খালেদার রাজনীতি: সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ টুকুর

“রাজনীতির পরিবেশ হলে অবশ্যই বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন,” বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2023, 05:32 PM
Updated : 23 Feb 2023, 05:32 PM

খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার সুযোগ রয়েছে কি না, সেই প্রশ্নে ক্ষমতাসীনরা বক্তব্য দিয়ে ‘জনমনে ধোঁয়াশা’ সৃষ্টি করতে চাইছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

তিনি বলেছেন, “ওরা (ক্ষমতাসীনরা) একেক সময় একেক রকম বক্তব্য দিচ্ছে। ওরা ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছে।

“প্রধানমন্ত্রী একবার বললেন যে, খালেদা জিয়া রাজনীতি করলে আবার জেলে পাঠিয়ে দেবেন। আবার এখন তারই আইনমন্ত্রী বলছেন, খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে মানা নেই। আমি কোনটাকে ধরব, আপনারাই (সাংবাদিক) বলেন।”

বৃহস্পতিবার ঢাকার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন টুকু।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কারাগারে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরে আরেক মামলায়ও তার সাজার রায় হয়। কোভিড মহামারী শুরুর পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেয় খালেদা জিয়াকে।

তারপর থেকে তিনি গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের বাড়িতে থাকছেন। তাকে এই সময়ে হাসপাতালে যাওয়া ছাড়া রাজনৈতিক কোনো কার্যক্রমে দেখা যায়নি। দলের নেতারাও কালেভদ্রে পেয়েছেন তাদের নেত্রীর দেখা।

তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হতে পারবেন না, এমন কোনো শর্ত নেই বলে বৃহস্পতিবারই আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় জানান। তিনি বলেন, “উনি (খালেদা জিয়া) ঢাকাস্থ নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন, দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। এর বাইরে কোনো শর্ত নাই।“

Also Read: খালেদার রাজনীতি করা নিয়ে শর্ত নেই: আইনমন্ত্রী

Also Read: দণ্ডিত খালেদার রাজনীতি করার সুযোগ কোথায়: কাদের

আইনমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে টুকু বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি করলে জেলে পাঠিয়ে দেব। উনাদের কোন কথায় কী মিনিং ধরব? ওরা কী বলে, ওরা জানেন। ওদের কথার অর্থ ওরা বোঝে, আমরা বুঝি না, জনগণে বোঝে না। বিএনপি এই বক্তব্য নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নয়।

“হঠাৎ করে বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন- এই কথাটা বলার আগে যেসব কথাবার্তা বলেছে ওরা (সরকার), সেগুলোকে এক করেন। এক করে বুঝবেন যে- ওরা কী মিন করছে। এটা নিয়ে আমরা খুব ইন্টারেস্টেড না। তবে আপনাদের উচিত, ওদের বক্তব্য সবগুলো মিলিয়ে ওরা কী মিন করে, সেটা বের করতে পারবেন।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “এটাকে আমি অবান্তর মনে করি। বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি করে, রাজনীতির মাঠ থেকে নেত্রী হয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নির্বাচন করে।

“যেখানে থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, সেখান থেকে নির্বাচিত হয়েছে। উনি জোর করে ক্ষমতায় থাকেন নাই, ক্ষমতায় থাকার চেষ্টাও করেন নাই। রাজনীতির পরিবেশ হলে অবশ্যই বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন।”

ব্রিফিংয়ের সময় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “ব্যাপারটা একেবারেই বিএনপির বিষয়। কিন্তু আমরা তো আন্দোলন করছি। সেই হিসেবে আন্দোলনের ফসলের উঠতি-পড়তি, সুখ-দুঃখে আমরা শেয়ার করতে পারি- এই বিবেচনা থেকে কথাটা আমি বলছি। আওয়ামী লীগ তো গত ১৪/১৫ বছর ধরে একটা জবরদখলকারী, মতলববাজ, মিথ্যুক দল হয়ে গেছে- তাদের নেত্রীসহ।

“এই যে, একটু আগে টুকু (ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু) বললেন, ‘উনি (শেখ হাসিনা) বললেন যে, তাকে (তারেক রহমান) ঠিক হতে বলো, তা নাহলে তার মাকে আবার জেলে পাঠিয়ে দেব’। যেহেতু এটা কোনো আইনি পদক্ষেপ নয়, এটা একটা এক্সকিউটিভ অর্ডার ছিল- তাকে রিলিজ করার। তার মানে তার হাতে সেটা আছে। খেয়াল করবেন, আবার জেলে পাঠিয়ে দেবার এখতিয়ার তার আছে এখন পর্যন্ত।”

জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, “আমি একটা গল্প বলতে পারি এই গল্প থেকে, সাংবাদিকরা বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। এক লোকের একটা গরু হারিয়েছে। বাড়িতে এসে বউরে বলতেছে, মা’রে এক গ্লাস পানি দে। বউ বলতেছে যে, তোমার মাথা খারাপ হইছে। তুমি বউরে মা ডাকতেছ। কয়- রইদ মাইখা চৈত্রে গরু হারাইলে এই রকম হয়। আপনারা যা বোঝার বুঝে নিয়েন।”

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম বলেন, “আসলে উনারা (সরকার) যেটা বলতেছে যে, নির্বাহী যে আদেশ করেছিলেন, সেই আদেশে বলা আছে যে, এই এই শর্ত ছিলো, এই এই শর্ত ছিল না। আজকে এসে বলছেন আরেক কথা।

“ওই এক্সিকিউটিভ অথরিটি তো উনাদের আছে। উনাকে মামলা থেকে রিলিজ করতে পারেন। হোয়াই নট? উনারা যদি বোঝেন যে, উনার রাজনীতি করার অধিকার আছে, সেই অধিকার তো জেলে থাকলেও থাকে। মানুষ জেলে থেকে নির্বাচন করতে পারে।”

‘শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্যের প্রতিবাদে’ কর্মসূচি

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “ক্যাম্পাসে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, শিক্ষা ব্যবস্থা যেভাবে ভেঙে পড়েছে এবং প্রত্যেকটা ক্যাম্পাসে আমাদের মেয়েরা টার্গেট হচ্ছে। ছাত্রলীগ যে অদম্যভাবে আমাদের মেয়েদের ওপর অত্যাচার করছে এতে আমরা উদ্বিগ্ন।

“এই নিয়ে আমরা ভবিষ্যতে কর্মসূচি দেব। এ বিষয়ে আমরা ছাত্র সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দুপুরে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা বৈঠকে বসেন।

এক ঘণ্টার বৈঠকে চলমান যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা খসড়া প্রণয়ন নিয়ে আলোচনা হয়।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম বলেন, “আমাদের যে যুগপৎ আন্দোলন চলেছে, এই আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা চূড়ান্ত করতে আমাদের মধ্যে আজ আলোচনা হয়েছে। আশা করছি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা এই যৌথ ঘোষণায় যেতে পারব।

“এটার (যৌথ ঘোষণা) পরে সত্যিকার অর্থে আমরা, বিএনপি এবং অপরাপর যে সমস্ত রাজনৈতিক দল আছে, যারা আসলে এই ঘোষণার সাথে একমত হয়ে আগামী আন্দোলন গড়ে তুলতে চায়, সেটা নিয়ে আমাদের মধ্যে আলাপ হয়েছে।”

বৈঠকে অন্যদের মধ্যে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।