বিএনপি নেতাকে দেখতে হাসপাতালে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
Published : 29 Jul 2023, 05:12 PM
ঢাকার গাবতলীতে অবস্থান কর্মসূচি থেকে আটকের পর পুলিশ হেফাজতে হাসপাতালে ভর্তি বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান ছাড়া পেয়েছেন।
শনিবার দুপুরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বিকালে তিনি ‘স্বেচ্ছায় চলে যান’ বলে হাসপাতালটির পরিচালক জানিয়েছেন।
আমানকে বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে তার সহকারী জানিয়েছেন।
বিএনপির এই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানিয়েছেন শেরেবাংলা নগর থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া।
হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে থাকা অবস্থায় তার খোঁজ খবর নিতে দুপুরে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি খাবারও পাঠান সাবেক এই ছাত্রনেতার জন্য।
ডাকসুর সাবেক ভিপি, ৯০ এর ছাত্র আন্দোলনের নেতা আমান বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে নামা বিএনপি শনিবার ঢাকার সব প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছিল। তবে পুলিশ এই কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়নি।
আমানের নেতৃত্বে বিএনপির একদল নেতা-কর্মী গাবতলীতে অবস্থান নিলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পুলিশ আমানকে আটক করত চাইলে নেতা-কর্মীদের বাধার মুখে পড়ে। ধস্তাধস্তির সময় আমান সড়কে শুয়ে পড়েন।
এক পর্যায়ে সঙ্গে নেতা-কর্মীদের হটিয়ে দিয়ে পুলিশ সদস্যরা আমানকে ধরে তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।
সেখান থেকে আমানকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন ডিএমপির মিরপুর বিভাগের দারুস সালাম জোনের সহকারী কমিশনার মফিজুর রহমান পলাশ।
তিনি দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অাটকের পর অসুস্থ বোধ করায় আমানকে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সব কিছু স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল।
“তার রিং পরানো থাকায় ওই হাসপাতলের চিকিৎসকগণ অধিকতর পর্যবেক্ষণের জন্য হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তখন তাকে সেখানে নেওয়া হয়।”
আমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না- তখন জানতে চাইলে তিনি শুধু বলেন, “উনি এখন পুলিশ হেফাজতে আছেন।”
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. মীর জামাল উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দুপুরে বলেছিলেন, “চেস্টে কিছুটা সমস্যা বোধ করছিলেন তিনি। এ কারণে তাকে এখানে আনা হয়েছে। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি।”
হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে তিন ঘণ্টাকাল ছিলেন আমান। এসময় পুলিশ ছিল তার পাহারায়।
তবে বিকাল ৪টার দিকে আমান হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান বলে বলে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক মীর জামাল জানান।
তিনি বলেন, “উনার এ মুহূর্তে কোনো সমস্যা নাই। তিনি স্বেচ্ছায় যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করার পর বিকাল ৪টার দিকে চলে গেছেন।”
সেখান থেকে আমানকে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে তার ব্যক্তিগত সহকারী উজ্জ্বল হোসেন জানান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেখানে (এভারকেয়ার) চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে আমান যাওয়ার সময় শেরেবাংলা নগর থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া সেথানে ছিলেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, আমানকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
এদিন ধোলাইখাল থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কেও আটক করেছিল পুলিশ। চার ঘণ্টা পর পুলিশ তাকেও ছেড়ে দেয়।
হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি
প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আমানক দেখতে প্রধানমন্ত্রী তার সহকারী একান্ত সচিব গাজী হাফিজুর রহমান লিকুকে হাসপাতালে পাঠাচ্ছেন।
দুপুরের পর গাজী হাফিজুর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে যান আমানকে দেখতে।
বিএনপি নেতাকে দেখে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা। তিনি আমান ভাইর উন্নত চিকিৎসার জন্য যা যা করার প্রয়োজন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য আমানউল্লাহ আমান পছন্দের যে কোনো জায়গায় যেতে পারেন।
“রাজনীতির বাইরেও আমাদের মাঝে একটা মানবিক সম্পর্ক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার জন্য ফল ও খাবার পাঠিয়েছেন। জনাব আমানউল্লাহ প্রধানমন্ত্রীর এসকল উপহার গ্রহণ করেন এবং মানবতা ও রাজনৈতিক শিষ্টাচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।”
প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব নূরে এলাহি মিনা জানান, প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো দুপুরের খাবার, বিভিন্ন প্রকার মৌসুমী ফল ও জুস আমানের হাতে তুলে দেন এপিএস-২ গাজী হাফিজুর রহমান।