সংঘাতময় দিন পেরোনোর পর দুই দলই নতুন কর্মসূচি দিয়েছে; তবে এবার আলাদা দিনে।
Published : 30 Jul 2023, 01:30 AM
নির্বাচনে ঘনিয়ে আসার মধ্যে ঢাকায় দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশে উত্তেজনা ছড়ালেও তা শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছিল। তবে তার এক দিন বাদেই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি গড়াল সংঘাতে।
শনিবার ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের অবস্থান কর্মসূচি থেকে সংঘাতে আহত হয়েছেন ডজনখানেক ব্যক্তি, পোড়ানো হয়েছে অন্তত তিনটি বাস, ভাংচুর হয়েছে আরও গাড়ি।
সংঘাতের জন্য বিএনপির নেতা-কর্মীদেরই দায়ী করেছে পুলিশ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বলছে, বিএনপি আবার ‘অগ্নিসন্ত্রাসের’ পথে যাচ্ছে।
অন্যদিকে পুলিশ ও আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বিএনপি বলেছে, বিনা উসকানিতে তাদের নেতা-কর্মীদের উপর হামলা হয়। ক্ষমতাসীনরা বাসে আগুন দিয়ে সেই দায় তাদের উপর চাপাতে চাইছে।
সংঘাতের পর দুই পক্ষই নতুন কর্মসূচি দিয়েছে। তবে এবার আর এক দিনে নয়। আওয়ামী লীগ রোববার সারাদেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। বিএনপি প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে সোমবার।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি তোলা বিএনপি শুক্রবার ঢাকায় ‘মহাসমাবেশের’ ডাক দিলে সেদিন আওয়ামী লীগের সহযোগী তিনটি সংগঠনও পাল্টা ‘শান্তি সমাবেশ’ ডাকে।
তা নিয়ে কথার লড়াইয়ে বেশ উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। তবে সেই সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়। সমাবেশ থেকে বিএনপি শনিবার ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণার পর আওয়ামী লীগও সেসব স্থানে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
নয়াবাজার, যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, আবদুল্লাহপুর এই চারটি স্থানে বিএনপির কর্মসূচি পালনের ঘোষণা থাকলেও পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাধায় কোথাও দাঁড়াতে পারেনি দলটির নেতা-কর্মীরা।
বিএনপির উপর চড়াও হওয়ার সময় পুলিশের পাশে লাঠিসোঁটা হাতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের।
নয়া বাজারে দাঁড়াতে না পেরে ধোলাইখালে এবং যাত্রাবাড়ীতে দাঁড়াতে না পেরে মাতুয়াইলে অবস্থান নিয়েছিল বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সেখানেই পুলিশ বাধা দিলে বাঁধে ব্যাপক সংঘাত।
ধোলাইখাল থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং গাবতলী থেকে আমানউল্লাহ আমানকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেলেও তাদের পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তবে মোট ৯০জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ বলছে, যেহেতু বিএনপির এই কর্মসূচি পালনের অনুমতি ছিল না, সেহেতু তা ছিল ‘বেআইনি’।
ধোলাইখাল: পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার সকালে নয়া বাজারে অবস্থান নিতে আসেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তবে পুলিশের বাধার মুখে তারা সরে গিয়ে ধোলাইখাল এলাকায় অবস্থান নেন। অন্যদিকে নয়া বাজারে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
সকাল সাড়ে ১১টায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন গলি থেকে জাতীয় পতাকা হাতে বেরিয়ে আসেন এবং খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে স্লোগান দিতে থাকেন।
সেখানে গয়েশ্বর রায়ের নেতৃত্বে মিছিলে ছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ।
এ সময়ে জনসন রোড থেকে আর্মর্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি) ও প্রিজন ভ্যান নিয়ে পুলিশ ধোলাইখালের দিতে এগোতে থাকে। পুলিশ ধাওয়া দিলে বিএনপিকর্মীরা ইট ছুড়তে শুরু করে। পাল্টা পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ও রবার বুলেট ছোড়ে।
