রাজনীতি করতে চাইলে খালেদা জিয়াকে ‘শর্ত মানতে হবে’: কাদের

২০২০ সালের ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে মুক্তির পর থেকে বিএনপি নেত্রী রাজনীতি থেকে দূরে আছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Feb 2023, 02:04 PM
Updated : 20 Feb 2023, 02:04 PM

প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা স্থগিত হওয়ার পর সাময়িক মুক্তি পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে চাইলে তাকে দেওয়া ‘শর্ত’ মেনে চলতে হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের।

অবশ্য কী সেই ‘শর্ত’ সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক।

সোমবার বিকালে ঢাকায় অমর একুশে বইমেলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের স্টল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। এ সময় বিএনপি নেত্রীর নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা সাময়িক মুক্তি পাওয়ার পর গত প্রায় তিন বছর ধরে রাজনীতি থেকে দূরে থাকার প্রসঙ্গ আসে।

ওবায়দুল কাদেরের কাছে প্রশ্ন ছিল, খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন কি না।

জবাবে কাদের বলেন, “বেগম জিয়ার কারাদণ্ড আছে। এই অবস্থানটা তার নির্বাচন করার পক্ষে নয়। তিনি নির্বাচন করার জন্য যোগ্য না।’

২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার পক্ষে ফেনী-১ ও বগুড়া-৬ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়। তবে সাজার কারণে দুটোই বাতিল হয়ে যায়। উচ্চ আদালতে গিয়েও নিজের পক্ষে আদেশ আনতে পারেননি তিনি। ফলে ভোটে দাঁড়ানো হয়নি।

বিএনপি নেত্রীর রাজনীতিতে ‘ফেরার’ প্রসঙ্গে কাদের বলেন, “তিনি বিএনপির নেতা হিসেবে যদি রাজনীতি করতে চান, সেক্ষেত্রে যে শর্তে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেটি মেনে তাকে করতে হবে। নো ওয়ে।”

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০০৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় খালেদা জিয়ার। সেদিনই কারাবন্দি হন তিনি। বিএনপি এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। ওই বছরের ৩০ অক্টোবর উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে। তার আগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি নেত্রীর সাত বছরের সাজা হয়।

বিএনপি নেত্রীকে মুক্ত করতে দলটির নেতারা উচ্চ আদালতে যত চেষ্টা করেছেন, তার সবই বিফলে গেছে। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে ‘মানবিক আবেদন নিয়ে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যান খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। বিএনপি ওই উদ্যোগে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেনি।

খালেদার স্বজনদের আবেদনে প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক সাড়া দেন। ২০২০ সালের ২৪ মার্চ শর্ত সাপেক্ষে সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয় খালেদা জিয়াকে। পরের দিন তিনি মুক্তি পান।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠবারের মতো ছয় মাসের জন্য সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। ফলে আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত খালেদাকে কারাগারে যেতে হচ্ছে না।

খালেদা জিয়া থাকছেন গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের বাসভবন ফিরোজায়। পাশেই ৮৩ নম্বর সড়কে তার রাজনৈতিক কার্যালয়। কিন্তু এই প্রায় তিন বছরে তিনি একবারের জন্যও সেখানে যাননি। রাজনীতি নিয়ে কোনো বক্তব্য বা দিক নির্দেশনা প্রকাশ্যে আসেনি। এমনকি জাতীয় দিবস বা উৎসব পার্বণেও কোনো বার্তা দেননি।

রাজনীতি থেকে বিএনপি নেত্রী কেন দূরে, এ বিষয়টি নিয়েও কোনো পক্ষ কিছু বলছে না। সরকারের পক্ষ থেকে কেবল দুটি শর্তে মুক্তির কথা জানানো হয়েছে। এর একটি ছিল বাসায় চিকিৎসা নেওয়া এবং দ্বিতীয়টি তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।

একাধিকবার অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বিএনপি নেত্রী। তবে দেশের বাইরে যাওয়ার অনুমতি মেলেনি।

‘ভোটে না আসা ছাড়া উপায় নেই বিএনপির’

ওবায়দুল কাদের কথা বলেন ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া ভোটে না আসার’ বিষয়ে বিএনপির ঘোষণা নিয়েও। তিনি মনে করেন, বিএনপি এই অবস্থানে অটল থাকতে পারবে না।

“তারা (বিএনপি) নির্বাচনে আসুক, কারণ নির্বাচন ছাড়া এখন আর কোনো বিকল্প নেই। সময় ও নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তারা না এলে কিছু থেমে থাকবে না।”

বিএনপির সঙ্গে সংলাপের কোনো উদ্যোগ নেওয়ার কথা সরকার ভাবছে কি না, এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি আওয়ামী লীগ নেতা কাদের।  

তিনি বলেন, “দেশের রাষ্ট্রপতি যখন উদ্যোগ নেন, তারা তখন তা প্রত্যাখ্যান করে। এই নির্বাচন কমিশন অন্য নির্বাচন কমিশনের মত নয়। এই কমিশন নির্বাচিত হয়েছে সংসদে আইনের দ্বারা। নির্বাচন কমিশন করতে প্রধানমন্ত্রীর যে ক্ষমতা, সেটি তিনি আইনের ওপর ন্যস্ত করেছেন। আইনি প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন হয়েছে। বেগম জিয়া নির্বাচন কমিশনার বানিয়েছিলেন তার দলের লোক আজিজকে দিয়ে। দলের লোককে বানানোর জন্য এম এ হাসানকে দুই বছরের রিটার্নমেন্ট বাড়িয়েছিলেন।

