Published : 29 Apr 2025, 08:56 PM
চাকরি স্থায়ীকরণ ও বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন কোভিড-১৯ প্রকল্পে অস্থায়ী নিয়োগ পাওয়া স্বাস্থ্যকর্মীরা।
মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ভবনের সামনের দুটি ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। ফলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যানবাহন ঢোকা কিংবা বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
দেশে কোভিড মহামারী শুরুর পর ২০২০ সালে ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ দেওয়া হয় চিকিৎসক, ল্যাব কনসালটেন্ট, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ডেটা অ্যান্ট্রি অপারেটর, ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট, আয়া ও ক্লিনার।
সবশেষ ওই প্রকল্পে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ এক হাজার চারজন কর্মরত আছেন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো.আবু জাফর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই প্রকল্পের কর্মীরা দুদিন ধরে অবস্থান করছে। মঙ্গলবার বিকালের পর তারা ফটকে তালা দিয়েছে।
“আমি মিনিস্ট্রিতে ছিলাম। গেটে তালা দেওয়ায় আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বের হতে পারছেন না। কোনো গাড়ি বের হতে পারছে না। তারা সেখানে আটকে আছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে পকেটগেট খুলে দিয়েছে। বড় গেটের তালা এখনও আছে।”
অধ্যাপক আবু জাফর বলেন, “ওই কর্মীরা অযৌক্তিক আন্দোলন করছে।
“তারা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছিল, প্রতি বছর নবায়ন হত। কিন্তু এখন অপারেশনাল প্ল্যান শেষ হয়ে গেছে। তারা এখন চাকরিতে আত্মীকরণ চাচ্ছে। এটা তো ইমোশনাল দাবি। চেয়ারের বিষয়ে তো মানবিকতা দেখানোর কোনো জায়গা নেই। আমার ওপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় আছে। আমরা সেভাবে দাবিদাওয়া পেশ করেছি। কিন্তু তারা আমাদের অফিসে এসে বিশৃঙ্খলা করছে। কাজকর্ম বিঘ্নিত হচ্ছে।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গিয়ে দেখা যায়, দুটি ফটকে তালা দেওয়া। কয়েকটি গাড়ি বের হওয়ার অপেক্ষায় আছে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা বের হতে দিচ্ছেন না।
সরকারি ইউনানি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তো এখানকার না। একটা কাজে স্যার এসেছিলেন। এখন আমাদেরকেও বের হতে দিচ্ছে না।”
মাসুম আহমেদ নামে আন্দোলনকারীদের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের একটাই দাবি, চাকরি স্থায়ী করতে হবে। ২০২০ সালে ছয় মাসের জন্য আমরা ওই প্রকল্পে ঢুকি। আমরা জানি ছয় মাস পরে শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু বারবার প্রকল্প বর্ধিত করে আমাদের পাঁচ বছর রেখেছে।
“অনেক আশ্বাসের কারণে আমরা সেখানে ছিলাম। এই সময়ের মধ্যে অনেকে এটার ওপর নির্ভরশীল হয়ে গেছে। অনেকের চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে। আমরা আর অন্য কোথাও চাকরি আবেদন করতে পারছি না।”
মোহাম্মদ ফয়সাল নামে এক আন্দোলনকারী বলেন, “২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল, আমাদের ভালো কিছু হবে। কিন্তু গত চার মাস আমরা কাজ করেছি কোনো বেতন নাই। বর্ধিতও করা হচ্ছে না। আমাদের দাবি চাকরি স্থায়ী করতে হবে।”
আন্দোলনকারীরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে দাবি করেছেন, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্পের অর্থায়ন শেষ হলেও ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৫ম এইচপিএনএসপির আওতায় প্রকল্প চলমান রাখতে প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মৌখিক নির্দেশনায় তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।