ধোলাইখাল এলাকা থেকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত ছয়জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হযেছে।
তারা হলেন- পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আব্দুল আজিজ মাহমুদ (২৮), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন রুবেল (৩৫), কলাবাগান থানা ছাত্রদলের সভাপতি জাকিরুল আলম (৩২), ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নাট্যবিষয়ক সম্পাদক এনামুল হক এনাম (৩৫), কবি নজরুল কলেজ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান আবির (২৯) এবং বিএনপিকর্মী মো. ওবায়দুল (৪০)।
পুলিশের তৎপরতার মুখে দুপুর ১২টার দিকে মাঠ ছেড়ে দেয় বিএনপি। এরপর লাঠি-সোঁটা নিয়ে ওই এলাকায় অবস্থান নিতে দেখা যায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের। তখনও সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান করছিল।
বেলা সোয়া ১টার দিকে ধোলাইখাল মোড়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর নেতৃত্বে মিছিল বের হয়।
এদিকে সংঘাত চলার মধ্যে সাড়ে ১১টার দিকে আক্রান্ত হন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
মহানগর বিএনপির কর্মী আবদুস সোবহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গয়েশ্বর চন্দ্র দাদা যখন নেতা-কর্মীদেরকে ইট ছুড়তে বারণ করছিলেন এবং পুলিশের দিক থেকে ইট না মারতে বলছিলেন, ঠিক সময়ে সময়ে পুলিশের দিক থেকে আসা একটি ইটের টুকরো দাদার মাথার বাম দিকে এসে লাগে। দাদা সঙ্গে সঙ্গে সাদা টুপি মাথা থেকে খুলে দেখেন, রক্ত ঝরছে।
“এ সময় পুলিশ দাদাকে ঘিরে ফেলে টানা-হেঁচড়া করতে দেখেছি আমি। দাদার সাথে থাকা নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা করে। দাদাও লাঠিপেঠা থেকে রক্ষা পাননি।”
এসময় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদও লাঠিপেটার শিকার হন। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে রাস্তায় পড়ে যান গয়েশ্বর। এসময় পুলিশ সদস্যরা তাকে লাঠিপেটা করে বলে একটি ভিডিওতে দেখা যায়।
সেই অবস্থায় গয়েশ্বরকে তুলে একটি বদ্ধ দোকানের শাটার খুলে তার ভেতরে ঢোকায় পুলিশ। পরে দোকান থেকে বের করে তাকে পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
তখন ডিএমপির লালবাগ জোনের উপকমিশনার জাফর হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।”
৪ ঘণ্টা পর গয়েশ্বরকে ছেড়ে দিল পুলিশ
তবে চার ঘণ্টা পর গয়েশ্বর রায়কে নয়া পল্টনে তার কার্যালয়ে পৌঁছে দিয়ে আসে পুলিশ।
গয়েশ্বরের সঙ্গে থাকা যুবদলের কর্মী শাহীন ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ধোলাইখাল থেকে গয়েশ্বর রায়কে প্রথমে ওয়ারী থানায় নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে নেওয়া হয় মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে। সেখানেই তিনি মধ্যাহ্নভোজ সারেন।
ডিবি কার্যালয়ে বেশ আয়োজন করে গয়েশ্বর রায় ও ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের মধ্যাহ্ন ভোজের একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে।
মাতুয়াইল: যাত্রাবাড়ী কর্মসূচির স্থান হলেও সেখানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের অবস্থানের কারণে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মাতুয়াইলের দিকে সরে যায়।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাতুয়াইল মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে লাঠি-সোটা নিয়ে বিএনপির কয়েক শ নেতা-কর্মী অবস্থান নেয়৷ পুলিশ তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে কাঁদুনে গ্যাস ও রবার বুলেট ছুড়লে তারাও পাল্টা ইট ছুড়তে থাকে।
কয়েক ঘণ্টা ধরে সেখানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যেই তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাতুয়াইল মেডিকেল মোড়ে গুলিস্তানমুখী স্বদেশ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।
