“আসন ভাগাভাগির বিষয়টা আমরা নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হব,” বলছেন ইনু।
Published : 05 Dec 2023, 08:14 PM
বিএনপির বর্জনের মধ্যে সব কুল ঠিক রেখে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করতে ১৪ দলের শরিকদের পর এবার জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বুধবার এ বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু।
তিনি বলেছেন, “নির্বাচন জোটগতভাবে হবে, কাল জাতীয় পার্টির সাথে আলোচনা করবে আওয়ামী লীগ। জোটের আসন বিন্যাস ও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ১৪ দলের সমন্বয়ক আমুর ইস্কাটনের বাসায় মঙ্গলবার বিকালে বৈঠক করেন শরিক দলের কয়েকজন নেতা। বিকাল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত চলা এ বৈঠক শেষ করে জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠকের তারিখ জানান আমু।
আসন বিন্যাসের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কবে হবে, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টির সাথে কালকে আলাপ হবে, আলাপ হওয়ার পর একটা পর্যায়ে যেতে পারে। কিছু কনফ্লিক্ট হতে পারে, তা দেখতে হবে, জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ, ১৪ দল- কনফ্লিক্ট হয় কি না, সেটা দেখতে হবে।
“বিগত দিনে আমরা এক সঙ্গে নির্বাচন করেছি। নির্বাচন ও আন্দোলন এক সাথে করি। আমরা এখনও বলছি, আমাদের নির্বাচন এক সাথে হবে। আমাদের ১৪ দল জোটগতভাবে নির্বাচন করব। সেই সিদ্ধান্তে আমরা অটুট রয়েছি।”
১৪ দলের সমন্বয়ক আমু বলেন, “আসনের ব্যাপারে কোথায় কী করা যায়, কিভাবে আসন বিন্যাস করা যায়, যার যার মতো করে যদি বলে, সে ব্যাপারে আমরা আলোচনা করছি। সে আলোচনা করে আমরা নেত্রীকে জানাব।
“আজকে মেনন সাহেব, ইনু সাহেব এসেছেন, আলোচনা হয়েছে; আমি কালকে সেই বিষয়গুলো নেত্রীকে জানাব। আলাপ করার পর আমরা একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব।"
আসন নিয়ে এখন পর্যন্ত যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার সবই চূড়ান্ত নয় মন্তব্য করে ১৪ দলের মুখপাত্র আমু বলেন, “আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগেরও শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে। কার বিরুদ্ধে কে থাকবে, কার বিরুদ্ধে কে থাকবে না, কেউ প্রত্যাহার করবে, কে পথ আর করবে না, এগুলো দ্রুত আলোচনা করা হবে।"
এক প্রশ্নের জবাবে আমু বলেন, "এক সাথে সামাল দেওয়া, একসাথে যুদ্ধ করা, আমাদের ১৪ দল অনেক পরীক্ষিত। এটা শুধু আসন বিন্যাসের উপর নির্ভর করে না। আমরা একটি রাজনৈতিক আদর্শিক জোট। এটা ভাগাভাগির জোট না।
“২০০১ সাল থেকে আমরা যুদ্ধ করে আসছি। ২০০৬ সালে যুদ্ধ করেছি। কিন্তু আসন বিন্যাসে কে পেল, না পেল- এটা বড় কথা নয়। মোরা একটি আদর্শিক জোট হিসেবে কাজ করছি।"
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এ সদস্য বলেন, “গতকালকে আমাদের ১৪ দলের নেত্রী একটি সভা করেছেন। সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে ।”
সোমবার গণভবনে ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক হয়। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের ১৪ দলের শরিকদের কোন কোন আসনে ছাড় দেবে, সে সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে তিনি বলেন, “১৪ দলের সাথে আমাদের একটা সমঝোতা অবশ্যই হবে। এ ব্যাপারে আমু ভাই আমাদের সমন্বয়ক। বিষয়টি আজকালের মধ্যেই সমাধান হয়ে যাবে।”
বিকালে আমুর বাসায় বৈঠক করার পর জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, “শেখ হাসিনার সাথে বৈঠক এবং রাতের খাবারের মধ্য দিয়ে এই বার্তা পরিষ্কারভাবে দিয়েছেন যে, জোট আছে। জোট একসঙ্গে নির্বাচন করবে। আসন ভাগাভাগির বিষয়টা আমরা নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হব।
“যে কোনো লেনদেনে দর কষাকষি হবে, মন কষাকষি হবে। বন্ধুদের মধ্যে দরকষাকষি হয়, মন কষাকষি হয়; তাহলে শেষ বিচারে হাসিমুখে উঠে যাব। দিনের শেষে হাসিমুখে হাত ধরাধরি করে বেরিয়ে যাব।”
ইনু বলেন, “এখানে জোটের প্রার্থী আসবে, সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উঠে যাবে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে দলীয় কৌশল কী হবে, সেটা বিবেচনা করার জন্য আমরা জোট নেত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছি। আরো সময় আছে, আলোচনা করে দেখব। প্রার্থীরা নৌকা মার্কা নির্বাচন করবে।
“কেউ প্রত্যাহার করে নিলে আচরণবিধি ভঙ্গ হয় না, তা করার জন্য যার যার দল তার প্রার্থীকে অনুরোধ করতে পারে। সুতরাং এ ব্যাপারে আমি মনে করি না মনোমালিন্য কিছু হবে।”
২০০৮ সাল থেকেই ১৪ দল ও আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করে আসছে। তিনটি জাতীয় নির্বাচনের দুটিতে জোটের শরিক হিসেবে ছিল জাতীয় পার্টিও। তবে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের পর জাতীয় পার্টি জোটে ছিল না। এবারও বিএনপি ভোটে আসেনি, জাতীয় পর্টিকেও জোটে রাখা হয়নি।
২০১৪ সালে জোট না থাকলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আছে- এমন ৩৪টি আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। সেসব আসনেই জয় পায় দলটি। একাদশে জোট করার পর তাদেরকে দেওয়া হয় ২৬টি আসন, এর মধ্যে তারা জয় পায় ২৩টিতে। এবার দলটিকে কোথাও ছাড় দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি আওয়ামী লীগ।
গত নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদেরকে ১৬টি আসনে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ১৪টিতে প্রার্থীরা ভোট করে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায়, জাতীয় পার্টি (জেপি) দুইজন প্রার্থী তাদের দলীয় প্রতীক বাইসাইকেল নিয়ে ভোটে অংশ নেয়।