নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করবে বিএনপি

ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ থেকে ঘোষণা করা দেশব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচির অংশ এটি বলে জানান বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Dec 2022, 01:00 PM
Updated : 12 Dec 2022, 01:00 PM

নয়া পল্টনে পুলিশি অভিযানের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে বিএনপি। 

মঙ্গলবার বেলা ২টায় ঢাকা মহানগর বিএনপির আয়োজনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ হবে বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

সোমবার দুপুরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে ঘোষণা করা ঢাকা নগরসহ দেশব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচির অংশ এটি।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করার কথা জানান তিনি।

সংবাদ বিফ্রিংয়ের আগে সোমবার সকাল ১১টায় নয়া পল্টনে ছয় তলা কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভবনের প্রতিটি তলা ঘুরে দেখেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা।

নয়া পল্টনে বিএনপির নেতকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর চার দিন কার্যালয়টি বন্ধ ছিল। রোববার সেখান থেকে পুলিশি ব্যারিকেড সরে গেলে বিএনপি নেতারা কার্যালয়ে ঢোকেন।

Also Read: জামিন হয়নি ফখরুল, আব্বাসের

Also Read: নয়া পল্টনের কার্যালয় খুলেছে, ঢুকে ‘হতভম্ব’ বিএনপি নেতারা

Also Read: বিএনপি কার্যালয়ে অভিযানে মিলেছে ১৬০ বস্তা চাল: পুলিশ

Also Read: বিএনপি কার্যালয় ‘ক্রাইম সিন’, নিরাপত্তার কারণেই প্রবেশ নিষেধ:  পুলিশ

সোমবার কার্যালয়ে আসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান।

তারা প্রতিটি কক্ষ ঘুরে ঘুরে দেখেন। দলের ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স নেতাদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব কিছু দেখান।

বিএনপির ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশস্থল নিয়ে দলটির সঙ্গে টানাপড়েনের মধ্যে গত বুধবার নয়া পল্টনে চড়াও হয় পুলিশ। কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়া বিএনপিকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত এবং বহু আহত হয়।

এরপর বিএনপি কার্যালয়ে ঢুকে আবদুস সালাম, আমানউল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভীসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা এবং কয়েকশ নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ।

সেদিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কার্যালয়ে ঢুকতে গিয়েও পুলিশের বাধায় পারেননি। পরদিনও তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে তাকেও বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযানের সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিএনপি কার্যালয় থেকে তাদের উপর হাতবোমা ছোড়া হয়েছিল, এখানে নাশকতার পরিকল্পনা হয়েছিল। সেজন্য এটি এখন ‘ক্রাইম সিন’, তাই কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

নয়া পল্টন ছেড়ে বিএনপি শনিবার গোলাপবাগ মাঠে জনসভা করার সময়ও বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছিল। তখন পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, বিএনপির সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হলে এবং নেতা-কর্মীরা ঘরে ফিরে গেলে নয়া পল্টনের অবরোধ তুলে নেওয়া হবে।

এদিন ঘুরে দেখার সময় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা দোতলায় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কার্যালয়, তৃতীয় তলায় মহাসচিবের চেম্বার, কেন্দ্রীয় দফতর, হিসাব বিভাগসহ অন্যান্য তলায় বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের অফিসের দরজা, আসবাপত্র, সিসিটিভি ক্যামেরা ও জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান। তারা গুরুত্বপূর্ণ নথি-কাগজপত্রসহ সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন।

পরে সাংবাদিকদের কাছে খন্দকার মোশাররফ অভিযোগ করেন, কার্যালয়ের সবকিছু ‘তচনচ’ করা হয়েছে। কম্পিউটারের মনিটর-সিপিও ও স্ক্যানার নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘‘এখানে এভাবে একটা সরকার কোন ভিত্তিতে এত পাগল হয়ে এত মাথা খারাপ হয়ে এভাবে ঘটনা ঘটাতে পারে- আমাদের কোনো রাজনৈতিক হিসাবে মিলে না। তবে তাদের একটা একথা আছে- খেলা। আর এটাকে যদি খেলা বলা হয় আসলে আমরা বিএনপি এই খেলাতে বিশ্বাস করি না। আমরা রাজনীতি করি, আমরা গণতন্ত্রের জন্য রাজনীতি করি।”

তার অভিযোগ, ‘‘স্বৈরাচারি ফ্যাসিস্ট সরকার ৭ ডিসেম্বর নয়া পল্টনে আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যে আচরণ করেছে তাতে এটা প্রমাণ করে যে, তারা একটি ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী, গায়ের জোরের সরকার। আমাদের ভাষা নেই। কোন ভাষায় নিন্দা জানাব।”

জ্যেষ্ঠ নেতাসহ সাড়ে চারশ এর বেশি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, “একটি স্বাধীন দেশে বিজয়ের মাসে এ ধরনের একটি বর্বরোচিত ঘটনার চিত্র দেখবে এটা কেউ আশা করেনি।”

সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন মোশাররফ। তার দাব, ‘‘আজকে জনগণের পিঠ দেয়ালে লেগে গেছে। তাই জনগণ আমাদের এই বার্তা দিয়েছে- যে সকল ক্ষেত্রে এই আওয়ামী লীগ গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে তাদের পক্ষে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, অর্থনীতিকে মেরামত, বিচার ব্যবস্থায় নিরপেক্ষতা এবং আইনশৃঙ্খলা বিভাগের মধ্যে স্বাধীনতা দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এদের পক্ষে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনা সম্ভব নয়।

“অতত্রব জনগণ রায় দিয়েছে এই সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। আমরা বাংলাদেশের মানুষের কথা বলছি, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলছি।”