বরিশাল সদর আসনে আওয়ামী লীগের জাহিদ ফারুক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহও পরস্পরের প্রার্থিতা বাতিল চেয়েছেন।
Published : 09 Dec 2023, 08:27 PM
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া শাহজাহান ওমরের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল হয়েছে নির্বাচন কমিশনে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে যাচাই বাছাইয়ে বাদ পড়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা মো. মনিরুজ্জামানের পক্ষে শনিবার আপিলটি করা হয়। অন্য একটি আবেদন করা হয় তার প্রার্থিতা ফিরে পেতে।
আওয়ামী লীগ নেতার হয়ে আবেদনটি জমা দেন জাকির পরিচয় দেওয়া একজন।
অন্য এক আপিলে ফরিদপুর-৩ (আসনে) স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের প্রার্থিতা বাতিল চেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হক। আগের দিন শুক্রবার শামীমের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেছিলেন আজাদ।
বরিশাল-৫ আসনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষে পাল্টাপাল্টি আবেদন জমা পড়েছে।
কেন শাহজাহান ওমরের প্রার্থিতা বাতিল চান মনির?
আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি নাটকীয় ঘটনাটি ঘটেছে শাহজাহান ওমরকে নিয়ে।
বিএনপির হয়ে ১৯৭৯, ১৯৯১, ১৯৯৬ সালের দুটি ও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি ঝালকাঠি-১ আসন থেকে জিতেছিলেন। হেরে যান ২০১৮ সালে।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের মধ্যে বাসে আগুন দেওয়ার মামলায় ৫ নভেম্বর গ্রেপ্তার হন শাহজাহান, ২৯ নভেম্বর বিকেলে জামিন পেয়ে মুক্তি পেয়ে যান সন্ধ্যাতেই।
পরের দিন সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডেকে নেন তাকে। এরপর ঝালকাঠি-১ আসনে তাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়।
এর আগে ২৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সেই আসনে প্রার্থী করে তিনবারের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনকে। মনোনয়নপত্র হারুনও জমা দিয়েছিলেন, তবে যাচাইবাছাইয়ে বাদ পড়ে যান।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের এক শতাংশের সমর্থনের প্রমাণ দিতে না পারায় রিটার্নিং কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মনিরুজ্জামানের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন।
শাহজাহান ওমরের প্রার্থিতা বাতিলের আবেদনের বিষয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনি হলফনামায় মামলার তথ্য গোপন করেছেন, সম্পদবিবরণীও সঠিকভাবে দেননি বলে গণমাধ্যমে এসেছে। সংক্ষুব্ধ হয়ে আমার পক্ষ থেকে একজন আপিলটি করেছেন।”
এই আবেদনের বিষয়ে শাহজাহান ওমরের বক্তব্য জানতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
আমি শুরু থেকেই জয় বাংলার লোক: শাহজাহান ওমর
মনিরুজ্জামান আশা করছেন, নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতাও ফিরিয়ে দেবে।
তিনি বলেন, “১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর যাচাইয়ের সময় একজন আসতে বিলম্ব হওয়ায় মনোনয়নপত্রটি বাতিল হয়েছিল। শুনানি হলে সঠিক সিদ্ধান্ত পাব বলে আশা করি।”
আজাদের বিরুদ্ধে শামীম হকের কী অভিযোগ
ফরিদপুর-৩ আসনে পাঁচটি জাতীয় নির্বাচনের পর প্রার্থী পাল্টেছে ক্ষমতাসীন দল। মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হককে। সেই প্রার্থিতা বৈধও ঘোষণা হয়েছে।
নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের কর্ণধার এ কে আজাদ।
শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিক- এমন একটি অভিযোগ তুলে আগের দিন শুক্রবার তার প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন আজাদ।
এবার আওয়ামী লীগ নেতার আবেদনে এ কে আজাদের যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব থাকার কথা উল্লেখ করে হলফনামায় ‘মিথ্যা তথ্য’ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শামীম বলেন, “আমার আইনজীবী সব বিষয় তুলে ধরেছেন। নির্বাচন কমিশন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের সব ‘অসত্য তথ্য’, দলিলাদি দেখে সঠিক সিদ্ধান্ত দেবে আশা করি।”
এ বিষয়ে এ কে আজাদের বক্তব্যও জানা যায়নি তিনি ফোন না ধরায়।
সাদিক-ফারুকও পাল্টিপাল্টি
বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহও একে অপরের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আবেদন করেছেন।
গত ৬ ডিসেম্বর সাদিকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের আবেদনটি জমা পড়ে।
ফারুকের মনোনয়নপত্রের সমর্থনকারী কে বি এস আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হলফনামায় অসত্য তথ্য দেওয়ার পরও সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। আমরা বিষয়টি তখন নজর এনেছিলাম। সেখানে বিষয়টি আমলে না নেওয়ায় ইসিতে আপিল করা হয়েছে।”
আপিলের শেষ দিনে এবার জমা পড়ে সাদিক আব্দুল্লাহর আপিল। নির্বাচন কমিশনে এসে আবেদনটি জমা দেন মো. ইফতাউল কামাল নামে এক ব্যক্তি।
সাদিক আব্দুল্লাহ চলতি বছর বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। মেয়র হিসেবে তার শেষ কর্মদিবসে দেওয়া নিয়োগও বাতিল করেছেন নতুন মেয়র সেরনিয়াবাত, যিনি সম্পর্কে সাদিকের আপন চাচা।
সব মিলিয়ে নির্বাচন কমিশনে মোট ৫৬১টি আপিল জমা পড়েছে। এর মধ্যে সাড়ে পাঁচশটির মতো পড়েছে প্রার্থিতা ফিরে পেতে। বাকিগুলো পড়েছে বৈধ ঘোষিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুনানি করে সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন।
আরও পড়ুন:
সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল চান জাহিদ ফারুক
ফরিদপুর-৩: নৌকার শামীমের প্রার্থিতা বাতিলে এ কে আজাদের আপিল
শাহজাহান ওমরের মনোনয়নপত্র বৈধ, বাতিল এমপি হারুনের