বিএনপি থেকে ‘ভাগাইয়া নিয়া’ নির্বাচনের স্বপ্ন ভুলে যান: গয়েশ্বর

সরকারকে উদ্দেশ্য করে গয়েশ্বর বলেন, “বিএনপিকে ২০১৮ সালে নির্বাচনে নেওয়া যত সহজ হয়েছিল, এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপিকে নির্বাচনে নামানো অসম্ভব।“

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2023, 10:26 AM
Updated : 5 March 2023, 10:26 AM

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপিকে ভোটে আনা ‘অসম্ভব’ মন্তব্য করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, সে চেষ্টা করলে জটিলতা বাড়বে।

বিএনপি থেকে কাউকে ‘ভাগিয়ে নিয়ে’ ভোট করার চিন্তা থাকলে তাও পরিত্যাগের পরামর্শ দিয়েছেন সংসদ থেকে পদত্যাগ করে আন্দোলনে থাকা দলটির এ নেতা।

রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম’৭১ নামে একটি সংগঠনের মানববন্ধনে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন গয়েশ্বর।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং জ্যেষ্ঠ ‍যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সুপসহ কারাগারে আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি এবার ভোটে যাবে না বলে দলের অবস্থান আবারও তুলে ধরেন গয়েশ্বর। তিনি বলেন, “বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করার সামর্থ্য সরকারের নেই।”

এই দাবিতে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি পরেরবার ভোটে এলেও আবার ভোট বর্জন করে নির্বাচন ঠেকানোর হুঁশিয়ারি দিচ্ছে।

গয়েশ্বর বলেন, “বিএনপিকে ২০১৮ সালে নির্বাচনে নেওয়া যত সহজ হয়েছিল, এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপিকে নির্বাচনে নামানো অসম্ভব। এই অসম্ভব কাজটা আপনি সম্ভব করতে যাইয়েন না, তাতে জটিলতা বাড়বে।”

বিএনপি ভোটে না এলে দলটির অনেকেই নির্বাচনে অংশ নেবে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে বক্তব্য এসেছে, সেই প্রসঙ্গে গয়েশ্বর বলেন, “বিএনপি থেকে কাউকে ভাগাইয়া নেবেন ওটাই বোধহয় সম্ভব না। কারণ, যে নৌকার তলা ‘ফাটা’ আছে, সেই নৌকার তলায় কেউ উঠবে না ডুবে মরার জন্য।

“যে নদীতে পানি নাই সেই নদীতে মানুষ কিন্তু ঝাঁপ দেয় না। এখন মানুষ বলে আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় উঠতাম না।”

গয়েশ্বরের ভাষ্য, তাদের দলে ‘ভাঙন’ ধরানো সম্ভব নয়।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে দলের যে সাত সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছেন, তাদের মধ্যে উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে আবদুস সাত্তার উকিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে আবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার পাশে ছিল। ভোট শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসাও করেছেন বেশ কয়েকবার ধানের শীষ প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া উকিল সাত্তার।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ‘হতভম্ভ’ বিএনপি উকিল সাত্তারকে দল থেকে বহিষ্কারও করেছে। দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সরকার চাপ ও লোভ দেখিয়ে তাদের দলের সাবেক সংসদ সদস্যকে পক্ষে টেনেছে।

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে গয়েশ্বর বলেন, “আসলে তো মানুষ নৌকায় চড়ে নাই। ওই পুলিশকে দিয়া কয়টা ভোট যোগাড় করছেন। এবার সেই পুলিশ আপনার জন্য সেই ভোট যোগাড় করবে কি না সেটাও মস্তিষ্কে রাখেন।”

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কোনো দল ‘ভোটে দাঁড়াবে না’, ভোট হলেও কেন্দ্রে ‘ভোটার যাবে না’ বলে মনে করেন বিএনপির এ নেতা।

তিনি বলেন, “আর কেন্দ্রে যদি প্রচুর দালাল-টালাল যোগাড় করে থাকেন, জনগণের রোষানলের হাত থেকে সরকার সেই দালালদের পাহারা দিয়ে রাখতে পারবে কি না সেই ব্যাপারে কিন্তু শতভাগ সন্দেহ আছে।

“দুর্ভিক্ষ, দুঃশাসন আর ভোটচুরি, জনগণের অর্থ লুটপাটের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় থাকার বাসনা পরিত্যাগ করুন। যেনতেনভাবে প্রতিবেশী, বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে কানে কানে খুসখুস করাবেন আর বিভিন্ন ভয় দেখানো, মামলা এবং রিজভীদের (রুহুল কবির রিজভী) মত নেতাদের জেলে রাখবেন। আগামী দিনে অতীতের মত নির্বাচন করবেন-এই স্বপ্ন ভুলে যান।”

‘সময়মত’ পদত্যাগ করার পরামর্শ দিয়ে সরকারকে তিনি বলেন, “একটি নির্বাচনে যাতে মানুষ ভোট দিতে পারে, সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।”

আয়োজক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ঢালী আসাদুজ্জামান রিপনের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আহমেদ শাহিনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির আবদুস সালাম আজাদ, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, রফিক শিকদার, তাঁতী দলের কাজী মুনিরুজ্জামান মুনির, মতসজীবী দলের আবদুর রহিম, কৃষক দলের ভিপি ইব্রাহিম, জাহাঙ্গীর আলমও উপস্থিত ছিলেন।

পুরনো খবর-

Also Read: ভোটে যাব? ফখরুল জবাব পেলেন, ‘না’

Also Read: নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করুক বিএনপি, চান আওয়ামী লীগ নেতারা