ভোটে যাব? ফখরুল জবাব পেলেন, ‘না’

“আওয়ামী লীগ মনে করেছে যে তারা ওইভাবে নির্বাচন করে নিয়ে যাবে … মানুষ এটা হতে দেবে না।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2023, 01:41 PM
Updated : 4 March 2023, 01:41 PM

বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি ভোটে যাবে কি না- দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন প্রশ্নে ‘না’ বলেছেন নেতা-কর্মীরা। তাদের ‘মতামত পেয়ে’ পরে বিএনপি নেতা বলেন, ‘তামাশার’ নির্বাচন হতে দেবে না জনগণ।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপির ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার সারা দেশের থানায় থানায় ‘নীরব পদযাত্রা’ করে বিএনপি।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকালে উত্তরা পূর্ব থানার আউয়াল এভিনিউ সড়কে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন ফখরুল। এরপর হয় পদযাত্রা।

“এই সরকারের অধীনে কি আবার নির্বাচনে যাব?”- বক্তৃতার সময় নেতা-কর্মীদের কাছে জানতে চান ফখরুল। জবাবে চিৎকার করে সবাই বলেন, “না”।

ফখরুল বলেন, ‘‘মানুষ এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। সবার আগে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।

“তবেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সেই কমিশনের মাধ্যমেই জনগণের একটা পার্লামেন্ট, জনগণের একটা সরকার গঠন করতে হবে।”

‘‘আপনারা সবাই কি একমত?” ফের প্রশ্ন রাখেন বিএনপি নেতা।

“হ্যাঁ” ফের একসঙ্গে চিৎকার করে নিজেদের অবস্থান জানান কর্মীরা। 

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনে যায় বিএনপি ও তার জোট। ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে হয় ৫ জানুয়ারির ভোট। এর আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যান দেড়শরও বেশি সংসদ সদস্য।

২০১৮ সালের নির্বাচনও বর্জনের ঘোষণা ছিল বিএনপির। তবে ২০ দলীয় জোটের পাশাপাশি ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ নামে আরও একটি জোট গঠন করে ভোটে যায় তারা। দুই জোট মিলে আসন পায় কেবল ৮টি।

সেই নির্বাচনে ‘আগের রাতেই’ ভোট হয়েছে, এমন একটি অভিযোগ তুলে তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে ফিরেছে বিএনপি। জোট ভেঙে গিয়ে গড়ে তুলতে চাইছে ‘যুগপৎ আন্দোলন’।  

তবে সংবিধানের বাইরে যাবে না আওয়ামী লীগ। এমনকি বিএনপিকে ভোটে আনতে বাড়তি উদ্যোগ না নেওয়ার কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ফখরুল মনে করেন, আওয়ামী লীগ এবার ভোট করতে পারবে না।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ মনে করেছে যে, তারা এভাবে গত দুইটা নির্বাচন করেছে। এবারও ওইভাবে নির্বাচন করে নিয়ে যাবে। আবার সেইভাবে জনগণকে শোষণ করবে, জনগণের সম্পদ নিয়ে যাবে। মানুষ এটা হতে দেবে না। মানুষ রাস্তায় নেমেছে, আন্দোলনের পর আন্দোলন হচ্ছে।

“আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সেই আন্দোলনকে সামনে দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। এবার আমরা সেই তামাশার নির্বাচন হতে দেব না, এ দেশের মানুষ হতে দেবে না।”

‘শান্তিপূর্ণভাবে’ আন্দোলন চালিয়ে নিতে নেতা-কর্মীদেরকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের এই আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। আমাদের এই আন্দোলন জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন, আমাদের এই আন্দোলন কথা বলার যে অধিকার, সেই অধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন।”

আন্দোলনে বাধা দিলে প্রতিরোধের ঘোষণাও দেন ফখরুল।

১০ দফা দাবিসহ নানা দাবিতে আগামী ১১ মার্চ ঢাকাসহ মহানগর ও জেলায় মানববন্ধনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন তিনি।

‘কোন সংবিধানে নির্বাচন?’

