অতীতের নির্বাচনে দেখা গেছে, জোটের আসনে আওয়ামী লীগের নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে থাকলে জয় পরাজয়ে তার ভূমিকাই থাকে মুখ্য।
Published : 17 Dec 2023, 01:00 AM
বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মধ্যে ভোট জমিয়ে তুলতে আওয়ামী লীগের কৌশল এখন চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে নির্বাচনে থাকা জাতীয় পার্টি ও শরিক দলের প্রার্থীদের মাঝে।
তিন মেয়াদে বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতা হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তার মনোনীত প্রার্থীদের ভোট থেকে সরিয়ে দিতে পারবে একক সিদ্ধান্তে। তবে দলীয় প্রধানের ইঙ্গিতের পর ভোটের মাঠে নেমে যাওয়া আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সবাই সরতে রাজি হবেন কি না, তা নিয়ে আছে সংশয়। এমন প্রার্থীদের অনেকেই ভোটের মাঠে মাঝপথে সরে দাঁড়াতে চান না; বরং চাইছেন নৌকার প্রার্থীরা উঠে যাক, যাতে সুবিধাই হবে তাদের।
ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, আসন ভাগাভাগি নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনায় জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের জোটের শরিকদের নেতারা আসন ছাড়ের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়ার দাবিও তুলেছেন।
এ নিয়ে চারবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে বসলেও আসন সমঝোতার বিষয়টি জাতীয় পার্টির নেতারা সরাসরি স্বীকার করছেন না। আবার অস্বীকার করছেন এমনও না।
শনিবার রাতেও দল দুটির নেতারা চতুর্থবার বৈঠকে বসলেও কোনো ফলাফল আসেনি। রোববার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার আগেই এ নিয়ে ঘোষণা আসতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।
ভোটে শেষ পর্যন্ত সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কী হচ্ছে তা জানতে শনিবার দিনের বেলা সাংবাদিকদের একের পর এক প্রশ্নে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু শেষ পর্যন্ত বলেছেন, “দেখুন, আমার যে টেকনিক, যে কৌশল, সবগুলো কি সব আমরা প্রকাশ করব? এটা কি কেউ করে? কেউ করে না।
“লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেমের চিঠি লিখব, এটা কি বাপ মাকে বলা যায়? বলা যায় না। পরে যখন হয়ে যায়, তখন বলা যায়। যখন বিয়ে সাদি করি, তখন তো বলতে হয়।”
আওয়ামী লীগ নেতারা একাধিকবার বলছেন, জাতীয় পার্টি বা ১৪ দলের শরিক-যাকেই আসন ছাড় দেওয়া হোক না কেন, দলীয় প্রার্থী সরিয়ে নেওয়া হলেও স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়ানো দলের নেতাদের কাউকে বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে না।
শনিবার রাতে ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শরিক বা অন্য কারও আসনে আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতাদের উঠে যেতে বলব না। এমনকি আমাদের আসনেও না।”
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও এদিন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোটে থাকার পক্ষেই ইঙ্গিত দিয়ে কথা বলেছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতারাও বলছেন, তারা সরে যাওয়ার জন্য ভোটে দাঁড়াননি। একাধিক নেতা বলেছেন, নৌকার প্রার্থী সরে গেলে বরং তাদের জন্য সুবিধা হবে। কারণ, তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কাছে টানা তার জন্য আরও সহজ হবে। ফলে ভোটের মাঠে তিনি থাকবেন সুবিধাজনক অবস্থানে।
অতীতের নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটে থাকলে জোটের প্রার্থী সুবিধাজনক অবস্থায় থাকেন না।
২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগ তার শরিকদের যেসব আসনে ছাড় দিচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে সেনা শাসনের পথ ধরে দীর্ঘদিন দেশ শাসন করা জাতীয় পার্টির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতার নিজস্ব ভোট আছে নির্বাচনি আসনগুলোতে। তবে কিছু কিছু আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থনের জোরে পাস করেছেন তারা।
সবশেষ তিনটি নির্বাচনের দুটিতে জাতীয় পার্টি ছিল আওয়ামী লীগের শরিক। বিএনপির বর্জনের সময় ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে দলটিকে ৩৪টি আসনে ছাড় দেয় ক্ষমতাসীন দল। আর ২০০৮ ও ২০১৮ সালে জোট করে ভোট করে দল দুটি। এ তিনবারই বিএনপির ভরাডুবিতে স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের দল সংসদে বিরোধী বেঞ্চে জায়গা করে নিতে পারে।
এবারও আসন নিয়ে সমঝোতা করতে গত কয়েক দিনে দলদুটি চার দফা বৈঠকে বসলেও কোনো সমঝোতার খবর আসেনি। রোববার (১৭ ডিসেম্বর) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগে যে কারণে এ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।
সংবাদমাধ্যমকর্মীদের কাছে দুই দলের নেতারা সোজাসাপ্টা স্বীকার করতে চাইছেন না কিছুই।
সেসব বৈঠকে কী কী কথা হচ্ছে, তা নেতাদের বরাত দিয়ে ছাপা হচ্ছে সংবাদমাধ্যমে। তবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও বিশেষ দূত মাসরুর মওলা দাবি করছেন, বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে আসন সমঝোতা নেই।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা আসন নিয়ে যুদ্ধ করছি না। যুদ্ধ হচ্ছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে। যদি এটা থাকে, তাহলে আমরা নির্বাচন করব।”
কিন্তু আসন নিয়ে আলোচনার কথা তো বারবার আসছে-এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা তো মিডিয়া বলছে। আমরা বলছি না।”
আওয়ামী লীগ নেতারাও তো বলছেন-এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, “যদি তারা এটা বলে থাকেন, তাহলে তাদের ব্যর্থতা। তার মানে তারা আমাদের কেনার চেষ্টা করছেন।”
জোটের আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী, ফল কী হয়?
