তিনশ আসনে মনোনয়ন জমা পড়েছে ২৭১৩টি; তার মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ১৯৬৬ জন, বাকি ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র।
Published : 01 Dec 2023, 02:56 PM
বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশের ৩০০ আসনে মোট ২৭১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
তাদের মধ্যে ৩২ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ১৯৬৬ জন, বাকি ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
৭ জানুয়ারি ভোটের দিন রেখে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমার সময় শেষ হয় বৃহস্পতিবার বিকালে। সারা দেশ থেকে আসা তথ্য সমন্বয় করে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ শুক্রবার মনোনয়ন জমার পরিসংখ্যান সাংবাদিকদের জানান।
এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবার মোট প্রার্থীর এক চতুর্থাংশই স্বতন্ত্র। আর প্রতি আসনে গড়ে প্রার্থী হয়েছেন ৯ জন।
রাজনৈতিক দল থেকে যত প্রার্থী
জাতীয় পার্টি: ৩০৪ জন
আওয়ামী লীগ: ৩০৩ জন
তৃণমূল বিএনপি : ১৫১ জন
জাসদ: ৯১ জন
ইসলামী ঐক্যজোট: ৪৫ জন
জাকের পার্টি: ২১৮ জন
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ: ৩৯ জন
বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি: ৩৩ জন
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ: ৩৪ জন
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট: ৩৭ জন
গণফ্রন্ট: ২৫ জন
গণফোরাম: ৯ জন
জমিয়তে ইসলাম বাংলাদেশ: ১ জন
ন্যাশনাল পিপলস পার্টি: ১৪২ জন
বাংলাদেশ মুসলিম লীগ: ২ জন
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন: ১৩ জন
বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন: ৪৭ জন
জাতীয় পার্টি (জেপি): ২০ জন
বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল: ৬ জন
গণতন্ত্রী পার্টি: ১২ জন
বাংলাদেশ ন্যশনাল আওয়ামী পার্টি: ৬ জন
বিকল্প ধারা বাংলাদেশ: ১৪ জন
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল: ১ জন
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি: ১৩ জন
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি: ১৮ জন
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস: ১ জন
বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল): ৫ জন
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট: ৭৪ জন
বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ): ৫৫ জন
বাংলাদেশ কংগ্রেস: ১১৬ জন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম): ৪৯ জন
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি: ৮২ জন
স্বতন্ত্র প্রার্থী: ৭৪৭ জন
এবার কী
আওয়ামী লীগ প্রাথমিকভাবে ২৯৮টি আসনে দলের মনোনয়ন জমা দেয়। পরে ৫টি আসনে দুটি করে মনোনয়ন জমা পড়ে।
সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি মনোনয়ন জমা দেয় ২৮৬ টি আসনে। পরে ১৮টি আসনে দুটি করে দলীয় মনোনয়ন জমা দেয়।
শুক্র থেকে সোমবার পর্যন্ত এসব মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই চলবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল চলবে ৫ থেকে ৯ ডিসেম্বর। সেগুলো নির্বাচন কমিশনে নিষ্পত্তি হবে ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার আগে দলীয়ভাবে জানাতে হবে তাদের চূড়ান্ত প্রার্থী কারা। যেসব আসনে একাধিক মনোনয়ন এখন রয়েছে, সেখানে চূড়ান্ত প্রার্থী থাকবে, বাকিরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ পড়ে যাবেন।
এরপর ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হলে জানা যাবে, কারা থাকছেন ৭ জানুয়ারি ভোটের লড়াইয়ে।
২০১৪ সালের স্মৃতি
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি ও তার মিত্রদের বর্জনের ডাকের মধ্যে ২০১৪ সালে নির্বাচন হয়েছিল। এবারও তাই হচ্ছে।
ভোট বর্জনের পাশাপাশি তা প্রতিহতের চেষ্টায় হরতাল অবরোধ হয়েছে তখনও। সেসব কর্মসূচিতে ব্যাপক সহিংসতায় প্রাণ গেছে শতাধিক মানুষের। এবারও হরতাল অবরোধ চলছে টানা, তবে সহিংসতার মাত্রা কম।
দশম সংসদ নির্বাচনের অংশগ্রহণ প্রশ্নেও জাতীয় পার্টিতে ছিল নানা নাটকীয়তা, এবারও সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রেখে শেষ দিকে এসেছে ভোটে আসার ঘোষণা। তবে দলের মধ্যে বিভেদ কাটেনি। রওশন এরশাদ ও তার অনুসারী নেতারা নির্বাচন থেকে দূরে।
দশম সংসদ নির্বাচনের চিত্রটা ছিল উল্টো। রওশন ও তার অনুসারীরা ছিল ভোটে। জি এম কাদের ও এরশাদ অনুসারীদের অনেকেই ছিলেন ভোট থেকে দূরে।
দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল ১২টি দল, তবে এবার সেই সংখ্যা প্রায় তিনগুণ। নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ভোটে এসেছে ৩২টি। নিবন্ধিত এসব দলের সঙ্গে জোট করে আছে অনিবন্ধিত আরও বেশ কিছু দল।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপির সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাই ভোট থেকে দূরে ছিল। তবে এবার বিএনপির বেশ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য, নির্বাহী কমিটির নেতা এমনকি একজন ভাইস চেয়ারম্যান দল ছেড়ে আওয়ামী লীগে এসে ভোটে অংশ নিচ্ছেন।
দশম সংসদ নির্বাচনের তুলনায় এবার মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে প্রায় তিনগুণ। এর কারণ কেবল বেশি দলের অংশগ্রহণ নয়, আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিলেও নৌকার বিরুদ্ধে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র ভোট করতে বাধা না দেওয়ার নীতি নিয়েছে। এ কারণে আবার অবরোধ-হরতালের মধ্যেও আসনে আসনে নির্বাচনি আমেজ টের পাওয়া যাচ্ছে নানাভাবেই।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ঘোষণার দিন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বলেছেন, কোনো আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত দেখতে চান না তিনি। এমনটি হওয়ার চেষ্টা হলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। এরপর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া নেতারা উৎসাহের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
এমনকি তিনবারের সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকও নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার মানসে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
তবে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি যে এরকম থাকবে না, সে ইংগিতও এসেছে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো চেয়ারম্যান ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “কোন কোন আসনে কারা কারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে, আর তাদের মধ্যে আমাদের দলের কারা, সেই বিষয়গুলো জানতে হলে পুরো তালিকা পেতে হবে। আশা করি শুক্রবার দুপুরের মধ্যে পেয়ে যাব। তালিকা পাওয়ার পর আমরা এটা নিয়ে বসব, সেখানে আমাদের পরবর্তী পরিকল্পনা ঠিক করব।”
বিএনপি-জামায়াতের বর্জনের মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল মোট ১ হাজার ১০৭টি, বাছাইয়ের পর টিকে ছিলেন ৮৭৭ জন। সেবার ১৫৩টি আসনে একজন প্রার্থী ছিল বলে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যান।
শেষ পর্যন্ত প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৮৬১ জন। তাদের মধ্যে দলীয় ১ হাজার ৭৩৩ জন; বাকি ১২৮ জন ছিলেন স্বতন্ত্র।
২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী সংখ্যা এবারের চেয়ে কিছুটা বেশি ছিল। ওই বছর দলীয় মনোনয়নপত্র ছিল ২ হাজার ৫৬৭টি, স্বতন্ত্র মনোনয়ন ছিল ৪৯৮টি।
আরও পড়ুন