ঢাকার ২০টি আসনে ২৬৫টি মনোনয়নপত্র তোলা হয়েছে, সবশেষ তথ্য বলছে জমা দিয়েছেন ৩৯ জন প্রার্থী।
Published : 30 Nov 2023, 12:23 AM
আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বাকি এখন পর্যন্ত এক দিন; সময় বাড়ানো না হলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণার সুযোগ থাকবে আগ্রহী প্রার্থীদের জন্য।
এরপরই সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে পাল্লা দিতে স্বতন্ত্রদের মিছিল কতটা লম্বা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ২৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে সাড়া দিয়েছে। বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪৯টি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত ৩৯টি দল অংশ নেয়।
বিএনপি এবং সমমনা দল ও জোট এ ভোট বর্জন করে এক দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। বিবদমান এ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে তফসিল পুননির্ধারণ ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন বৃহস্পতিবার জানা যাবে সময় বাড়ছে কি না।
এরমধ্যেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। দলের মনোনীতদের বাইরে বিকল্প (ডামি) প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছে দলটি। এতে অনেকেই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
এখন পর্যন্ত সবগুলো আসনে ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা পর থেকে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন সেই তথ্য নির্বাচন কমিশন থেকে জানা যায়নি।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের পরই বোঝা যাবে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আগের চেয়ে বেশি-কম হচ্ছে কি না।
আন্দোলনে থাকা বিএনপি ও কিছু দলের ভোটে না আসার মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার হিড়িক চলছে। যে কারণে এবার আগের তুলনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী বাড়ার আভাস রয়েছে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে চূড়ান্তভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ১২৮ জন, দশম সংসদ নির্বাচনে ১০৪ এবং নবম সংসদ নির্বাচনে ১৫১ জন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিতে ২৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে দলগুলোর পক্ষ থেকে জোটভুক্ত হওয়ার বিষয়ে কিংবা দলের মনোনয়নকারীর নাম ও নমুনা স্বাক্ষর দিয়ে ইসিতে চিঠি দিয়েছে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার সময় শেষ হচ্ছে বৃহস্পতিবার। বাছাই ১-৪ ডিসেম্বর, প্রত্যাহারের শেষ সময় রয়েছে ১৭ ডিসেম্বর।
যেসব দল আসছে
আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি-জেপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ মুসলীম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ মুসলীম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ কংগ্রেস, তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপি।
এরইমধ্যে দু’তিনটি দল প্রার্থী হিসেবে একাধিক ব্যক্তির মনোনয়ন দেওয়ায় জটিলতাও দেখা দিয়েছে। এটি নিরসনে পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে কমিশনে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, “অন্তত ২৯টি দল কমিশনে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। কিন্তু মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় রিটার্নিং অফিসারের কাছেই প্রার্থী দলীয় মনোনয়নের কাগজ জমা দেবেন। ৩০ নভেম্বরে পূর্ণাঙ্গভাবে জানাতে পারব ক’টি দলের প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।”
ঢাকার ২০ আসন
জেলার ২০টি আসনে বুধবার পর্যন্ত মোট ২৬৫টি মনোনয়নপত্র বিতরণ করেছেন রিটার্নিং ও সহকারি রিটার্নিং অফিসাররা। অন্তত ২৩টি দলের প্রার্থী এসব আসনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এরমধ্যে ঢাকা-১৪ আসনে সর্বোচ্চ ৩২টি মনোনয়নপত্র কেনা হয়েছে।
এদিন পর্যন্ত রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ৩৯ জন প্রার্থী। জমা দেওয়া যাবে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
আগের নির্বাচনের চিত্র
সবশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনে আসনপ্রতি গড়ে ১০টি করে মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। এতে তিন সহস্রাধিক মনোনয়নপত্র জমা পড়ে; স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাঁচগুণ ছিল দলীয় প্রার্থী।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের সেই নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট ও কয়েকটি দলের দাবির পর (পুন:তফসিল করে) মনোনয়নপত্র জমার সময় ১৯ নভেম্বর থেকে বাড়িয়ে ২৮ নভেম্বর করা হয়। সেবার নিবন্ধিত ৩৯টি দলেই অংশ নেয়।
ওই বছর মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র ছিল ৪৯৮টি এবং দলীয় মনোনয়নপত্র ছিল ২ হাজার ৫৬৭টি। অনলাইনে মাত্র ৩৯টি মনোনয়নপত্র জমা হয়। বাকিগুলো সরাসরি রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দেন প্রার্থীরা।
>> যাচাই-বাছাই ও প্রত্যাহার শেষে প্রতীক বরাদ্দের পর একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিল ১ হাজার ৮৬১ জন। তাদের মধ্যে দলীয় প্রার্থী ১৭৩৩ জন; বাকি ১২৮ জন স্বতন্ত্র।
>> দশম সংসদ নির্বাচনে ১২টি দল অংশ নিয়েছিল। মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল ১ হাজার ১০৭টি, বাছাইয়ের পর টিকে ছিলেন ৮৭৭ জন। ১৫৩টি আসনে একজন প্রার্থী ছিল বলে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
>> দল নিবন্ধনের পদ্ধতি চালুর পর নবম সংসদ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল ২৮টি দল; প্রার্থী ছিলেন ১৫৬৭ জন।
>> নিবন্ধন চালু হওয়ার আগে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ৫৫টি দল অংশ নেয়, প্রার্থী ছিলেন ১৯৩৯ জন।
>> সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ৮১টি দল অংশ নেয়, ২৫৭২ জন প্রার্থী ছিলেন।
>> ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে ১৪৫০ জন প্রার্থী ছিলেন, দল ছিলেন ৪২টি।
>> পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ২৭৮৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, দল ছিলেন ৭৫টি।
>> চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে ৮টি দল অংশ নিয়েছিল, প্রার্থী ছিলেন ৯৭৭ জন।
>> তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫২৭ জন প্রার্থী ছিল, দল ছিলেন ২৮টি।
>> দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯টি দল অংশ নেয়, প্রার্থী ছিলেন ২১২৫ জন।
>> প্রথম সংসদ নির্বাচনে ১৪টি দল অংশ নেয়, ১০৯১ জন প্রার্থী ছিলেন।