‘চাপে তো বিএনপি’

সরকার চাপে আছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে আসা বক্তব্য নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানান ওবায়দুল কাদের।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “বিদেশিদের চাপ কেন আমাদের ওপর হবে? তারা আমাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে, আমাদের দেশের গণতন্ত্র আমরা চালাই। আমরা গণতন্ত্রের রীতিনীতি মানছি কি না, বিদেশি পর্যবেক্ষক আসবে। আমরা স্বাগত জানিয়েছি, তারা আমাদের নির্ববাচন পর্যবেক্ষণ করবে। চাপে তো আছে বিএনপি।

“তারা এক সময় একেকজন বিদেশিদের ওপর ভর করে। সকাল বেলায় উঠেই নালিশ করতে যায়। হাই কমিশনগুলোতে নালিশ করতে যায়। এজন্য মানুষ এখন বাংলাদেশ নালিশ পার্টি বলে বিএনপিকে।”

বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ না পেয়ে বিএনপি হতাশ হয়েছে মন্তব্য করে কাদের বলেন, "ডনাল্ড লু এসেছিলেন। বিএনপি ভেবেছিল, তাদের সঙ্গে বসবে। সেটা কী হল? এখন আমেরিকার প্রতিনিধির সঙ্গে অন্তরঙ্গ বৈঠকের সুযোগ না পাওয়ায়, নালিশের সুযোগ না পাওয়ায়, বিএনপি আজকে হতাশ। আমরা সংবিধান অনুযায়ী চলছি।”

গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগে দলটির পক্ষ থেকে আসা একটি ঘোষণার প্রসঙ্গও তোলেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “তারা তো বলেছিল ১০ ডিসেম্বরের পর খালেদা জিয়া দেশ চালাবেন, তারেক রহমান এসে হাল ধরবেন। তাদের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পছন্দ হয়নি, তার চলে গেছে গোলাপবাগের গরুর হাটে।

“তো আন্দোলনের দশা কী? আন্দোলন ওখানে গিয়ে গুরুতর জখম। সেই আন্দোলন এখন সেই অবস্থা থেকে খোঁড়াতে খোঁড়াতে পথ হারিয়ে দিশেহারা বিএনপি এখন পদযাত্রায়।”

‘প্রতিযোগিতা’

ডিসেম্বরের পর থেকে বিএনপি যেদিনই ‘পদযাত্রার’ ডাক দিয়েছে, সেদিনই আওয়ামী লীগ কেন ‘শান্তি সমাবেশ’ এর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে, সেই প্রশ্ন করা হয়েছিল ওবায়দুল কাদেরকে।  

দুই দল একই দিনে মাঠে নামলে সংঘাতের আশঙ্কার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “তাদের (বিএনপি) পদযাত্রাই হচ্ছে উসকানি। সিরাজগঞ্জের ১৮টি মোটর সাইকেলে আগুন দিয়েছে তারা। আগুন সন্ত্রাস বাংলাদেশের যে কোনো জায়গায় করতে পারে। এজন্য আমরা জনগণের জানমাল রক্ষায়…। যেহেতু সরকারে আছি, তাই জনগণের কাছে ওয়াদা অনুযায়ী আমরা দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগেরও দায়িত্ব আছে। আমরা তো তাদের পাল্টপাল্টি কোনো সমাবেশ দেইনি।

“আমরা সংঘাত চাই না, প্রতিযোগিতা চাই। রাজনীতি এবং নির্বাচনেও প্রতিযোগিতা চাই। অতীতে আন্দোলনের নামে তারা যা করেছে! কত মানুষ পুড়িয়েছে, গাড়ি ভাঙচুর করেছে, রেল লাইন রেল পুড়িয়েছে, বিদ্যুৎ স্টেশন পুড়িয়েছে, ভূমি অফিস পুড়িয়েছে, সিএনজি চালকও রেহাই পায়নি।

“চৌদ্দগ্রামে মধ্যরাতে নিরীহ যাত্রীদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে। তো এটা তো তারাই করে। আমরা ক্ষমতায় আছি, আমরা তো শান্তি চাইবই। দেশে বিশৃঙ্খলা হলে এটা তো আমাদেরই ক্ষতি। আমরা গায়ে পরে কেন বিশৃঙ্খলা ডেকে আনব?”

কাদের বলেন, “আমাদের কর্মসূচি শুধু শান্তি সমাবেশ না। আমাদের গণসংযোগ আছে, সদস্য সংগ্রহ অভিযান আছে। সম্মেলন আছে, যে সম্মেলন করতে বিএনপি ভুলেই গেছে। তারা ঘরেই গণতন্ত্রের চর্চা করে না, তারা দেশে গণতন্ত্র চায় না। তারা চায় একটা সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চোরাগলি দিয়ে অন্ধকারের ক্ষমতায় যেতে।”

ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।