আওয়ামী লীগ সোমবারের মধ্যে জমা দেবে।
Published : 24 Nov 2022, 11:27 PM
জাতীয় নির্বাচনের আগে কাউন্সিল নিয়ে অনেক দলের তোড়জোড় থাকলেও সব স্তরে নির্বাচিত কমিটি এবং এক তৃতীয়াংশ নারী প্রতিনিধিত্বের হালনাগাদ তথ্য দিতে পারেনি নিবন্ধিত অর্ধেকের বেশি রাজনৈতিক দল।
দল নিবন্ধনের হালনাগাদ তথ্য যেটিকে ‘নিবন্ধন শর্তাদি’ প্রতিপালনের তথ্য বলছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জমা দেয়নি এখনও। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমিশনে তথ্য পাঠানোর প্রক্রিয়া চালানোর কথা জানালেও বিএনপি ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়েছে।
আর সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নিবন্ধন শর্ত পূরণ করলেও কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব স্তরের কমিটিতে ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার লক্ষ্যমাত্রা প্রতিপালনে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় চেয়েছে।
নিবন্ধিত অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত ২২টির মত দলের জবাব পাওয়ার কথা জানিয়ে ইসির উপ সচিব আব্দুল হালিম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কয়েকটি দল সময় চেয়েছে।
নিবন্ধিত ৩৯ দলের কাছে ‘নিবন্ধন শর্তাদি’ প্রতিপালনের সবশেষ তথ্য চেয়ে গত অক্টোবরের মাঝামাঝিতে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। এরপর বেঁধে দেওয়া ‘৩০ কার্যদিবস’ এর সময় শেষ হচ্ছে আগামী সপ্তাহে।
নির্ধারিত সময় শেষের পথে জানিয়ে ইসি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, নিবন্ধিত দলগুলোর কাছে শর্ত প্রতিপালন বিষয়ে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কিছু তথ্য উপাত্ত পাঠাতে বলা হয়েছিল।
তিনি জানান, ইসি সচিবালয়ের প্রাপ্তি জারি শাখায় (ডেসপ্যাচ) আরও কোনো দলের তথ্য সম্বলিত চিঠিপত্র থাকতে পারে। আগামী সপ্তাহে সবগুলোর ফাইল একীভূত করে কমিশনে উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করা হবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, শর্ত পূরণ করে নিবন্ধন পাওয়া পরও দলীয় গঠনতন্ত্র মেনে সব পর্যায়ে কমিটি নির্বাচিত করা এবং নির্ধারিত সময়ে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব স্তরের কমিটিতে ৩৩% সদস্য পদ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার বিধানটি প্রতিপালন করতে হবে সংশ্লিষ্ট দলকে।
আরপিও এবং নিবন্ধন বিধিমালা অনুযায়ী সময়ে সময়ে কমিশন যেকোনো রাজনৈতিক দলের কাছে তথ্য চাইতে পারে। একাধিকক্রমে তিন বছর তথ্য পাঠাতে ব্যর্থ হলে নিবন্ধন বাতিলের এখতিয়ারও রয়েছে ইসির।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলগুলো তিন বছর পর পর দলীয় কাউন্সিলের কথা রয়েছে। কেন্দ্রীয় ও সব স্তরের কমিটি অনুমোদন হয় তাতে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগামী ২৪ ডিসেম্বরে ২২তম জাতীয় সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছে। সবশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর।
জাতীয় পার্টির কাউন্সিলকে ঘিরে চলছে ‘দ্বন্দ্ব’। সবশেষ দলটি কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করেছিল ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর।
বিএনপির কাউন্সিল নেই ছয় বছর ধরে। সবশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলটির জাতীয় কাউন্সিল হয়। গঠনতন্ত্র মেনে নির্ধারিত সময়ে কাউন্সিল করতে না পারার বিষয়ে ইসিকে অবহিত করেছে দলটি।
নির্বাচিত কমিটির কাজ শেষ করতে অন্য নিবন্ধিত দলগুলো কাউন্সিল করার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। ইতোমধ্যে সিপিবি, জেপিসহ কয়েকটি দল কমিটি ও অন্যান্য হালনাগাদ তথ্য কমিশনকে জানিয়েছে।
যেসব দলের তথ্য পৌঁছৈছে
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (বিটিএফ), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামী এক্যজোট (আইওজে), খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), মুক্তিজোট, গণফোরাম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি) ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) এর তথ্য জমা পড়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) ও বাংলাদেশ কংগ্রেস শর্তাদির তথ্য দিতে সময় চেয়েছে।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির অবস্থা
বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইসির চাওয়া তথ্যগুলো নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, “এ সংক্রান্ত তথ্য পাঠানোর এখনও সময় আছে। ৩০ কার্যদিবস শেষ হওয়ার আগেই আগামী রোববার-সোমবার চিঠির জবাব দেওয়া হবে। সব স্তরের কমিটিতে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্বের তথ্যও আগের মত রয়েছে।”
ইসি কর্মকর্তারা জানান, সবশেষ তথ্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নারী প্রতিনিধিত্ব প্রায় ২৬ শতাংশ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপিতে ২০ শতাংশের নিচে রয়েছে।
নিবন্ধন শর্তাদির তথ্য পাঠাতে বিএনপি আগেও সময় চেয়েছিল। এবারও ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান নিবন্ধন সংক্রান্ত দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা।
অপরদিকে এ বিষয়ে ইসিতে পাঠানো জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল চুন্নু স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, দলটি নিবন্ধন শর্ত যথাযথভাবে পালন করছে। কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব স্তরের কমিটিতে ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার লক্ষ্যমাত্রা পালন করা সম্ভব হয়নি।
“এ লক্ষ্যমাত্রা ২০২৫ সালের মধ্যে অর্জন করা সম্ভব হবে,” বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
যেসব তথ্য নেওয়া হচ্ছে
ইসি কর্মকর্তারা জানান, কাউন্সিলে নেতৃত্ব নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকসহ হালনাগাদ নির্বাচিত কমিটির তথ্য প্রয়োজন হয়। আরপিও মেনে গঠনতন্ত্রে নারী প্রতিনিধিত্ব রাখা, প্রার্থী মনোনয়ন ও ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ে অঙ্গ-সহযোগী না রাখার বিষয়ে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুসরণ করছে তার তথ্যও নেওয়া হচ্ছে।
দলের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের কাছে ১৩ অক্টোবর ইসির পাঠানো চিঠিতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) অনুচ্ছেদ ৯০ (খ) উল্লেখ করে নিবন্ধন শর্ত প্রতিপালন এবং নিবন্ধন বাতিল সংক্রান্ত বিধান তুলে ধরা হয়।
সরকারি ওয়েবসাইটে হালনাগাদ নেই সুনামগঞ্জ জেলার উপজেলা ও ইউনিয়ন তথ্য
দল নিবন্ধন: ইসির ‘নিরীক্ষায়’ ৩৯টি, ‘পরীক্ষায়’ ৪০টি দল
আওয়ামী লীগের সম্মেলন ২৪ ডিসেম্বর
দেখা দিলেন রওশন; চুন্নু বললেন, এই কাউন্সিল জাপার নয়
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এখন তারেক রহমান
দলগুলোর কাছে নাম চেয়েছে সার্চ কমিটি, সময় ৪ দিন
কমিটিতে ৩৩% নারী: প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিপাকে ইসলামী দলগুলো
৩৩% নারী: প্রতিশ্রুতিপূরণে সময় দেওয়ার পক্ষে আওয়ামী লীগ