে আত্মহত্যা করছে ধর্ষিতারা, সেদেশের মানষের কাছে বেড়ালকে ভয় পাওয়ার বিষয়টা তো হাস্যকরই মনে হবে।
বাংলাদেশে এসব অঘটন হরহামেশাই ঘটছে। আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে। কারণ, আমরা পাথর হয়ে গেছি। যখন হত্যা, ধর্ষণের মতো জঘন্যতম অপরাধগুলোর সুরাহা হয় না ঠিক মতো, তখন এসব ছোটখাটো বিষয়গুলোকে আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। আবার ধরেন যদি, হত্যা-ধর্ষণ এর মতো বিষয়গুলোর ঠিকমতো বিচার হতো, তাহলে হয়তো একটা বেড়ালের জীবনও আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতো। বাংলাদেশে মানুষেরই যেখানে জীবনের কোনো মূল্য নেই, পশুপাখি হত্যার বিচার চাইবে কে?
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এইভাবেই কি চলবে বাংলাদেশ? নাকি এই অবস্থার কখনও কোনো উন্নতি হবে? অবস্থার পরিবর্তন করতে চাইলে তো বিচার ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। কোনো অপরাধীই যেন অপরাধ করে বেঁচে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, একটা অপরাধের বিচারহীনতা নতুন আরেকটা অপরাধের জন্ম দেয়।
আমার কথাই ধরুন না, আমি আগেই জেনেছিলাম এদেশে বেড়াল হত্যারও বিচার হয়, তাই আমার বাসার বেড়ালটিকে আমি বেশ সমীহ করেই চলি। তার প্রতি কোনো রকম অন্যায় আচরণ করার তো প্রশ্নই ওঠে না, দূরে থাকার চেষ্টা করি। বাংলাদেশের প্রশাসনকে শুধু বলবো, দেখুন এই বেড়ালটা যে পরিমাণ নিরাপত্তা পাচ্ছে, আমাদের দেশের মানুষগুলোও তা পাচ্ছে না! বুঝতে পারেন, আপনারা কতটা ব্যর্থ?
তথ্যসূত্র:
লেখক: রোকেয়া লিটা, লেখক ও সাংবাদিক
ই-মেইল: [email protected]
এই লেখকের আরও লেখা
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |