জাসদ সভাপতি ইনু জানিয়েছেন, তারা আসন বাড়াতে অনুরোধ করেছেন, পাশাপাশি ছাড় দেওয়া আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তুলে নেওয়ার দাবি করেছেন।
Published : 14 Dec 2023, 10:11 PM
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিকদের আসন কমানোর যে সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ নিয়েছে, তা ‘বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান’ করার কথা জানিয়েছেন ১৪ দলের শরিক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে শরিকদেরকে ১৬টি আসনে ছাড় দেওয়া হলেও এবার তা কমিয়ে ৭ করা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় আসন বণ্টনের আলোচনায় থাকা ইনু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তারা আসন বাড়াতে বলেছেন। ছাড় দেওয়া আসনে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা যেন স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকেন, সেটিও নিশ্চিত করতে বলেছেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বসার দাবি জানিয়েছেন।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল জোটবদ্ধভাবেই নির্বাচন করে আসছে। তিনটি নির্বাচনের মধ্যে দুটিতে জাতীয় পার্টিও ছিল জোটে। বিএনপি-জামায়াতের বর্জনে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মহাজোটে না থাকলেও তাদের সঙ্গে আসন সমঝোতা হয়েছিল।
এবারও বিএনপি-জামায়াত ভোটে আসেনি। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের অঙ্কটা কী হয়, তা নিয়ে আছে নানা সমীকরণ। তবে ১৪ দল ও আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ নির্বাচন করবে, সেটি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগেই জানিয়ে দেওয়া হয় নির্বাচন কমিশনে।
গত ৪ ডিসেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলের শরিক দলের নেতাদের বৈঠক হয়। সেই বৈঠক থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। জানানো হয়, পরদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলন করে তালিকা প্রকাশ করবেন।
তবে কাদের সেদিন কোনো তালিকা প্রকাশ না করে জানান, ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে আসনের বিষয়ে সমঝোতার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
একাধিক বৈঠকে আসন নিয়ে সিদ্ধান্ত আসতে না পারার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে আমু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে চৌদ্দ দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে আমরা বসেছিলাম। সেখানে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। জাসদকে ৩টি, ওয়ার্কার্স পার্টিকে ৩টি এবং জাতীয় পার্টিকে (জেপি) একটি আসন ছেড়েছি আমরা।"
তবে কোন আসন কাকে দেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে কিছু জানাননি আওয়ামী লীগ নেতা।
পরে ইনু জানান, তাকে কুষ্টিয়া-২, রেজাউল করিম তানসেনকে বগুড়া-৪ এবং মোশাররফ হোসেনকে লক্ষ্মীপুর-৪ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থাৎ জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার ফেনী-১ আসনে এবার ছাড় পাচ্ছেন না।
ইনুর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে বরিশাল-৩, বর্তমান সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাকে রাজশাহী-২ এবং মুস্তফা লুৎফুল্লাহকে এবারও সাতক্ষীরা-১ আসন দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে দেওয়া হচ্ছে তার পিরোজপুর-২ আসন।
গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে মেননকে ঢাকা-৮ আসন দেওয়া হয়েছিল। এবার এই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমকে। ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা মনোনয়নপত্র জমা দেন বরিশাল-২ ও ৩ আসনে।
গত সংসদ নির্বাচনে দলটিকে বরিশাল ও সাতক্ষীরার একটি করে আসনের পাশাপাশি দেওয়া হয় বরিশাল-৩ ও ঠাকুরগাঁও-৩ আসন। তবে তারা সুবিধা করতে পারেনি। এবার আর সেগুলো তাদের দেওয়া হয়নি।
জাসদকে গতবার বগুড়া-৪, কুষ্টিয়া-২ এর পাশাপাশি দেওয়া হয় ফেনী-১ ও চট্টগ্রাম-৮।
তরীকত ফেডারেশনকে দেওয়া হয় লক্ষ্মীপুর-১ ও চট্টগ্রাম-২ আসন।
জেপিকে দেওয়া হয় পিরোজপুর-২ এর পাশাপাশি কুড়িগ্রাম-৪।
বিকল্পধারা পায় মুন্সীগঞ্জ-১ ও লক্ষ্মীপুর-৪ আসন।
শরিকদের জন্য ধাক্কা
আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না ১৪ দলের শরিকরা।