বাসটির চালক ইমরান হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি যাত্রী নিয়ে গুলিস্তানের দিকে যাচ্ছিলেন। মাতুয়াইল মেডিকেল মোড়ে পুলিশ গাড়ি আটকে তাকে ঘুরিয়ে দেয়। তিনি ইউটার্ন নিয়ে যাত্রী নামানোর জন্য দাঁড়াতেই কয়েকজন হেলমেট পরিহিত ব্যক্তি এসে বাসের পেছনের দিকে পেট্রোলজাতীয় কিছু ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
মাতুয়াইল মেডিকেল মোড়ে তুরাগ পরিবহনের একটি মিনিবাসে ১টার দিকে আগুন দেওয়া হয়। তবে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই তা নিভিয়ে ফেলা হয়।
বেলা পৌনে ২টার দিকে মাতুয়াইল মেডিকেল এলাকায় সান্টো ফিলিং স্টেশনের সামনে ঢাকা-কুমিল্লা রুটের তিশা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। বাসটি পেট্রোল পাম্পেই রাখা ছিল। সেখান থেকে বের হয়ে বাসটি মহাসড়কে ওঠার সময় এটিতে অগ্নিসংযোগ হয়।
তিশা পরিবহনের বাসটির চালক মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, একটি মোটরসাইকেলে তিন যুবক এসে দুজন নেমে তার বাসে আগুন দেয়।
“হ্যারা গাড়িত উইঠা… হাতে আড়াই বা তিন লিটারের একটা বোতল আছিল। আমারে কয় তুই নামবি না তোর উপ্রে ঢালমু। আমারে ইস্টার্টটা (ইঞ্জিন) বন্ধ করতে সুযোগও দেয় না, আমি লাফ দিয়া পইড়া নামছি।”
ওখানে কী কোন মিছিল ছিল-জানতে চাইল সানাউল্লাহ বলেন, “ওইখানে কুনো মিছিল আছিল না। দুনো পাশে পুলিশ। হ্যারা মোটরসাইকেল নিয়া আসছে। আইসা ব্যাস, হ্যাগো কাম হ্যারা কইরা গ্যাছে গা।”
তিশা পরিবহন বাসটির কর্মী মো. মাসুম জানান, যারা আগুন দিয়েছিল, চালককে নামিয়ে দিয়ে তারা বাসের ভেতর সেলফিও তোলেন।
মাতুয়াইলে ঘটনাস্থলে থাকা র্যাব-১০ এর পরিচালক মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিভিন্ন গলি থেকে বের হয়ে বাসে কিছু ব্যক্তি অগ্নিসংযোগ করেছে। যারাই এ ধরনের নাশকতামূলক কাজে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মাতুয়াইলে সংঘর্ষে আহত আশরাফ মিয়া (১৮) নামে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি গাড়ির ইঞ্জিন মিস্ত্রি বলে জানা গেছে।
আশরাফ বলেন, তিনি গ্যারেজ থেকে বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় রাস্তায় দাঁড়ানো গাড়ি থেকে নেমে একজন পুলিশ সদস্য শটগান থেকে গুলি চালালে তার দুই পা ও ডান হাতে হাতে গুলি লাগে।
গাবতলী: আমানের নেতৃত্বে বিএনপির একদল নেতা-কর্মী বেলা ১১টার পর গাবতলীতে অবস্থান নিলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পুলিশ আমানকে আটক করতে চাইলে নেতা-কর্মীদের বাধার মুখে পড়ে। ধস্তাধস্তির সময় আমান সড়কে শুয়ে পড়েন।
এক পর্যায়ে সঙ্গে নেতা-কর্মীদের হটিয়ে দিয়ে পুলিশ সদস্যরা আমানকে ধরে তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।
এসময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে তাদের কয়েকজনকে ধরে বেধড়ক পেটায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা।
পুলিশ তৎপরতা ও আওয়ামী লীগের হামলার মুখে বেলা সাড়ে ১২টার মধ্যেই গাবতলী ছেড়ে দেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
এসময় গাবতলী প্রধান সড়কে হানিফ এন্টারপ্রাইজের নিজস্ব টার্মিনালের সামনে মঞ্চ বানিয়ে সভা করতে দেখা যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের। তারা লাঠি-সোঁটা হাতে বেশ কিছুক্ষণ এলাকা প্রদক্ষিণ করেন।
এদিকে আমানকে গাবতলী থেকে আটকের পর পুলিশ তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তাকে পাশের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
ডিএমপির মিরপুর বিভাগের দারুস সালাম জোনের সহকারী কমিশনার মফিজুর রহমান পলাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আটকের পর অসুস্থ বোধ করায় আমানকে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সব কিছু স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল।
