‘‘দলের শীর্ষ নেতাদের বন্দি করে, বাড়ি ছাড়া করে, ঘর ছাড়া করে ওরা কিসের সংলাপ করতে চায়,” বলেন তিনি।
Published : 02 Nov 2023, 09:37 PM
আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনার জন্য বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নির্বাচন কমিশন চিঠি পাঠানোর পর দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই নির্বাচন কমিশন সংলাপের নামে তামাশা করতে চিঠি দিয়েছে।
ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবন্ধ থাকায় বৃহস্পতিবার সকালে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এক কর্মকর্তা ওই চিঠি নিয়ে গেলেও দলটির নেতাদের না পেয়ে এবং যোগাযোগ করতে না পেরে ফেরত যান।
পরে সন্ধ্যায় বিএনপির বন্ধ অফিসে গিয়ে সেখানে একটি চেয়ারের ওপর চিঠিটি রেখে আসেন ডেসপাস শাখার বার্তাবাহক, কারণ চিঠি গ্রহণ করার মত কেউ তখনও ছিলেন না।
সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশনের চিঠি প্রসঙ্গে বিএনপির জ্যেষ্ঠ মহাসচিবের প্রতিক্রিয়া আসে।
গত শনিবার সংঘাতের পর মহাসমাবেশ পণ্ডের দিন থেকে অনলাইন মাধ্যমে অজ্ঞাত স্থান থেকে বিএনপির পক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন এই নেতা।
রিজভী বলেন, ‘‘এটা (ইসির চিঠি) কিসের সংলাপ? কার জন্য সংলাপ। দলের শীর্ষ নেতাদের বন্দি করে, বাড়ি ছাড়া করে, ঘর ছাড়া করে ওরা কিসের সংলাপ করতে চায়।
“এটা মানুষকে লোক দেখানোর জন্য তামাশা করছেন। পার্টি অফিসে কাছে একজন স্টাফ (নির্বাচন কমিশনের) চিঠি নিয়ে এসেছেন। কার কাছে চিঠি দেবেন? দলের মহাসচিব (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) কারাগারে, দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা আজকে বাসা ছাড়া, ঘর ছাড়া, মিথ্যা মামলা দিয়ে আপনারা নেতৃবৃন্দকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করছেন। আর বিএনপিকে পাঠাচ্ছেন চিঠি।“
তার অভিযোগ, “সরকারের নির্দেশে এই তামাশাগুলো করা হচ্ছে, উপহাসগুলো করা হচ্ছে, ঠাট্টা-ইয়ার্কি করা হচ্ছে সংলাপের নামে নির্বাচন কমিশন।”
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অগ্রগতিসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনার জন্য বিএনপিসহ ৪৪টি নিবন্ধিত দলের সাধারণ সম্পাদক বা মহাসচিবকে এই চিঠি দিচ্ছে ইসি।
আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে শনিবার সকালে ও বিকালে দুই ভাগে ২২টি করে দলের সঙ্গে এই সভা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এর আগেও কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দু’দফা সংলাপে বিএনপিসহ কয়েকটি দল অংশ নেয়নি। সে কারণে বিএনপি ও সমমনা দল এবং সিপিবি, বাসদসহ সংলাপ বর্জন করা ৯ দলকে গত মার্চে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তাতেও সাড়া দেয়নি দলগুলো।
পরে এ বিষয়ে রিজভী বলেন, ‘‘আমরা জানি এই নির্বাচন কমিশন কী করবে? কিন্তু তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে যে তালিকা আসবে সেই তালিকা অনুযায়ী উনি বিজয়ী বলে ঘোষণা করবেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
‘‘এটা ছাড়া উনি (সিইসি) কিছুই করতে পারবেন না। এখন উনি সংলাপের নামে তামাশা করার জন্য চিঠি দেন।”
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘দলীয় কার্যালয় আজ ৪/৫ দিন জনশূন্য। সেখানে কোনো স্টাফ যেতে পারছেন না। প্রত্যেকে আতঙ্কের মধ্যে, শঙ্কার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন এবং পার্টি অফিসের সামনে ক্রাইম সিন বলে মাইক্রো রাখা হয়েছিল সেটাও আমরা দেখেছি।
‘‘এসবের মধ্য দিয়ে সরকার চিত্রিত করার চেষ্টা করেছে, চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন যে বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। কিন্তু আমি প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে এটুকু শুধু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমি পুরনো কথা বাদ দিলাম, আজ থেকে ১০ বছর আগে একটি মারলে ১০টি মারতে হবে… এসব কথাও না বললাম…
“সম্প্রতি যে কথাগুলো বলেছেন, ওইটা কি সন্ত্রাসী ছাড়া কেউ বলতে পারে না। ওরা যদি হাত দেয় সেই হাত ভেঙে দেব… এটা কার কথা, হাত পুড়িয়ে দিতে হবে এগুলো কোনো ভদ্রলোক বলতে পারে না।”
দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে হয়রানি ও অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন:
বিএনপি অফিসে তালা, ফিরে গেল ইসির চিঠি
ভোট প্রস্তুতি: ৪৪ দলকে আলোচনায় ডেকেছে ইসি
ইসির অনানুষ্ঠানিক আলোচনাতেও ‘আগ্রহ নেই’ ৯ দলের
‘বিশিষ্ট ভদ্রলোক’ সিইসিকে বিএনপির ধন্যবাদ, আলোচনার আহ্বানে ‘না’