দণ্ডিত খালেদার রাজনীতি করার সুযোগ কোথায়: কাদের

আইনমন্ত্রী বলছেন এক কথা, ওবায়দুল কাদের বলছেন আরেক; এনিয়ে নিশ্চুপ বিএনপি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2023, 12:30 PM
Updated : 23 Feb 2023, 12:30 PM

দণ্ডিত খালেদা জিয়া শর্তাধীনে মুক্ত থাকলেও তার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ রয়েছে কি না, তা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের মধ্য থেকে দুই রকম বক্তব্য আসছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো শর্ত নেই বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানালেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন ভিন্ন কথা।

দলীয় প্রধানের রাজনীতিতে ফেরা নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য এখনও আসেনি। তারা বরাবরই বলে আসছে, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ মামলায় তাদের নেত্রীকে সাজা দেওয়া হয়েছে।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কারাগারে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। পরে আরেক মামলায়ও তার সাজার রায় হয়।

কোভিড মহামারী শুরুর পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেয় খালেদা জিয়াকে।

তারপর থেকে তিনি গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের বাড়িতে থাকছেন। তাকে এই সময়ে হাসপাতালে যাওয়া ছাড়া রাজনৈতিক কোনো কার্যক্রমে দেখা যায়নি। দলের নেতারাও কালেভদ্রে পেয়েছেন তাদের নেত্রীর দেখা।

তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হতে পারবেন না, এমন কোনো শর্ত নেই বলে বৃহস্পতিবারই আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় জানান।

তিনি বলেন, “উনি (খালেদা জিয়া) ঢাকাস্থ নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন, দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। এর বাইরে কোনো শর্ত নাই।”

Also Read: খালেদার রাজনীতি করা নিয়ে শর্ত নেই: আইনমন্ত্রী

রাজনীতির বিষয়ে কোনো শর্ত না থাকলেও ৭৭ বছর বয়সী খালেদার শারীরিক অবস্থা রাজনীতি করার মতো নেই বলেও মনে করেন আনিসুল হক।

এদিনই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সভার পর দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে কি না?

জবাবে তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া, তিনি কি দণ্ডাদেশ থেকে মুক্তি পেয়েছেন? তিনি কি মুক্তি পেয়েছেন? যে টুকু পেয়েছেন, সেটা মানবিক কারণে। শেখ হাসিনার উদারতার জন্য পেয়েছেন। অসুস্থ মানুষকে মানবিক কারণে তার দণ্ডাদেশ থেকে মুক্ত নয়, স্থগিত করা হয়েছে।

“কী জন্য? তিনি অসুস্থ। অসুস্থ না হলে তিনি থাকতেন কোথায়? কারাগারে। তাহলে রাজনীতি করার সুযোগ কোথায়? দণ্ডিত ব্যক্তির রাজনীতি করার সুযোগ কোথায়? দণ্ডিত ব্যক্তি তো জেলে থাকবে।”

পাঁচ বছর আগে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তার ছেলে দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে। কয়েকটি মামলায় দণ্ড নিয়ে লন্ডনে থাকা তারেক এখনও সেই দায়িত্বেই রয়েছেন।

সে বিষয়টি দেখিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপিও বুঝতে পারছে যে খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, “দণ্ডিত ব্যক্তির ব্যাপারে তাদের সন্দেহ না থাকলে তারা ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে কেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছেন? নিশ্চয়ই ইনি ভ্যালিডেবল না, সে জন্য তাকে বাদ দিয়েছে।”

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “এই দেশে সন্ত্রাসের জন্মই দিয়েছে বিএনপি। যখন ক্ষমতায় ছিল, ক্ষমতায় থাকতেই তারা সন্ত্রাস করেছে। আজকে তাদের মুখে সন্ত্রাসের বয়ান আমাদের শুনতে হচ্ছে! শেখ হাসিনা বাংলাদেশে যেখানেই গেছে তারা আক্রমণ, হামলা করেছে।

“সন্ত্রাসের সঙ্গে বিএনপির নাম সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। সন্ত্রাসের অপর নাম হচ্ছে বিএনপি। বাংলাদেশে নষ্ট রাজনীতির ঠিকানা হচ্ছে বিএনপি। তারাই নষ্ট রাজনীতির হোতা।”

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির সক্রিয় হওয়ার প্রেক্ষাপটে কাদের বলেন, “আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব।”

আওয়ামী লীগের যৌথসভায় দলের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সামসুন্নাহার চাঁপা, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আওয়াল শামীম, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় সদস্য পারভীন জামান কল্পনা, শাহাবউদ্দিন ফরাজী, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন নিখিলসহ ঢাকা মহানগর উত্তর দক্ষিণ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কাদের।

সেখানে তিনি বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, “শহীদ মিনারে যারা রক্ত ঝরিয়েছে, যারা এদেশে আগুন সন্ত্রাসের জন্ম দিয়েছে, তারা আজ সন্ত্রাসের কথা বলে!

“যারা বেশি দুর্নীতিবাজ, তারাই বেশি নীতির কথা বলে। দুর্নীতিবাজদের মুখে গণতন্ত্র, বাইরে স্বৈরাচার। বিএনপির মুখে সন্ত্রাসের বুলি, ভূতের মুখে রাম নাম।”

শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ অনুষ্ঠানে গান, নাচ ও আবৃত্তি পরিবেশনা করে শিশু-কিশোররা। পরিষদের সভাপতি কে এম শহিদ উল্ল্যা, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফ্ফর হোসেন পল্টুও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।