একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেছেন, জাতীয় পার্টির বড় দাবি হল, যেসব আসন আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেবে, সেসব আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদেরও বসিয়ে দিতে হবে।
Published : 15 Dec 2023, 11:03 PM
জোটে না থাকা জাতীয় পার্টিকে নিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আসন ভাগাভাগির হিসাব কী হবে, তা স্পষ্ট হল না দুই দলের তৃতীয় দফা বৈঠকেও।
শুক্রবার রাতে রাজধানীর গুলশানের একটি বাসায় ওই বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে তাদের আরো বৈঠক হবে।
"অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক হয়েছে। আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আগামীকাল সন্ধ্যায় আমরা আবারও বৈঠকে বসব।”
নানক ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ছিলেন বৈঠকে। জাতীয় পার্টির পক্ষে ছিলেন দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা কোন পর্যায়ে পৌঁছাল, তা জানতে চাইলে স্পষ্ট কিছু বলতে চাননি নানক। আর জাতীয় পার্টির নেতারা ফোনই ধরেননি।
নানক বলেন, "দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবে এবং এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্র আরো শক্তিশালী হবে। বৈঠকে জাতীয় পার্টির সঙ্গে এ বিষয়েই আলোচনা হয়েছে।”
তবে আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, আসন ভাগাভাগি নিয়ে দুই দল ‘সমঝোতার কাছাকাছি’ পৌঁছেছে।
তার ভাষ্য, জাতীয় পার্টির এখন যে ২৩টি আসন আছে, সেখানে ছাড় দিতে রাজি আওয়ামী লীগ। তবে জাতীয় পার্টির বলছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাদের যে ২৬টি আসনে ছাড় দেওয়া হয়েছিল, তার সঙ্গে আরো একটি মিলিয়ে মোট ২৭টি আসন দিতে হবে তাদের।
তবে জটিলতা অন্য জায়গায়। জাতীয় পার্টির বড় দাবি হল, তাদের যেসব আসন আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেবে, সেসব আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদেরও বসিয়ে দিতে হবে। কিন্তু স্বতন্ত্র এই আওয়ামী লীগ নেতাদের বিষয়ে কঠোর হতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ।
২০০৮ সাল থেকেই ১৪ দল ও আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করে আসছে। তিনটি জাতীয় নির্বাচনের দুটিতে জোটের শরিক হিসেবে ছিল জাতীয় পার্টিও।
তবে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের পর জাতীয় পার্টি জোটে ছিল না। এবারও বিএনপি ভোটে আসেনি, জাতীয় পর্টিকেও জোটে রাখা হয়নি।
২০১৪ সালে জোট না থাকলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আছে- এমন ৩৪টি আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। সেসব আসনেই জয় পায় দলটি। একাদশে জোট করার পর তাদেরকে দেওয়া হয় ২৬টি আসন, এর মধ্যে তারা জয় পায় ২৩টিতে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবার কৌশল পাল্টেছে। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় কোনো আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যেন দশম সংসদ নির্বাচনের মত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় না পায়, সেজন্য দলের মনোনয়ন না পাওয়া প্রার্থীরা দাঁড়িয়ে গেছেন স্বতন্ত্র হিসেবে। তাদের বলা হচ্ছে ‘ডামি প্রার্থী’।
কেবল বিএনপি নয়, জাতীয় পার্টিও শেষে আবার ভোট বর্জন করে কি না, সে বিষয়টিও আওয়ামী লীগকে মাথায় রাখতে হচ্ছে। আবার শেষ পর্যন্ত সংসদে একটি বিরোধী দল যেন পাওয়া যায়, সেটাও আওয়ামী লীগকে ভাবতে হচ্ছে।
গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টি জিতেছে, এমন আসনগুলোতে এখন পর্যন্ত নৌকার আওয়ামী লীগের প্রার্থী আছে। তবে ১৪ দলের শরিকদের জন্য ৭টি আসন ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
১৪ দলের শরিকরা অবশ্য ওই সাত আসনে সন্তুষ্ট নন, তারা আরো আসন চান। জাতীয় পার্টির মত তাদেরও চাওয়া, ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদেরও যেন সরিয়ে নেওয়া হয়।
তবে আওয়ামী লীগ যে তা চাইছে না, সে কথা শুক্রবারও বলেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “আমাদের দলীয় প্রার্থীরাও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচন করবে না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, প্রতিযোগিতা হবে। স্বতন্ত্র নির্বাচনে জিতলে জিতবে। আমরা জোর করে কারও বিজয় ছিনিয়ে আনব না।
“আমরা কাউকে বিজয়ের গ্যারান্টি দিতে পারব না। আমি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আমারও বিজয়ের গ্যারান্টি নেই। আমাকেও চারজনের সঙ্গে লড়াই করতে হবে। যদি তাদের মধ্যে কেউ জিতে যায়, আমাদেরকে আমাকে মানতে হবে। এখানে হার-জিতের প্রশ্ন হবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।”
আরও পড়ুন:
‘সংশয়’ কাটিয়ে সমঝোতার পথে লাঙ্গল ও নৌকা?
বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্নে আমরা নেই, ভোটে আছি: চুন্নু
১৪ দল ও জাতীয় পার্টিকে ‘লড়াইয়ের বার্তা’ আওয়ামী লীগের
জাতীয় পার্টিতে দ্বন্দ্ব: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে রওশনের ‘নালিশ’
আসন ভাগাভাগি: এবার জাপার সঙ্গে বসছে আওয়ামী লীগ