“আমরা তাদের মত একই দিনে কর্মসূচি দিয়ে সংকট সৃষ্টি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি,” বলেন মির্জা ফখরুল।
Published : 29 Jul 2023, 09:04 PM
ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচিতে ‘নিপীড়ন-নির্যাতনের’ প্রতিবাদে সোমবার দেশের সব মহানগর ও জেলা সদরে জনসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
শনিবার রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, “আজকে রাজধানীতে যে অত্যাচার নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে, তার প্রতিবাদে আমরা আগামী সোমবার ৩১ জুলাই সারাদেশে সকল মহানগর ও জেলা সদরে জনসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করছি।”
নির্দলীয় সরকারের দাবি তুলে সরকার পতন আন্দোলনে নামা বিএনপি শনিবার ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছিল। তার পাল্টায় আওয়ামী লীগও সেসব স্থানে অবস্থানের ঘোষণা দেয়।
পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বিএনপিকে স্থানগুলোতে দাঁড়াতেই দেয়নি। ধোলাইখাল ও মাতুয়াইলে তাদের সঙ্গে বিএনপিকর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।
অবস্থান কর্মসূচি ডেকে বিএনপির ‘সন্ত্রাস চালিয়েছে’ অভিযোগ তুলে তার প্রতিবাদে রোববার সারা দেশে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিক্ষোভের কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতাসীন দলের ওই কর্মসূচির দিকে ইংগিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আগামীকালই আমরা প্রতিবাদের দিন হিসাবে পালনের কথা ভেবেছিলাম, কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি যে, আগামীকাল সরকারি দল রাজপথে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।
“আমরা তাই তাদের মত একই দিনে কর্মসূচি দিয়ে সংকট সৃষ্টি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করব এই গণতান্ত্রিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালনে কোনো বাধা সৃষ্টি করা হবে না।”
ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে ‘পুলিশ ও সরকারি দলের হামলা, গ্রেপ্তাররসহ’ এক দফার পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করতে বিএনপির স্থায়ী কমিটি বিকালে বৈঠকে বসে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এই ভার্চুয়াল বৈঠক হয়।
বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব ঢাকার প্রবেশমুখে তাদের ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচিতে পুলিশ ও সরকারি দলের ‘হামলা, টিয়ারশেল নিক্ষেপ, গুলিবর্ষণের ঘটনার’ নিন্দা জানান।
তিনি বলেন, “দেশ ও দেশের মানুষের কাঁধে সিন্দাবাদের দৈত্যের মত চেপে বসা অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অনির্বাচিত জাতীয় সংসদ বাতিল ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বিএনপিসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের ডাকা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বানচাল করার জন্য সরকার তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের অন্যায় ও বেআইনিভাবে জনগণের বিরুদ্ধে নামিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে।
“ওদের নির্মম আক্রোশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মাথায় মারাত্মক রক্তক্ষরণ, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমানসহ অসংখ্য নেতা-কর্মীকে আহত ও অগণিত নেতা-কর্মীকে নির্বিচারে গ্রেপ্তারের ঘটনা প্রমাণ করে যে, ক্ষমতালোভী এই সরকারের হাতে দেশের কোনো নাগরিক নিরাপদ নয়। এই সরকার আজ শুধু ঘৃণা ও ধিক্কার পাওয়ার যোগ্য।”
গাড়িতে আগুন দিয়ে কারা
মির্জা ফখরুল বলেন, মাতুয়াইল ও শ্যামলীতে গাড়িতে আগুন দেওয়া ও ভাংচুরের ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করা হচ্ছে বলে তারা জানতে পেরেছেন।
“অথচ সোশ্যাল মিডিয়া ও পত্রিকায় সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়ে খবর বেরিয়েছে যে, পুলিশের সামনেই এসব ঘটনা ঘটিয়ে ভিডিও করে অপরাধীরা নির্বিঘ্নে চলে গেছে। কারা এটা করতে পারে তা অনুমানের জন্য বেশি বুদ্ধিমান হওয়ার প্রয়োজন নেই।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “নিজেরা অপরাধ করে বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিচ্ছি।
‘সরকারি লোকেরা, এজেন্সির লোকেরা, এমনকি আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা’ ওই ঘটনাগুলো ঘটিয়ে পরিকল্পিতভাবে ভিডিও করে মোটরসাইকেল নিয়ে পুলিশের সামনে দিয়ে চলে গেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “অগ্নিদগ্ধ গাড়ির চালক, সেও বলেছে যে, এই ঘটনা বলেছে। যারা প্রত্যক্ষদর্শী, তারা বলেছে; এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, পরিকল্পিত প্লট তৈরি করার জন্য, একটা নাটক তৈরি করার জন্য তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামা ওবায়েদ, জহির উদ্দিন স্বপন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম, শাম্মী আক্তার, তাইফুল ইসলাম টিপু, কাজী রওনুকুল ইসলাম টিপু ও আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সারাদেশে রোববার বিক্ষোভের ডাক আওয়ামী লীগের