“মাঠে আমাদের প্রতিযোগিতা হবে, উল্টা-পাল্টা কথা হবে। কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে আমরা এক থাকতে চাই, যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়,” বলেন তিনি।
Published : 14 Dec 2023, 06:32 PM
ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিযোগিতা হলেও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ক্ষমতাসীন দলটির সঙ্গে ‘কিছু বিষয়ে’ আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোটের বাইরে থাকা সংসদে বিরোধী দলের এই নেতা বলেছেন, “যেহেতু আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে বড় দল এবং তারা নির্বাচন করছে, আমরাও নির্বাচন করছি। এই দুটি দলের মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সেজন্য আমরা একটা রিলেশন ডেভেলপ করছি।
“মাঠে আমাদের প্রতিযোগিতা হবে, উল্টা-পাল্টা কথা হবে। কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে আমরা এক থাকতে চাই, যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, ভালো হয়। এটা তো নিশ্চই দোষের কিছু না।”
বৃহস্পতিবার ঢাকার বনানীতে দুপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।
চুন্নু বলেন, “৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দফায় দফায় বৈঠক চলবে। নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য আমরা দুটো দলই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমরা একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।
“আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী যদিও উভয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে। তবুও আমরা কিছু কিছু জাতীয় স্বার্থ যেমন- ভোটারদের আসা, ভোটাধিকার প্রয়োগ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয়ে যাতে কোনো ঘাটতি না থাকে, সে বিষয়ে আমরা দুই দলই মত বিনিময় করে যাচ্ছি এবং করে যাব ৭ তারিখ পর্যন্ত।”
‘কোনো দলের কাছে আসন চাই না’
২০০৮ সাল থেকেই ১৪ দল ও আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করে আসছে। তিনটি জাতীয় নির্বাচনের দুটিতে জোটের শরিক হিসেবে ছিল জাতীয় পার্টিও। তবে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের পর জাতীয় পার্টি জোটে ছিল না। এবারও বিএনপি ভোটে আসেনি, জাতীয় পর্টিকেও জোটে রাখা হয়নি।
২০১৪ সালে জোট না থাকলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল এমন ৩৪টি আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। সেসব আসনেই জয় পায় দলটি। একাদশে জোট করার পর তাদেরকে দেওয়া হয় ২৬টি আসন, এর মধ্যে তারা জয় পায় ২৩টিতে। এবার দলটিকে কোথাও ছাড় দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি আওয়ামী লীগ।
এবার কতটি আসন চেয়েছেন- সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, “আমরা আসন জনগণের কাছে চাই, কোনো দলের কাছে চাই না। আমরা আশা করছি আগামী নির্বাচনে আমরা ১৫১টা আসনের বেশি পাব। কাজেই কেন কোনো দলের কাছে আসন চাব।”
এবার সংসদীয় আসন ভাগাভাগিতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির অঙ্ক কী হবে, সেই আলোচনার সুরাহা হয়নি এখনও। দুই দলের নেতারা এ নিয়ে বৈঠকও করেছেন।
জাতীয় পার্টির ওপর আওয়ামী লীগের আস্থা কমেছে কি না, এমন প্রশ্নে মুজিবুল হক বলেন, “…গত পরশু আলোচনা হয়েছে দুই ঘণ্টা। এই সময়ে তাদের আচরণে আমরা সামান্যতমও বুঝি নাই যে, আমাদের ওপর তাদের আস্থার ঘাটতি আছে। বরং তাদের ব্যবহারে মনে হয়েছে আমাদের ওপর তাদের আস্থা আছে।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নির্বাচন করতে এসেছি নির্বাচন করব, পিছপা হওয়ার জন্য আসিনি। নির্বাচনে এসেছি জয়লাভ করার জন্য, মানুষের রায় নিয়ে সরকার ফর্ম করার জন্য। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যাতে বিরোধী দলে যায়, সেই চিন্তায় আমরা নির্বাচন করছি।”
জাতীয় পার্টিতে কর্তৃত্বের দ্বন্দ্বে নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়া রওশন এরশাদ তার অনুসারীদেরকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। জাতীয় পার্টিতে মনোনয়ন নিয়ে কী কী হয়েছে, তা নিয়ে তুলে ধরলেন ‘নালিশ’।
বিষয়টি নিয়ে এক প্রশ্নে মুজিবুল হক বলেন, “আমার পার্টির পক্ষ থেকে কারও সঙ্গে, কোনো দলের প্রধানকে গিয়ে কাউকে বাদ দিতে বলা হয়নি। যিনি এ ধরনের কথা বলছেন, আপনারা তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন। আর প্রধান পৃষ্ঠপোষকের সঙ্গে যারা গিয়েছেন, তারা দলের কেউ না। প্রধান পৃষ্ঠপোষক আমাদের মুরুব্বি, শ্রদ্ধার পাত্র। তবে দলের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে উনার কোনো ভূমিকা নেই।”
‘কোনো নির্বাচনই হান্ড্রেড পারসেন্ট সুষ্ঠু হয়নি’
‘এই সরকারের অধীনে যে নির্বাচন হচ্ছে’…সংবাদ সম্মেলনে এই কথা দিয়ে শুরু করে এমন প্রশ্ন করার সময় এক সাংবাদিককে থামিয়ে দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব।
জাতীয় পার্টি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এ কনসেপ্টে বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে না। এটা আপনাদের ভুল ধারণা। নির্বাচন হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যারাই নির্বাচনের কাজে যুক্ত, তারা সকলেই নির্বাচন কমিশনের আন্ডারে।”
সেক্ষেত্রে কী সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত হান্ড্রেড পার্সেন্ট সুষ্ঠু কোনো নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। অনেক আন্দোলনের পর ১৯৯৬ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যায়, বিএনপি বলে যে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। ২০০১ সালে আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হল। তখন বিএনপি ক্ষমতায় গেল, আওয়ামী লীগ বলল- সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। ’৯১ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন সাহেবের (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে) যে নির্বাচন হল, সেখানে সকল দলের প্রধানকে ভোট চাওয়ার জন্য টেলিভিশনে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এরশাদ সাহেবকে সে সুযোগ দেওয়া হয়নি।
“২০০৮ সালের ডিসেম্বরে যে নির্বাচন হয়, আমরা মহাজোট করি, বিপুল ভোটে পাস করি। তখন বিএনপি বলল কারচুপি হয়েছে। স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত একটি নির্বাচনও ‘প্রশ্নাতীত, সন্দেহের উর্ধ্বে হয়েছে এরকম কোন প্রমাণ নেই’। যার ফলে আমার নেতা হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ বলেছিলেন, বাংলাদেশের বর্তমান যে নির্বাচন পদ্ধতি, এতে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। একমাত্র নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন করে যদি আনুপাতিক হারে নির্বাচন করার ব্যবস্থা হয় তাহলেই সম্ভব।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর দাবিতে বিএনপি ও সমমনারা দীর্ঘদিন আন্দোলন চালিয়ে আসছে। তবে জাতীয় পার্টি এ ব্যবস্থা বা ধারণাকে ‘বিশ্বাসই করে না’ বলে মন্তব্য করেন মুজিবুল হক চুন্নু।