জাসদ সভাপতি ইনু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমু ভাই প্রাথমিকভাবে সাতটি আসনের নাম প্রস্তাব করেছেন। আমরা ওনাকে বিনয়ের সঙ্গে আসন আরও বৃদ্ধির জন্য বলেছি এবং এটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে আমরা বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছি।”
তিনি বলেন, “আমরা বলেছি, প্রথমত. আসন সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। দ্বিতীয়ত. জোটের সব শরিকদের নিয়ে চাহিদা অনুযায়ী আসন বণ্টন করার জন্য বলেছি, তৃতীয়ত. আমাদেরকে যেসব আসনে ছাড় দেওয়া হবে সে আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এবং স্বতস্ত্র প্রার্থী উঠিয়ে নিতে হবে। চতুর্থত. মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহকারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার জন্য বৈঠক করতে হবে।”
তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানো কোনো আওয়ামী লীগ নেতা ভোটের ময়দান ছেড়ে যাবেন না, এ কথা দুদিন আগেই জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। সংবাদ সম্মেলন করেই তিনি বলেছেন, “আমাদের শরিকদের কারো কোনো আপত্তি থাকতে পারে, কিন্তু আমি পরিষ্কার বলে দিয়েছি, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা থাকবে।”
বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের এই ভোটে আওয়ামী লীগ আসনে আসনে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহী করেছে। দলটি মনে করে এতে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এবং ভোটাররা বেশি বেশি কেন্দ্রে যাবে।
জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপাতত সাতটি দেওয়া হয়েছে। কে কোন আসন পাবে, সেটাও এখনও চূড়ান্ত হয়নি।”
তাহলে আসন আরও বাড়তে পারে কি না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা চাই আরও বাড়ুক। আমরা সবাই তা বলেছি। আশা করছি তা বাড়বে।”
তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, “আজকে আমু ভাই যে ঘোষণাটি দিয়েছেন, সেটি আনুষ্ঠানিক না। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওনার প্রতি আমার আস্থা অতীতেও ছিল, এখনও আছে। আমি আশা করছি গতবারের মতো এবারও আসন পাব।”
গত দুটি নির্বাচনে তার জেতা আসনটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ারকে।
সেখানে প্রার্থী হয়েছেন নতুন নিবন্ধিত দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আলহাসানী আল মাইজভাণ্ডারীও।
নজিবুল বশর ও সাইফুদ্দীন সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। সেখানে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিনও প্রার্থী হয়েছেন। এই তিন জনই সুন্নি মতাদর্শী।
বিকল্পধারা গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে দুটি আসনে জয় পেয়েছিল। এবার তাদেরকে কোনো আসন দেওয়া হয়নি।
দলটির দুই জন সংসদ সদস্যের মধ্যে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের আবদুল মান্নানের মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তা অবৈধ ঘোষণা করেছেন। নির্বাচন কমিশনে আপিলেও তিনি প্রার্থিতা ফিরে পাননি।
মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে মাহী বি চৌধুরী গত নির্বাচনে নৌকা নিয়ে লড়াই করেছিলেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা এবার তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিলেন। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিলে তিনি প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
বিকল্পধারার বক্তব্য জানতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। একাধিকবার ফোন করা হলেও মাহী ও মান্নান তা রিসিভি করেননি।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী শরিক দলগুলোর মধ্যে এবার সাম্যবাদী দলের দীলিপ বড়ুয়া চট্টগ্রাম-১ এবং জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম ঢাকা-১৪ আসনে ছাড় দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। দৃশ্যত তাদের হতাশ হতে হয়েছে।
শহীদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকের বৈঠকে আমরা ছিলাম না। শুনেছি আমাদেরকে একটি আসন দেওয়া হয়েছে। আশা করি আসন বাড়বে। যদি বাড়ানো না হয়, তাহলে আমাদের তো নিজস্ব প্রতীক আছেই। সেই প্রতীকে নির্বাচন করব।”
আরও পড়ুন:
১৪ দল ও জাতীয় পার্টিকে ‘লড়াইয়ের বার্তা’ আওয়ামী লীগের
জোটের অঙ্কে ১৪ দল থেকে এবার কারা
জাতীয় পার্টিতে দ্বন্দ্ব: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে রওশনের ‘নালিশ’