খালেদা কী করবেন, এখতিয়ার আদালতের: কাদের

“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার উদারতা, মানবিকতার কারণে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তাকে বাসায় থাকার অনুমতি দিয়েছেন। এর অর্থ এই নয় যে তার সাজা বাতিল হয়ে গেছে।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 March 2023, 10:22 AM
Updated : 10 March 2023, 10:22 AM

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্ত থাকা অবস্থায় রাজনীতি বা নির্বাচন করতেন পারবেন কিনা, তা আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “তিনি (খালেদা জিয়া) এখন যেখানে আছেন, সেটাই হচ্ছে আদালতের এখতিয়ার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার উদারতা, মানবিকতার কারণে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তাকে বাসায় থাকার অনুমতি দিয়েছেন। এর অর্থ এই নয় যে তার সাজা বাতিল হয়ে গেছে।

“এটা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা বলে এটা তার মহানুভবতা। শারীরিক কারণে, মানবিক কারণে তার (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রাখা হয়েছে। এখন তিনি ইলেকশন করবেন, কী রাজনীতি করবেন, সেটা এখনো আদালতের জাজমেন্টের ওপর নির্ভর করে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসিন হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়শনের সুবর্ণজয়ন্তী ও প্রথম পুর্নমিলনীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। সে সময়ই বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনীতি ও নির্বাচন করা নিয়ে তিনি কথা বলেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় খালেদা জিয়ার। সেদিনই কারাবন্দি হন তিনি। ওই বছরের ৩০ অক্টোবর উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে। এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি নেত্রীর আরও সাত বছরের সাজা হয়।

তাকে জামিনে মুক্ত করার সব চেষ্টাই বিফলে গেলে পরিবারের পক্ষ থেকে ‘মানবিক আবেদন নিয়ে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যান খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ শর্ত সাপেক্ষে সাজা স্থগিত করে সরকার নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয় খালেদা জিয়াকে। পরে সব মিলিয়ে ছয় দফা এর মেয়াদ বাড়ানো হয়।

মুক্তি পাওয়ার পর থেকে গত তিন বছরে খালেদা জিয়া কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যাননি। এমনকি বাসার পাশে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়েও তাকে দেখা যায়নি। রাজনীতি নিয়ে তার কোনো বক্তব্য বা দিক নির্দেশনা প্রকাশ্যে আসেনি। এমনকি জাতীয় দিবস বা উৎসব পার্বণেও কোনো বার্তা দেননি।

দণ্ড সাময়িক স্থগিত থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়া রাজনীতি বা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে বেশকিছু দিন ধরেই বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে কথার লড়াই চলছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এক আলোচনাসভায় বলেছিলেন, “খালেদা জিয়ার যখন রাজনীতি করার সময় আসবে, উনি রাজনীতি করবেন। সে কারাগারেই থাকুক, জেলে থাকুক আর যেখানেই থাকুক, তিনি অবশ্যই রাজনীতি করবেন।”

খালেদাকে সাময়িক মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে দুটি শর্ত দেওয়া হয়েছিল। এর একটি ছিল বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়া এবং দ্বিতীয়টি তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর ব্যাখ্যা ছিল, “তিনি অসুস্থ, তিনি রাজনীতি করতে পারবেন কি না, সেটি আমি বারবার বলেছি আপনারা দেখেন। স্বাভাবিকভাবে মানুষ মনে করে তিনি অসুস্থ তার রাজনীতি করার অবস্থা নেই৷ এটাই বাস্তবতা।”

শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে প্রসঙ্গটি ফের উঠে আসে।

‘আওয়ামী লীগ বিলাসী জীবনযাপনে রাজনীতি করে’- মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্যের জবাবে অনুষ্ঠানে কাদের বলেন, “আওয়ামী লীগ কোনো বিলাসী রাজনীতি করে না, পকেটের রাজনীতি করে বিএনপি, শেখ হাসিনার সরকার জনকল্যাণে রাজনীতি করে।

“বিএনপি যখন ক্ষমতার ছিল, সে সময় তারা যে জীবন-যাপন করেছে, এখনো তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন লন্ডনে বসে পলাতক অবস্থায় আয়েশি জীবনযাপন করছে। সেখানে তাদের আয়েশি জীবন-যাপনের কথা আওয়ামী লীগকে বলা শোভা পায় না।”

সেতুমন্ত্রী বলেন, “তারা (বিএনপি) নিজেদের পকেটের উন্নয়নের রাজনীতি করেন এবং শেখ হাসিনা দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের রাজনীতি করেন। কে কী বলল তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না। আমরা যা করছি মানুষের জন্য করছি। মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য করছি। যারা লুটপাট করেছে তাদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে বলে আজ তারা ক্ষমতায় নেই।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর নিয়মিত নির্বাচন না হওয়াকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতা বলে মনে করেন কাদের।

তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, নির্বাচন করার দায়িত্ব তাদের। এখানে আওয়ামী লীগের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। প্রতিবছরই নির্বাচন হওয়ার কথা। নিযমিত নির্বাচন করতে না পারাটা তাদের (বিশ্ববিদ্যালয়ের) ব্যর্থতা।”

অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন যে অরাজনৈতিক সংগঠন, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “সব জায়গায় রাজনীতি করতে চাই না। কিছু কিছু জায়গা রাজনীতি থেকে বাইরে রাখতে হয়। অ্যালামনাইয়ের চরিত্র অরাজনৈতিক হওয়া উচিত।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন আহমেদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভুঁইয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন-

Also Read: খালেদা জিয়ার রাজনীতি নিয়ে আওয়ামী লীগের এত দরদ কেন: ফখরুল

Also Read: রাজনীতি করতে চাইলে খালেদা জিয়াকে ‘শর্ত মানতে হবে’: কাদের

Also Read: খালেদার রাজনীতি: সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ টুকুর

Also Read: দণ্ডিত খালেদার রাজনীতি করার সুযোগ কোথায়: কাদের

Also Read: খালেদার রাজনীতি করা নিয়ে শর্ত নেই: আইনমন্ত্রী

Also Read: খালেদা জিয়ার চিকিৎসা: রাজনীতি বনাম মানবিকতা