প্রবাসে বসে 'পুরুষ' উপন্যাসটি লেখার অভিজ্ঞতা

কয়েক বছর আগে ‘পুরুষ’ উপন্যাসটি লেখা শুরু করেছিলাম। কিন্তু নানা কারণেই উপন্যাসটি লেখা বেশি দূর এগোয়নি।

রোকেয়া লিটাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Feb 2017, 01:19 PM
Updated : 20 Feb 2017, 01:19 PM

এরই মধ্যে ‘পুরুষ’ উপন্যাসটি বাদ দিয়ে ২০১৫ সালে আগামী প্রকাশনী থেকে ‘সমকামিতা’ ও ২০১৬ সালে সময় প্রকাশন থেকে ‘ডুমুরের ফুল’ নামে দুটি উপন্যাস লিখে প্রকাশও করে ফেললাম। কিন্তু ‘পুরুষ’ উপন্যাসটি আর এগোলো না।

২০১৬ সালের বইমেলা শেষ হওয়ার পর একটা লম্বা সময়ের জন্য আমি সিঙ্গাপুরে বসবাস করা শুরু করলাম। সিঙ্গাপুরে আমার কাজের অনুমতি না থাকায় আমি কোনো চাকুরি করতে পারছিলাম না। এর ফলে, আমার হাতে তখন অখণ্ড অবসর। তখনি মনে হলো, সময়টা কাজে লাগানো উচিত। কম্পিউটারে পুরোনো ফাইল ঘেঁটে ঘেঁটে ‘পুরুষ’ উপন্যাসটি খুঁজে বের করলাম।

খুব সামান্যই লিখেছিলাম অবশ্য। তবে,লেখালেখির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো,একটি লেখা শুরু করলে সেটি শেষ করাটা খুব একটা কঠিন নয়। বেশিভাগ ক্ষেত্রেই লেখাটা শুরু করা নিয়েই রাজ্যের আলসেমি কাজ করে। ফলে, ‘পুরুষ’ উপন্যাসটি লেখার ক্ষেত্রে তেমন কোনো সমস্যাই হলো না। উপন্যাসটি লেখা শুরু করেছিলাম, এখন সেটা লিখে শেষ করতে হবে।

উপন্যাসে আমি যে কাহিনী তুলে ধরেছি, সেটি কয়েক বছর আগে একেটি মেয়ের জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা। উপন্যাসে মৃদুলা নামে একটি মেয়েটিকে ছদ্মনামে পাওয়া যাবে। কার্তিক নামে এক হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছেলের প্রেমে পড়ে মৃদুলা। কার্তিক নিজেকে নাস্তিক বলেই দাবি করে। ধর্ম তার কাছে এক ধরণের আফিম, সবাইকে সে এই আফিম থেকে দূরে থাকতে বলে।

সারাজীবনে সে যতগুলো মেয়ের সাথে প্রেম করেছে, তারা সবাই ছিল মুসলমান। কার্তিকের প্রেমে পড়ে একটি মেয়ে আত্মহত্যা করলেও সে থেমে থাকে না। একের পর এক মেয়েদের সাথে প্রেম করেই যায় সে। বরং, তার মৃতপ্রেমিকাকে পুঁজি করেই সে মেয়েদের পটায়। উপন্যাসের নায়িকা মৃদুলা তেমনি একটি মেয়ে, যে কিনা কার্তিকের ফাঁদে পা দেয় এবং তার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে জীবনের চরম মূল্য দেয়। একটা সময় মৃদুলা বুঝতে পারে কার্তিক নাস্তিকও নয়, কার্তিক প্রেমিকও নয়। সে একজন কট্টর মৌলবাদী হিন্দু। সারাজীবন মুসলমান মেয়েদেরকে প্রেমের ফাঁদে ফেলাই ছিলো তার মৌলবাদের হাতিয়ার।

মোটামুটি এই হলো উপন্যাসটির মূল কাহিনী। লেখালেখির জন্য আমার হাতে অখণ্ড অবসর, তা সত্ত্বেও অন্য একটি সমস্যায় পড়লাম। উপন্যাসে যেসব ঘরবাড়ি,পথঘাটের বর্ণনা এসেছে, তা আমি ভুলতে বসেছি প্রায়। ঢাকায় থাকলে হয়তো সেসব জায়গায় আবার ঘুরে এসে সহজে লিখে ফেলা যেত। যেমন, আমার ‘সমকামিতা’ উপন্যাস লেখার সময় যেসব জায়গার বর্ণনা এসেছে,আমি বারবার সেসব জায়গায় গিয়েছি এবং বর্ণনাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