সংবিধানের বাইরে না যাওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ যে কথা বলছে, তারও জবাব দেন ফখরুল। বলেন, “কোন সংবিধান? যে সংবিধান নিজের মতো করে কাটাছেঁড়া করে ছাপিয়ে নিয়েছ, যেখানে জনগণের কোনো অধিকার নাই, সেই সংবিধান?

“যেখানে মানুষ ভোট দিতে পারে না, ভোট দিতে যায় না। আপনাদের মনে আছে ২০১৪ সালে নির্বাচন হয়েছিল সেই নির্বাচন মানুষ ভোটের দিতে পারে নাই, মানুষ ভোট দিতে যায়নি। ভোট কেন্দ্রগুলোতে কুকুর-বিড়াল দেখা গেছে।”

সালাহউদ্দিনকে দেশে ফেরানোর দাবি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ‘গুম করে’ ভারতে ফেলে আসার অভিযোগও করেন বিএনপি নেতা। সেখানে কয়েক বছর বন্দি থাকার পর আইনি লড়াই চালিয়ে মুক্ত সালহ উদ্দিনকে দেশে নিয়ে আসার দাবিও জানান তিনি।

ফখরুল বলেন, “আমরা আজকে দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হোক।

“আমরা রিজভীসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে ‘মিথ্যা মামলা’ আছে তা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।”

ইউক্রেইন যুদ্ধ নয়, অর্থনৈতিক সংকট ‘দুর্নীতির কারণে’

অর্থনৈতিক সংকটের কারণ ইউক্রেইন যুদ্ধ নয় বলেও মনে করেন অর্থনীতির এক সময়ের শিক্ষক ফখরুল। তিনি বলেন, “তারা দেশ চালাতে ব্যর্থ হয়েছে, অর্থনীতি চালু রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।

“কথায় কথায় বলে বৈশ্বিক অবস্থার কারণে, ইউক্রেইন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। কখনও না। তাদের দুর্নীতির কারণে সমস্ত সমস্যা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে।”

বিদ্যুতের দাম টানা তিন মাস শতকরা ৫ শতাংশ করে বাড়ানোর সমালোচনাও করেন বিএনপি নেতা। তার মতে, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণেই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম।

তিনি বলেন, ‘‘তাদের জনগণের প্রতি জবাবদিহিতা নেই, দায়-দায়িত্ব নেই। পার্লামেন্ট একটা আছে … জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।”

প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ফলাফল ঘোষণা করেও তা সংশোধন করা ‘অদক্ষতার’ প্রমাণ বলেও মনে করেন ফখরুল।

উত্তরা পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি শাহ আলমের সভাপতিত্বে মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানও বক্তব্য রাখেন।

এদিন রাজধানীতে ৬২টিরও বেশি থানায় এই পদযাত্রা করে বিএনপি।

যাত্রাবাড়ীতে খন্দকার মোশাররফ হোসেন, শাহবাগে মির্জা আব্বাস, বংশালে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, পল্লবীতে আবদুল মঈন খান, গুলশানে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, শাহজাহানপুরে আলতাফ হোসেন চৌধুরী, পল্টনে আবদুস সালাম, কাফরুলে আবুল খায়ের ভুঁইয়া নেতৃত্ব দেন কর্মসূচির।

রূপনগরে হাবিবুর রহমান হাবিব, চকবাজারে ফরহাদ হালিম ডোনার, মোহাম্মদপুরে মামুন আহমেদ, ভাষানটেকে আবদুল হাই শিকদার, শ্যামপুরে আসাদুজ্জামান রিপন, তুরাগে জহির উদ্দিন স্বপন, রামপুরায় খায়রুল কবির খোকন, কদমতলীতে শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ধানমণ্ডিতে নাসিরউদ্দিন আহমেদ অসীমের নেতৃত্বে হয় কর্মসূচি।

এসব পদযাত্রায় বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরাও অংশ নেয়।

বিএনপির পাশাপাশি গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে, ১২ দলীয় জোট রাজধানীতে বিজয়নগরে পানির ট্যাংক থেকে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট বিজয় নগরে আল-রাজী কমপ্লেক্সের সামনে থেকে এবং সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট পুরানা পল্টনে মোড় থেকে পদযাত্রা করে।

এলডিপি রাজধানীর পান্থপথ, বাড্ডা ও যাত্রাবাড়ী থেকে তিনটি পদযাত্রা বের করে।