প্রথম দিন ৩০টি, দ্বিতীয় দিন ৩২টি দলের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমার কথা জানানো হয়েছিল। তৃতীয় দিনে ‘করণিক ভুলের’ কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
Published : 02 Dec 2023, 04:00 PM
বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের বর্জনের মুখে এবারের জাতীয় নির্বাচনে কতগুলো দল অংশ নিয়েছে, এ নিয়ে তিন দিনে তিন ধরনের তথ্য জানা গেল।
শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, এবার নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ভোটে এসেছে ২৯টি।
বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমার সময় শেষ হওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ৩০টি দলের পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তথ্য জানানো হয়।
তবে সেটা ছিল তাৎক্ষণিক হিসাব। পরদিন শুক্রবার সারা দেশ থেকে আসা তথ্য সমন্বয় করে অশোক দেবনাথ জানিয়েছিলেন ভোটে এসেছে ৩২টি দল।
দলের পাশাপাশি মনোনয়নপত্রের সংখ্যা নিয়েও একাধিক তথ্য এসেছে। বৃহস্পতিবার জানানো হয়, সারা দেশে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ২ হাজার ৪৪১টি। পরের দিন জানানো হয় প্রার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ৭১৩ জন। তৃতীয় দিনে এসে এই সংখ্যাটি আরও একটি কম বলে জানানো হয়।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব বলেন, “আমাদের কাছে যে তথ্য আছে এ পযন্ত ২৭১২ জনের প্রার্থী রয়েছে। আর ২৯টি অংশ রয়েছে।”
ইসির জনসংযোগ শাখার তথ্য অনুযায়ী, এবার ২৯ টি রাজনৈতিক দল থেকে প্রার্থী হচ্ছেন ১৯৬৫ জন আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ৭৪৭ জন।
দল ও প্রার্থীর সংখ্যায় গড়বড়ের ব্যাখ্যা দিয়ে অশোক দেবনাথ বলেন, “মাঠ পর্যায়ের পাঠানোর তথ্যে করণিক ত্রুটির কারণে সংখ্যা এদিক ওদিক হয়।
৭ জানুয়ারি ভোটের দিন রেখে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমার সময় শেষ হয় বৃহস্পতিবার বিকালে।
আওয়ামী লীগ ২৯৮টি আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মেহেরপুর-১, জামালপুর-৫, ময়মনসিংহ-৩, মানিকগঞ্জ-২ ও চট্টগ্রাম-৪, এই পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগের পরিচয়ে দুটি করে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে।
তাছাড়া ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের ২ জনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এরমধ্যে শাহজাহান ওমরকে নৌকা বরাদ্দের জন্য বলা হয়েছে। এই আসনে এর আগে মনোনয়ন পাওয়া বজলুল হক হারুন নৌকা চেয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
জাতীয় পার্টি এবার ২৮৮টি আসনে মনোনয়ন দেওয়ার কথা জানিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত ১৬টি আসনে দুজন করে প্রার্থিতা জমা দিয়েছেন। এই দলের পক্ষেও মনোনয়ন জমা পড়েছে ৩০৪টি।
তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রার্থী দিয়েছে জাকের পার্টি। তারা ২১৮টি আসনে মনোনয়ন দিতে সক্ষম হয়েছে।
নতুন নিবন্ধতি আলোচিত দল তৃণমূল বিএনপি তিনশ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিলেও শেষমেশ তারা অর্ধেক আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি। নতুন নিবন্ধিত বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট –বিএনএফ ৫৫ জন প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পেরেছে। প্রথম নির্বাচনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি একতারা মার্কায় ৮২ জন প্রার্থী দিতে পেরেছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবার মোট প্রার্থীর এক চতুর্থাংশই স্বতন্ত্র। আর প্রতি আসনে গড়ে প্রার্থী হয়েছেন ৯ জন।
বিএনপি ও সমমনাদের ভোট বর্জনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সংখ্যা সমান।
রাজনৈতিক দল থেকে যত প্রার্থী
· আওয়ামী লীগ (নৌকা): ৩০৪ জন
· জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল): ৩০৪ জন
· জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল): ২১৮ জন
· তৃণমূল বিএনপি (সোনালী আঁশ) : ১৫১ জন
· ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (আম): ১৪২ জন
· বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব): ১১৬ জন
· জাসদ (মশাল): ৯১ জন
· বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা): ৮২ জন
· বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (ছড়ি): ৭৪ জন
· বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট –বিএনএফ (টেলিভিশন): ৫৫ জন
· বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন –বিএনএম (নোঙ্গর): ৪৯ জন
· বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন (ফুলের মালা): ৪৭ জন
· ইসলামী ঐক্যজোট (মিনার): ৪৫ জন
· ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার): ৩৯ জন
· বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মোমবাতি): ৩৭ জন
· কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা): ৩৪ জন
· বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি (হাঁতুড়ি): ৩৩ জন
· গণফ্রন্ট (মাছ): ২৫ জন
· জাতীয় পার্টি-জেপি (বাই সাইকেল): ২০ জন
· বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (হাতঘড়ি): ১৮ জন
· বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ): ১৪ জন
· বিকল্প ধারা বাংলাদেশ (কুলা): ১৪ জন
· বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল): ১৩ জন
· গণতন্ত্রী পার্টি কবুতর): ১২ জন
· গণফোরাম (উদীয়মান সূয): ৯ জন
· বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (চাকা): ৬ জন
· বাংলাদেশ ন্যশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ (কুঁড়েঘর): ৬ জন
· বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল (হাত পাঞ্জা): ৫ জন
· বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (হারিকেন): ২ জন
মনোনয়নপত্রের সংখ্যায় ভুল যে কারণে
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এবার ভোট বর্জন করলেও আগের দিন নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এই দলটির পক্ষে মনোনয়নপত্র পড়ার কথা জানানো হয়েছিল।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামেও মনোনয়নপত্র জমা পড়ার কথা জানানো হয় আগের দিন।
তৃতীয় দিনে জানানো হয়েছে, মাঠ পর্যায় থেকে পাঠানো তথ্যে ভুলক্রমে তিনটি দলের নাম গণমাধ্যমে এসেছে।
প্রার্থীর সংখ্যায় গড়বড়ের বিষয়ে ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলমের বলেন, “২ হাজার ৭৪১টি মনোনয়নপত্র জমা হয়েছিল। তবে কয়েকটি আসনে একই ব্যক্তির একাধিক মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। পরবর্তীতে যাছাইয়ে মোট দাখিলকারী ২৭১২ জন নিশ্চিত হওয়া গেছে।”
অনিবন্ধিত দলের নামও মনোনয়ন
এই ২৯টি দলের বাইরে বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপ নামে একটি দলের হয়েও এবার মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন এই দলকে নিবন্ধন দেয়নি। এ কারণে তাদের নির্বাচন করার সুযোগ নেই।
চূড়ান্ত প্রার্থী আরও দুই সপ্তাহ পর
শুক্র থেকে শুরু হওয়া যাচাই বাছাই চলবে সোমবার পর্যন্ত এসব মনোনয়নপত্র যাচাইবাছাই চলবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল চলবে ৫ থেকে ৯ ডিসেম্বর। সেগুলো নির্বাচন কমিশনে নিষ্পত্তি হবে ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সেদিনই চূড়ান্ত হবে প্রার্থী।
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার আগে দলীয়ভাবে জানাতে হবে তাদের চূড়ান্ত প্রার্থী কারা। যেসব আসনে একাধিক মনোনয়ন এখন রয়েছে, সেখানে চূড়ান্ত প্রার্থী থাকবে, বাকিরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ পড়ে যাবেন।
আগের ১১ নির্বাচনে যত দল ও প্রার্থী
>> একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিন সহস্রাধিক প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র ছিল ৪৯৮টি এবং দলীয় মনোনয়নপত্র ছিল ২ হাজার ৫৬৭টি। যাচাই বাছাই শেষে প্রতীক বরাদ্দের পর একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিল ১ হাজার ৮৬১ জন। তাদের মধ্যে দলীয় প্রার্থী ১৭৩৩ জন; বাকি ১২৮ জন স্বতন্ত্র।
>> দশম সংসদ নির্বাচনে ১২টি দল অংশ নিয়েছিল। মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল ১ হাজার ১০৭টি, বাছাইয়ের পর টিকে ছিলেন ৮৭৭ জন। ১৫৩টি আসনে একজন প্রার্থী ছিল বলে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
>> দল নিবন্ধনের পদ্ধতি চালুর পর নবম সংসদ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল ২৮টি দল; প্রার্থী ছিলেন ১৫৬৭ জন।
>> নিবন্ধন চালু হওয়ার আগে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ৫৫টি দল অংশ নেয়, প্রার্থী ছিলেন ১৯৩৯ জন।
>> সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ৮১টি দল অংশ নেয়, ২৫৭২ জন প্রার্থী ছিলেন।
>> ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে ১৪৫০ জন প্রার্থী ছিলেন, দল ছিলেন ৪২টি।
>> পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ২৭৮৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, দল ছিলেন ৭৫টি।
>> চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে ৮টি দল অংশ নিয়েছিল, প্রার্থী ছিলেন ৯৭৭ জন।
>> তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫২৭ জন প্রার্থী ছিল, দল ছিলেন ২৮টি।
>> দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯টি দল অংশ নেয়, প্রার্থী ছিলেন ২১২৫ জন।
>> প্রথম সংসদ নির্বাচনে ১৪টি দল অংশ নেয়, ১০৯১ জন প্রার্থী ছিলেন।
আর পড়ুন-
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন: আসন প্রতি প্রার্থী গড়ে ৯ জন, এক চতুর্থাংশই স্বতন্ত্র
আশ্বাসে ভোটে শাহীনুর পাশা, ‘দূরদর্শিতার অভাবে’ তৃণমূলে
ছয় মাসের বেশি দায়িত্বে থাকা ওসিদের বদলি চায় ইসি
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন: আসন প্রতি প্রার্থী গড়ে ৯ জন, এক চতুর্থাংশই স্বতন্ত্র
নির্বাচনে এখন পর্যন্ত সাড়া ২৯টি দলের, ঢাকাতেই ২৩
স্বতন্ত্রের রেকর্ড: প্রতিদ্বন্দ্বিতার হাতিয়ার না শঙ্কার