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ২০০১ সালে জাতীয় পার্টির হাফিজউদ্দিন আহমেদ প্রায় ৯০ হাজার ভোট পেয়ে জেতেন। ২০০৮ সালেও মহাজোটের মনোনয়ন পেয়ে জেতেন বড় ব্যবধানে। তবে দশম সংসদ নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলী আওয়ামী লীগের সমর্থনে তাকে হারিয়ে দেন।
২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ ও তার শরিক এবং জাতীয় পার্টি মিলিয়ে আবার মহাজোট হওয়ার পর আসনটিতে জোটের মনোনয়ন আবার পান ইয়াসিন আলী। কিন্তু জাতীয় পার্টি আসনটি ছাড়তে রাজি হয়নি। লাঙ্গল নিয়ে লড়াইয়ে নামেন হাফিজউদ্দিন।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘প্রেমের চিঠি’ এখনই প্রকাশ নয়: চুন্নু
জাতীয় পার্টির ভাবনায় ‘বিএনপির ভোট’
ইয়াসিন আলীকে না মেনে স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়ে যান আওয়ামী লীগ নেতা ইমদাদুল হক। স্থানীয় আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ সমর্থন থাকে তার পক্ষে।
ভোটের ফলাফলে দেখ যায় স্বতন্ত্র ইমদাদুল ভোট পান ৮৪ হাজারের বেশি। নৌকা নিয়েও ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন পান প্রায় ৩৮ হাজার, লাঙ্গল নিয়ে হাফিজের বাক্সে পড়ে ২৭ হাজারের কিছু বেশি।
মহাজোটের শরিকদের ভোট ভাগাভাগির সুযোগে আসনটি পেয়ে যায় বিএনপি। তাদের প্রার্থী জাহিদুর রহমান ভোট পান ৮৯ হাজারের কিছু বেশি।
জাহিদুর গত ডিসেম্বরে বিএনপির সিদ্ধান্তে সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির হাফিজউদ্দিন জেতেন। এ ভোটে আওয়ামী লীগ ওয়ার্কার্স পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয়। তবে তিনি সুবিধা করতে পারেননি। দ্বিতীয় হন স্বতন্ত্র লড়াই করা এক আওয়ামী লীগ নেতা।
ইমদাদুল এবার নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে আলোচনা আছে আওয়ামী লীগ যদি শেষমেশ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়, তাহলে ক্ষমতাসীন দলের কিছু করার নেই। সেখানে দলের কোনো নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি।
নৌকার বসে যাওয়ার অপেক্ষায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা
ঢাকা-৪ আসনে নবম সংসদ নির্বাচনে বড় জয় পান আওয়ামী লীগের সানজিদা খানম। তবে গত দুটি নির্বাচনে আসনটি জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে ছেড়ে দেয় ক্ষমতাসীন দল।
সানজিদাকে আওয়ামী লীগ আবার প্রার্থী করেছে। দলের মনোনয়ন না পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সহকারী একান্ত সচিব আওলাদ হোসেন সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি আত্মবিশ্বাসী। আমার কাছে যে কেউ হারবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে বলেছেন। আমি বলেছি, আমার তো মানসন্মান আছে। আমি প্রার্থী হলাম তার পরে আপনি বসিয়ে দেবেন, তাহলে আমি নির্বাচন করব না। পার্টির সিনিয়র নেতারা আমাকে বলেছেন-আপনি নির্বাচন করেন, আপনাকে কেউ বসিয়ে দেবে না।”
বাবলাকে সমর্থন দিয়ে সানজিদাকে আওয়ামী লীগ সরিয়ে দেবে, এমন একটি সম্ভাবনার অপেক্ষায় রয়েছেন আওলাদ নিজেও।
তিনি বলেন, “এখানে আমি পুরো এলাকা গুছিয়ে নিয়েছি। নৌকার প্রার্থী বসে গেলে আমার তো প্রতিদ্বন্দ্বীই থাকবে না। এই ক্ষেত্রে আমি ভীষণ খুশি হব। তখন তো আওয়ামী লীগের সবাই আমর পাশে থাকবে।”
ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমনের বক্তব্যও একই রকম।
এ আসনে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুছ ছাত্তার বিএনপির দ্বিগুণেরও বেশি ভোট পেয়ে জেতেন। কিন্তু গত দুটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আরেক নেতা ফখরুল ইমামকে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ।
ছাত্তারকে এবার মনোনয়ন দিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ। তবে দলের টিকেট না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উপজেলার চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন সুমন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং ঈশ্বরগঞ্জবাসী মনে করি ফখরুল ইমাম সংসদ সদস্য হয়ে এলাকায় উন্নয়ন করেননি, এলাকায় সময় দেননি। করোনার সময় আড়াই বছরে একবারও এলাকায় আসেননি। এখন এলাকার মানুষের চাপে, কর্মীদের চাপে প্রার্থী হয়েছি। ভোটের মাঠ ছাড়ার কারণ নেই।”