“তার রিং পরানো থাকায় ওই হাসপাতলের চিকিৎসকগণ অধিকতর পর্যবেক্ষণের জন্য হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তখন তাকে সেখানে নেওয়া হয়।”
হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে তিন ঘণ্টাকাল ছিলেন আমান। এসময় পুলিশ ছিল তার পাহারায়।
দুপুরের পর প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব গাজী হাফিজুর রহমান লিকু জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে যান আমানকে দেখতে। তিনি আমানের জন্য খাবার ও ফল নিয়ে যান।
বিএনপি নেতাকে দেখে এসে গাজী হাফিজুর সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা। তিনি আমান ভাইর উন্নত চিকিৎসার জন্য যা যা করার প্রয়োজন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য আমানউল্লাহ আমান পছন্দের যে কোনো জায়গায় যেতে পারেন।
“রাজনীতির বাইরেও আমাদের মাঝে একটা মানবিক সম্পর্ক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার জন্য ফল ও খাবার পাঠিয়েছেন। জনাব আমানউল্লাহ প্রধানমন্ত্রীর এসকল উপহার গ্রহণ করেন এবং মানবতা ও রাজনৈতিক শিষ্টাচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।”
বিকাল ৪টার দিকে আমান ওই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। তাকে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে তার ব্যক্তিগত সহকারী উজ্জ্বল হোসেন জানান।
উত্তরা: দুপুর ১২টার উত্তরা বিএনএস ভবনের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে গেলে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ভেতরের অলি-গলিতেও।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের সঙ্গে লাঠি-সোঁটা হাতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতা-কর্মীরাও ছোটাছুটি করছিলেন। সাত নম্বর সেক্টরের ভেতরের সড়কগুলোতে বিএনপিকর্মীদের লাঠিপেটা করেন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতা-কর্মীরা। সংঘাতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
এসময় যমুনা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার শরীফুল ইসলাম খান আহত হন। সংঘাতের ভিডিও ধারণের সময় দৈনিক যুগান্তরের প্রতিবেদক তরিকুল ইসলামের মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা।
‘বেআইনি’ সমাবেশ, গ্রেপ্তার ৯০
ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি থেকে সংঘাতের জন্য বিএনপিকে দায়ী করেছে পুলিশ।
ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বেআইনি’ সমাবেশ থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের উপর হাতবোমা ছুড়েছে, গাড়ি ভাংচুর করেছে, আগুন ধরিয়েছে। জনদুর্ভোগ, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় ৯০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি-মিডিয়া) ফারুক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “শুক্রবার রাতেই পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের ও গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, অবস্থান কর্মসূচি পালনের জন্য তাদের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। যেহেতু ডিএমপির পক্ষ থেকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি, কাজেই তাদের এই সমাবেশ আইনগতভাবে বেআইনি।”
রাস্তা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দিতে পুলিশকে বাধ্য হয়ে বলপ্রয়োগ এবং রবার বুলেট ছুড়তে হয় বলে দাবি করেন তিনি।
ফারুক বলেন, “তারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে, বিভিন্ন গাড়িতে আগুন দেয়, ককটেল মারে এবং পুলিশের ওপর অতর্কিতে হামলা করে, গাড়ি ভাংচুর করে। তারা পুলিশের আট থেকে ১০টি গাড়ি এবং ২০টির মতো অন্যান্য গাড়ি ভাঙচুর করেছে।”
বিএনপিকর্মীরা ভাংচুর চালায়, হাতবোমা ছোড়ে: পুলিশ
ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা ছিল: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) মেহেদি হাসানসহ ২০ জনের মতো পুলিশ সদস্য আহত হন বলে জানান ফারুক।
হামলায় আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে রাজারবাগ হাসপাতালে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির উদ্দেশ্য ছিল রাজধানীকে গোটা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা।
তিনি বলেন, “আজকে তারা ঢাকাকে সারা বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার মতো একটা পরিকল্পনা করেছিল। একজন নেতার কথা বলেছি। যেটা আমরা প্রমাণ পেয়েছি, যেখানে ‘ভিডিও করে জ্বালাও আগুন জ্বালাও, আগুনের শটটা পাঠাতে হবে, তোমরা জ্বালিয়ে আমাকে কনফার্ম কর’ বলেছেন।”
বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। তবে যখনই তারা গাড়ি ভাংচুর করবে, হত্যার প্রচেষ্টা করবে, অরজকতা করবে, তখনই নিরাপত্তা বহিনী তাদের যে অর্পিত দায়িত্ব সেটা তারা পালন করবে।”
পরস্পরকে দোষারোপ, কর্মসূচি এবার আলাদা দিনে
সংঘাতের জন্য পরস্পরকে দায়ী করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলই বিক্ষোভের কর্মসূচি দিয়েছে।
দিনভর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে থাকা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিকালে সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, “আগামীকাল সারা দেশে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর শাখার প্রতিটি থানায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ করা হবে।”
সন্ধ্যার পর গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এসে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
প্রমাণিত হল, সুষ্ঠু ভোটে বিএনপিই বাধা: কাদের
সোমবার মহানগর ও জেলায় বিএনপির জনসমাবেশ
তিনি বলেন, “আজকে রাজধানীতে যে অত্যাচার-নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে, তার প্রতিবাদে আমরা আগামী সোমবার ৩১ জুলাই সারাদেশে সকল মহানগর ও জেলা সদরে জনসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করছি।”
তিনি একইসঙ্গে বলেন, “আগামীকালই আমরা প্রতিবাদের দিন হিসাবে পালনের কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি যে আগামীকাল সরকারি দল রাজপথে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।
“আমরা তাই তাদের মতো একই দিনে কর্মসূচি দিয়ে সংকট সৃষ্টি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করব, এই গণতান্ত্রিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ পালনে কোনো বাধা সৃষ্টি করা হবে না।”
শনিবারের সংঘাতের জন্য ক্ষমতাসীনদের দায়ী করে ফখরুল বলেন, “শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বানচাল করার জন্য সরকার তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের অন্যায় ও বেআইনিভাবে জনগণের বিরুদ্ধে নামিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে।।”
বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনার জন্যও ক্ষমতাসীনদের দায়ী করে তিনি বলেন, “সোশাল মিডিয়া ও পত্রিকায় সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়ে খবর বেরিয়েছে যে, পুলিশের সামনেই এসব ঘটনা ঘটিয়ে ভিডিও করে অপরাধীরা নির্বিঘ্নে চলে গেছে। কারা এটা করতে পারে তা অনুমানের জন্য বেশি বুদ্ধিমান হওয়ার প্রয়োজন নেই।
“এই আগুনের ঘটনা সরকারি লোকেরা, এজেন্সির লোকেরা, এমনকি আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ঘটিয়ে পরিকল্পিতভাবে ভিডিও করে তারা আবার মোটরসাইকেল নিয়ে পুলিশের সামনে দিয়ে চলে গেছে।”
অন্যদিকে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমরা যা আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই এখন সত্যি হল। আমরা বার বার বলেছি, তাদের আন্দোলনের এক দফা হল অগ্নিসন্ত্রাস। তারা এটাই চেয়েছিল, এটাই শুরু করত গতকাল। আমাদের গতকাল শক্ত অবস্থানের কারণে তারা কিছু করতে পারেনি।”