আগের বারের মোট ১৬ আসনে ছাড়ের বদলে এবার বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদকে তিনটি করে এবং জাতীয় পার্টি-জেপিকে দেওয়া হয়েছে একটি।
Published : 14 Dec 2023, 08:44 PM
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের আসন কমিয়েছে আওয়ামী লীগ।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে শরিকদেরকে ১৬টি আসনে ছাড় দেওয়া হলেও এবার তা কমিয়ে ৭ করা হয়েছে।
বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্ব থাকা বিকল্প ধারা ও তরীকত ফেডারেশনকে ছাড় দেয়নি ক্ষমতাসীন দল। মাজারভিত্তিক দল তরীকত এখনও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে চেয়ে থাকার কথা জানিয়েছে।
গত ৪ ডিসেম্বর থেকে দেন দরবার শুরুর হওয়ার দ্বাদশ দিন বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত জানানো হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।
সাতটি আসনের মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদকে তিনটি করে এবং জাতীয় পার্টি-জেপিকে দেওয়া হয়েছে একটি আসন।
বর্তমান সংসদে ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের তিনটি করে এবং জেপির একটি আসন রয়েছে।
তবে গত নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে জয় পাওয়া মেনন এবার বরিশালে নির্বাচন করবেন। তিনি বরিশাল-২ ও ৩ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।
চৌদ্দ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে চৌদ্দ দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে আমরা বসেছিলাম। সেখানে সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হয়েছে।”
তবে কোন কোন আসন শরিকদের দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানাননি তিনি।
পরে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তাকে কুষ্টিয়া-২, রেজাউল করিম তানসেনকে বগুড়া-৪ এবং মোশাররফ হোসেনকে লক্ষ্মীপুর-৪ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থাৎ জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার ফেনী-১ আসনে এবার ছাড় পাচ্ছেন না।
ইনুর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে বরিশাল-৩, বর্তমান সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাকে রাজশাহী-২ এবং মুস্তফা লুৎফুল্লাহকে এবারও সাতক্ষীরা-১ আসন দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে দেওয়া হচ্ছে তার পিরোজপুর-২ আসন।
গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে মেননকে ঢাকা-৮ আসন দেওয়া হয়েছিল। এবার এই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমকে। ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা মনোনয়নপত্র জমা দেন বরিশাল-২ ও ৩ আসনে।
গত সংসদ নির্বাচনে দলটিকে বরিশাল ও সাতক্ষীরার একটি করে আসনের পাশাপাশি দেওয়া হয় বরিশাল-৩ ও ঠাকুরগাঁও-৩ আসন। তবে তারা সুবিধা করতে পারেনি। এবার আর সেগুলো তাদের দেওয়া হয়নি।
জাসদকে গতবার বগুড়া-৪, কুষ্টিয়া-২ এর পাশাপাশি দেওয়া হয় ফেনী-১ ও চট্টগ্রাম-৮ আসন।
তরীকত ফেডারেশনকে দেওয়া হয় লক্ষ্মীপুর-১ ও চট্টগ্রাম-২ আসন।
জেপিকে দেওয়া হয় পিরোজপুর-২ এর পাশাপাশি কুড়িগ্রাম-৪।
বিকল্পধারা পায় মুন্সীগঞ্জ-১ ও লক্ষ্মীপুর-৪ আসন।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ১৬টি আসন থেকে কমিয়ে এবার সাতটিতে নামানোর বিষয়ে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপাতত সাতটি দেওয়া হয়েছে। কে কোন আসন পাবে, সেটাও এখনও চূড়ান্ত হয়নি।”
তাহলে আসন আরও বাড়তে পারে কি না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা চাই আরও বাড়ুক। আমরা সবাই তা বলেছি। আশা করছি তা বাড়বে।”
চট্টগ্রাম-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে আমু ভাই যে ঘোষণাটি দিয়েছেন, সেটি আনুষ্ঠানিক না। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওনার প্রতি আমার আস্থা অতীতেও ছিল, এখনও আছে। আমি আশা করছি গতবারের মতো এবারও আসন পাব।”
এই আসনটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ারকে।
সেখানে প্রার্থী হয়েছেন নতুন নিবন্ধিত দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আলহাসানী আল মাইজভাণ্ডারীও।
নজিবুল বশর ও সাইফুদ্দীন সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। সেখানে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিনও প্রার্থী হয়েছেন। এই তিন জনই সুন্নি মতাদর্শী।
বিকল্প ধারা গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে দুটি আসনে জয় পেয়েছিল। এবার তাদেরকে কোনো আসন দেওয়া হয়নি।
দলের দুই সংসদ সদস্যের মধ্যে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের আবদুল মান্নানের মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তা অবৈধ ঘোষণা করেছেন। নির্বাচন কমিশনে আপিলেও তিনি প্রার্থিতা ফিরে পাননি।
মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে মাহী বি চৌধুরী গত নির্বাচনে নৌকা নিয়ে লড়াই করেছিলেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা এবার তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিলেন। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিলে তিনি প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী শরিক দলগুলোর মধ্যে এবার সাম্যবাদী দলের দীলিপ বড়ুয়া চট্টগ্রাম-১ এবং জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম ঢাকা-১৪ আসনে ছাড় দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। দৃশ্যত তাদের হতাশ হতে হয়েছে।