যদি আওয়ামী লীগ থেকে নির্দেশ আসে তাহলে কী করবেন-এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি সরব না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তো বলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চাপ নেই। আমি তো নেত্রীর নির্দেশেই চলছি।”
আওয়ামী লীগ যদি ফখরুল ইমামকে সমর্থন দিয়ে ছাত্তারকে ভোটের মাঠ থেকে সরিয়ে দেয়, তাহলে আপনি লড়াই করতে পারবেন?-এ প্রশ্নে সুমন বলেন, “তখন তো আমার জন্য আরও সুবিধা হবে।”
সেটি কেন-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “তখন আমি আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি আমার পেছনে পাব।”
এরশাদ সরকারের পতনের ১৯৯১ সালে এ আসনে জাতীয় পার্টির নেতা খুররম খান চৌধুরী জয় পান। তিনি পরে বিএনপিতে চলে যাওয়ার পর অংশগ্রহণমূলক তিনটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আর জয় পায়নি।
গৃহবিবাদ নিয়েই ভোটে জাতীয় পার্টি
চুন্নর সঙ্গে ‘খেলবেন’ নাসিরুল, রাজনীতির চিটা ‘উড়িয়ে দেবেন’ মাহী
আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত ‘বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান’ শরিকদের
১৯৯৬ সালে রওশন এরশাদ এ আসন থেকে এক হাজারের মতো ভোটে হেরেছিলেন। তবে ২০০১ সালে পাত্তাও পায়নি জাপা প্রার্থী।
ওই বছর সেখানে জয় পায় বিএনপি, দ্বিতীয় হয় আওয়ামী লীগ এবং তৃতীয় অবস্থানে ছিল নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়ানো এক নেতা। জামানত হারায় জাতীয় পার্টি।
২০০৮ সালে এ আসনে বিএনপির দ্বিগুণেরও বেশি ভোটে জয় পান নৌকার ছাত্তার। পরে সমঝোতার স্বার্থে ২০১৪ সালে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয় ফখরুল ইমামকে, যিনি ১৯৮৮ সালে একতরফা নির্বাচনে প্রথমবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।
‘বসার প্রশ্নই আসে না”
২০০৮ সালে মহাজোট করার পরও আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে যে কয় আসনে লড়াই হয়েছিল, সেগুলোর একটি ছিল নীলফামারী-৪। সেই লড়াইয়ে লাঙ্গলের প্রার্থী শওকত চৌধুরীকে ১৭ হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়ে দেন আওয়ামী লীগের মারুফ সাকলান।
তবে পরের দুটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। একাদশ সংসদ নির্বাচনে সেখানে সহজ জয় পান আদেলুর রহমান।
এ আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জাকির হোসেন বাবুল। তবে মনোনয়ন না পেয়ে সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুখছেদুল মুমিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।
মুখছেদুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি আওয়ামী লীগের প্রার্থী বা জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসাব না করেই নির্বাচনে নেমেছি। আমি আমার জনগণের ভালোবাসা দিয়েই জয়ী হয়ে আসব।”
রওশনের ‘সম্মানের আসন’ মুসাকে দিল জাতীয় পার্টি
প্রার্থীদের হলফনামা: প্রকৃত উদ্দেশ্য ‘পূরণ হচ্ছে না’
লাঙ্গল-নৌকার অঙ্ক মেলেনি তৃতীয় বৈঠকেও
ঢাকা-১৮ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করছে বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিব হাসানকে। ২০০৮ থেকে তিনটি জাতীয় নির্বাচনে এখানে জেতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। তার মৃত্যুর পর ২০২০ সালের উপনির্বাচনে জেতেন হাবিব।
জাতীয় পার্টি এখানে প্রার্থী করেছে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদেরকে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে, আসনটিতে ছাড় চাইছে সংসদের বিরোধী দলটি।
যদি হাবিবকে আওয়ামী লীগ বসিয়ে দেয়, তাহলে স্বতন্ত্র প্রার্থী খসরু চৌধুরীর জন্য সুবিধাজনক হতে পারে বলে দাবি তার। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক খসরু আশা করছেন দলের স্থানীয়দের সমর্থন তখন তার দিকেই থাকবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে আছে, আমি উনার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। সেখানে আসনটি জাতীয় পার্টির কাউকে দিলে আমি বসে পড়ব কেন। বসার প্রশ্নই আসে না।”
দল চাপ দিলে তখন কী করবেন, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে যেখানে দলীয় চাপ নেই, সেখানে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে নির্বাচন করব, দলীয় চাপ থাকবে কেন? আমার কাছে মনে হয় দলীয় কোনো চাপ সৃষ্টি হবে না।”
রওশনের আসনে কী হবে?
সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের ময়মনসিংহ-৪ আসনে এবার কী হবে সেদিকেও দৃষ্টি থাকছে অনেকের।
২০০৮ সালে ময়মনসিংহ-৪ আসনে লাঙ্গল নিয়ে রওশন এরশাদ পান ১ হাজার ৬০৮ ভোট। নৌকা নিয়ে জয় পাওয়া মতিউর রহমান পান ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫৮২ ভোট। পরের দুটি নির্বাচনে আসনটি রওশনকে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ।
এবার রওশন ভোটে আসবেন না জানানোর পর জাতীয় পার্টি প্রতীক দিয়েছে ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা সরকারকে।
আওয়ামী লীগ এখানে প্রার্থী করেছে প্রয়াত মতিউরের ছেলে মুহিত উর রহমান শান্তকে। দলটির জেলা কমিটির সহসভাপতি আমিনুল হক শামীম এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী।
শান্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই আসন নিয়ে আমার কাছে কোনো শঙ্কা নেই। রওশন এরশাদ নির্বাচন করছেন না। তিনি থাকলে হয়ত অন্য প্রশ্ন ছিল। কিন্তু জাতীয় পার্টি যাকে মনোনয়ন দিয়েছে, তিনি তো আমার চাচার সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হেরেছেন। তাকে কেন আওয়ামী লীগ ছাড় দেবে?”
জটিল সমীকরণ চুন্নুর আসনেও
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর কিশোরগঞ্জ-৩ আসনটি ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত ছিল কিশোরগঞ্জ-২।
জাতীয় পার্টির আমলে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে বিচারকের পদ থেকে চুন্নু সংসদ সদস্য হন সেই আসন থেকে। সেই দুটি নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আছে নানান প্রশ্নও।
আওয়ামী লীগ এবার প্রার্থী করেছে নাসিরুল ইসলাম খানকে, যিনি করিমগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে ভোটে এসেছেন। যাচাই বাছাইয়ে বাদ পড়ে যাওয়ার পর তিনি নির্বাচন কমিশনে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
নৌকার সঙ্গে পারবেন?-এ প্রশ্নে চুন্নু অবশ্য আত্মবিশ্বাসী। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “১৯৯৬ সালে আমি পাই ৫১ হাজার ভোট, নৌকা পায় ৫২ হাজার। ২০০১ সালে আমি পাই ৬১ হাজার, নৌকা পায় ৬২ হাজার, বিএনপির ওসমান ফারুক পান ৬৩ হাজার।
“ওই সময় আমার সংগঠন জোরদার ছিল না, কাজও করিনি। গত ১৫ বছরে আমি এলাকায় অনেক কাজ করেছি, সংগঠনও জোরদার হয়েছে। ত্রিমুখী নির্বাচনটা হলে খেলতে আমার ভালো লাগত। দ্বিমুখীটা ভালো লাগছে না। আমি এমন খেলোয়াড়, যে নির্বাচন তিনবার ফেইল করেছি, দুইবার একেবারে কাছাকাছি।”
তিনি বলেন, “আমি এমন এক প্রার্থী যে পাঁচবার জিতেছি, দুইবার অল্প ভোটে হেরেছি।”
এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন নাসিমুল হক নামে একজন। তিনি এক সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কাজ করতেন। যদি নাসিরুলকে শেষ পর্যন্ত সরিয়েও দেওয়া হয়, তাহলেও তিনি মাঠে থাকবেন।
প্রার্থিতা নিয়ে প্রার্থীদের কথামালা আর প্রার্থী হতে মানা নেই শীর্ষস্থানীয়দের এমন ইঙ্গিতের পরও ভোটে থাকার হিসাব নিকাশের অনেকটাই সুস্পষ্ট হবে রোববারের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পর।