আবার ‘ডুমুরের ফুল’ উপন্যাসটিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবেশ ও প্রকৃতির যে বর্ণনা এসেছে, তা ওইসময় আমি ওই এলাকায় অবস্থান করে দেখেছি এবং সেভাবেই তুলে ধরেছি। কিন্তু, ‘পুরুষ’ উপন্যাসটি লেখার সময় আমি তো সেটি করতে পারছি না। কারণ, আমি তো তখন সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছি। চাইলেই বাংলাদেশে গিয়ে ওইসব পথঘাট দেখে আসতে পারছি না। ফলে, আমার মস্তিষ্কের ওপর বড় ধরনের একটি চাপ পড়ে। স্মৃতি হাতরে হাতরে আমি ‘পুরুষ’ উপন্যসটির প্রকৃতি ও পরিবেশের বর্ণণা করি।

এরই মধ্যে একদিন শব্দশৈলী প্রকাশনী থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করা হয়। আমার ‘ডুমুরের ফুল’ উপন্যাসটি নিয়ে খুব আলোচনা হওয়ায়, তারা আমার পরবর্তী উপন্যাস প্রকাশ করার আগ্রহ প্রকাশ করে। যেহেতু বিদেশে আছি, অন্যান্য প্রকাশকদের সাথে খুব একটা যোগাযোগ হচ্ছিলো না। শেষ পর্যন্ত, শব্দশৈলীর সাথেই ‘পুরুষ’ উপন্যাসটি প্রকাশের ব্যাপারে কথা চূড়ান্ত করে ফেলি।

অগাস্টের শেষের দিকে আমি ‘পুরুষ’ উপন্যাসটির পাণ্ডুলিপি শব্দশৈলী প্রকাশনীতে পাঠিয়ে দেই। মোটামুটি পাঁচ মাস সময় পেলো তারা বইটি প্রকাশ করার জন্য। আমার ধারণা ছিলো, এই সময়ের মধ্যে তারা খুব চমৎকারভাবেই উপন্যাসটিতে বানানের ভুলগুলো বা ছোট খাটো সম্পাদনার কাজগুলো সেরে নিতে পারবে। যেহেতু বিদেশে অবস্থান করছিলাম, তাই প্রকাশকের উপরে একটু বেশিই নির্ভর করলাম। কেননা, আমার অন্যান্য উপন্যাসগুলোর ক্ষেত্রে প্রকাশকের অফিসে গিয়ে সম্পাদনার কাজগুলো করে এসেছি।

কিন্তু বিদেশে থাকায় ‘পুরুষ’ উপন্যাসটির বেলায় তা করতে পারিনি। ফলে প্রকাশককে অনেক লম্বা একটা সময় দিয়ে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছিলাম উপন্যাসটিতে বানানগুলো যেন নির্ভূলভাবে সম্পাদনা করা হয়।

শেষে আমার আশঙ্কাই সত্যি হলো। ঢাকায় আসার পর মেলায় গিয়ে বই হাতে নিয়ে দেখি প্রচুর বানান ভুল! বিষয়টি মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর। উপন্যাসে বানান ভুল দেখে আমি নিজেও ভীষণ বিব্রতবোধ করছিলাম, কারণ ভুল সংশোধনতো দূরের কথা কি-বোর্ডের চাপে নতুন করে কিছু ভুলও তৈরি হয়েছে।

যেমন, অনেক জায়গায় আমি লিখেছি ‘নিলো’ শব্দটি, অথচ বইতে দেখি এসব জায়গায় হয়ে আছে ‘দিল’ শব্দটি। তারপরও আমি আশাবাদী, আমার যে ক্ষুদ্র পাঠকগোষ্ঠী আছেন,তারা প্রবাসে বসে উপন্যাস রচনার বাস্তবতা মেনে নেবেন এবং বরাবরের মতই আমার এই উপন্যাসটিও তাদের কাছে সমাদৃত হবে।

কারণ, অন্যান্য উপন্যাসগুলোর মতই,এই উপন্যাসটি লেখার বেলায়ও আমার আন্তরিকতা ও পরিশ্রমের কোনো অভাব ছিল না। আসলে অনেকেই বইয়ের মান নিয়ে একতরফাভাবে শুধু লেখককেই দায়ী করে থাকেন,কিন্তু তাদের বোঝা উচিত একটি মানসম্পন্ন বই এর জন্য দরকার লেখক ও প্রকাশকের যৌথপ্রয়াস এবং আন্তরিতা। যাই হোক, একটি বই একজন লেখকের কাছে সন্তানতুল্য।

আশা করি, আমার পাঠকেরা বিষয়টিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতেই দেখবেন। পুরুষ উপন্যাসটি পাওয়া যাবে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে শব্দশৈলী প্রকাশনীতে। স্টল নম্বর ৩৫৭-৩৫৮-৩৫৯।

লেখক: ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক

ই-মেইল: rokeya.lita@hotmail.com

এই লেখকের আরও লেখা

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!