Published : 28 Apr 2025, 10:55 PM
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
১১তম গ্রেডে বেতন পাওয়া প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম ও ১৩তম গ্রেডে বেতন পাওয়া শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রধান শিক্ষকরা এ উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করে ২০১৪ সাল থেকে সব প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে বেতনের সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
তবে এ উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করে সহকারী শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয় অনুবিভাগের যুগ্মসচিব রেবেকা সুলতানা সোমবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সংস্কারে পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ও আদালতের রায় অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব পাঠাতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে।
“প্রস্তাব পাওয়ার পর তা প্রথমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়া হবে।”
গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত চিঠি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত অক্টোবরে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সংস্কারে পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়। এর আহ্বায়ক করা হয় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদকে। কমিটিতে একজন সদস্য সচিব এবং ৭ জন সদস্য ছিলেন। গত ১০ ফেব্রুয়ারি কমিটি সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেয়।
কমিটির পক্ষ থেকে, সহকারী শিক্ষক পদ বিলুপ্ত করে এন্ট্রি (চাকরিতে প্রবেশ) লেভেলের শিক্ষক পদে ১২তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। আর প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে দেওয়া এবং পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
এদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা ১০ম গ্রেডে দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার মর্যাদা ও বেতন পাবেন বলে গত ১৪ মার্চ রায় দেয় আপিল বিভাগ।
২০১৪ সাল থেকে দশম গ্রেড দাবি
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির একাংশের সভাপতি রিয়াজ পারভেজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দীর্ঘ সময় আইনি লড়াই শেষে আপিল বিভাগ আমাদের দশম গ্রেডে বেতন দেওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছেন। ওই রায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করায় আমরা সন্তুষ্ট।
“কিন্তু আমরা চাই সব প্রধান শিক্ষককে যেন ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে দশম গ্রেডের বেতন সুবিধা দেওয়া হোক।”
সমিতির অপরাংশের সভাপতি মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা অবশ্যই সন্তুষ্ট, তবে আমরা উপদেষ্টা, সচিব ও ডিজি মহোদয়ের কাছে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে সব প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডের বেতন সুবিধা দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।”
সহকারী শিক্ষকরা চান ১১তম গ্রেড
যদিও বেতন বাড়িয়ে ১২তম গ্রেড করার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছেন সহকারী শিক্ষকরা। তারা পরামর্শক কমিটির সুপারিশ সংশোধন করে সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, চাকরির ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা নিরসন ও প্রধান শিক্ষকের শতভাগ পদে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি দেওয়ার দাবিতে কর্মবিরতির ঘোষণা করেছেন।
প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কর্মবিরতির কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
মোর্চাভুক্ত সংগঠন বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি শাহিনুর আল আমিন বলেন, “আমরা সহকারী শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডে এন্ট্রি ধরে বেতন নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছি। এজন্য আমরা কর্মবিরতি ঘোষণা করেছি। সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে নির্ধারণের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা কর্মবিরতি কর্মসূচিতে অটল আছি।”
একই নামের মোর্চার আরেক সংগঠনের সভাপতি মো. আনিসুর রহমান বলছেন, প্রধান শিক্ষকদের একধাপ নিচে সহকারী শিক্ষকদের বেতন ছিল, যা ২০১৪ সালের পর দুই বার পেছানো হয়।
“আমরা আগের মত প্রধান শিক্ষকদের একধাপ নিচে ১১তম গ্রেডে বেতনের দাবি জানাচ্ছি, আর সে দাবিতে কর্মবিরতি ঘোষণা করেছি। আমরা ১১তম গ্রেডে বেতনের দাবিতে অনড় আছি।”
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের ঘোষণা অনুযায়ী ৫ থেকে ১৫ মে এক ঘণ্টা করে, ১৬ থেকে ২০ মে দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করবেন শিক্ষকরা। এরপর ২১ থেকে ২৫ মে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে।
আর ২৬ মে থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন শিক্ষকরা।