দেখা দিলেন রওশন; চুন্নু বললেন, এই কাউন্সিল জাপার নয়

ভিডিও বার্তা দিয়ে কাউন্সিল ডাকার কারণ জানিয়ে রওশন বলেছেন, এ মাসেই দেশে ফিরছেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2022, 12:42 PM
Updated : 6 Oct 2022, 12:42 PM

জাতীয় পার্টির কাউন্সিল ডাকার পর তার প্রস্তুতির এক সংবাদ সম্মেলনে দেখা দিলেন চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে থাকা রওশন এরশাদ।

বৃহস্পতিবারের এই সভায় পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, জাতীয় পার্টি ‘ঠিকমতো পরিচালিত হচ্ছে না’ বলে তাকে জাতীয় কাউন্সিল ডাকতে হয়েছে।

দুপুরে ঢাকার বিজয় নগরের একটি হোটেলে এই সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশনের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ।

ভিডিও বার্তায় রওশন বলেন, বেশ কয়েকটি কারণে আগামী ২৬ নভেম্বর কাউন্সিল ডেকেছেন তিনি।

“বিশেষ করে কিছু কিছু লোক গত কাউন্সিলে আমাদের গঠনতন্ত্রকে পরিবর্তন করে দিয়েছে, যেখানে যার যত ক্ষমতা ছিল তা খর্ব করে দেওয়া হয়েছে। অনেক জায়গাতে সংশোধন করে নতুন করে গঠনতন্ত্রে আনা হয়েছে, এটা ঠিক হয় নাই।”

এই কাউন্সিল নিয়ে বৃহস্পতিবার রওশনের উল্টো বক্তব্য দিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

এদিন আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “জাতীয় পার্টির কোনো কাউন্সিল নেই, কেউ ডাকলেও এর সঙ্গে দলের সম্পর্ক নেই।

“কে বা কারা কাউন্সিল ডাকে সেটাও জানি না। জাতীয় পার্টির নামে আরও বহু দল আছে। তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না। আমাদের বর্তমান চেয়ারম্যান বা কো-চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে একটি লোকও কোথাও জানায়নি।”

রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির কাউন্সিল দিয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি জাতীয় পার্টির মহাসচিব, আমার জানা মতে কোনো কাউন্সিল নাই। কে কোন কাউন্সিল করলো, এটা নিয়ে আমার কোনো বক্তব্যও নাই, সম্পর্কও নাই।”

Also Read: রওশনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে, তিনি চাপে পড়েছেন: জি এম কাদের

অন্যদিকে সংবাদ সম্মেলনে প্রচার করা ভিডিও বার্তায় রওশন এরশাদ বলেন, “জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ সাহেবের মৃত্যুর পরে পার্টিটা অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে, এখন আমার মনে হয় পার্টিটা ঠিকমত পরিচালিত হচ্ছে না। সেজন্য পার্টিটাকে শক্তভাবে দাঁড় করাতে হবে।

“আমার নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে, তাদের সঙ্গে আমি কথা বলছি। যাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছি তাদের সঙ্গে আমি টেলিফোনে সব সময় যোগাযোগ করি এবং চিঠিপত্রের মারফতে যোগাযোগ করি।”

তিনি বলেন, “আমাদের দলের বেশিরভাগের লোকেরই বয়স হয়েছে, নতুন প্রজন্মকে অবশ্যই আনতে হবে। যারা সরকারি কর্মকর্তা আছেন, রিটায়ার্ড করেছেন তাদেরকেও আনতে হবে। বেসামরিক কর্মকর্তা আছেন তাদের আনতে হবে, তাদেরকে আনার জন্য সাদর আমন্ত্রণ জানাতে হবে, আহ্বান জানাতে হবে।”

আগামী কাউন্সিলে নেতাকর্মীদের সমর্থন নিয়েই আসছেন দাবি করে রওশন বলেন, “আগামী ইলেকশনে (কাউন্সিল) আমি অবশ্যই নেতাকর্মীদের ম্যান্ডেট নিচ্ছি। যারা জাতীয় পার্টির পতাকা তলে আসার জন্য ব্যস্ত, যারা পার্টি থেকে বহিষ্কার হয়ে গেছেন, যারা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে তারা সক্রিয় হচ্ছেন। এখন আবার জাতীয় পার্টি করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে।”

দীর্ঘদিন ধরে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে চিকিৎসাধীন রওশন এখন ‘অনেকটা সুস্থ’ আছেন বলেও ভিডিও বার্তায় জানান।

সংবাদ সম্মেলনে তার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ বলেন, ২০২২ দশম জাতীয় সম্মেলন ও বিভিন্ন সময় তার দেওয়া বক্তব্য নিয়ে গণমাধ্যমে নানা রকম সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই ‘কাঙ্ক্ষিত নয়’।

“এমনও কথা বলা হয়েছে যে, পল্লীবন্ধু (এরশাদ) পুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদসহ কিছু সংখ্যক ব্যক্তি বেগম রওশন এরশাদকে জিম্মি করে রেখেছেন। ম্যাডাম নাকি চাপে পড়ে সম্মেলন ডেকেছেন বা বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন।”

গোলাম মসীহ বলেন, “বলা হচ্ছে, ম্যাডাম নিজে তো কিছু বলছেন না। পার্টির অনেকে এখন প্রশ্ন তুলেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নানাভাবে বেগম রওশন এরশাদ ও পল্লীবন্ধুপুত্র সাদ এরশাদকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ট্রল করা হচ্ছে, পার্টি ও দলের বাইরে অনেক কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ও মন্তব্য করেছেন, যা সামাজিক ও রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। এর তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি এই সংবাদ সম্মেলন থেকে।”

‘দলের বিশৃঙ্খলাকারীদের অব্যাহতি’

জাতীয় পার্টি এখন কারও ‘দালালির রাজনীতি করে না’ দাবি করে নির্বাচন ভবনে চুন্নু বলেন, “দলের দুয়েকজন বিশৃঙ্খলা করেছিল, সেজন্য তাদেরকে আমরা অব্যাহতি দিয়েছি। সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগও তাদের দলের একজন সংসদ সদস্যকে অব্যাহতি দিয়েছে।

“তারাও কিন্তু দলের বিশৃঙ্খলার জন্য তাকে অব্যাহতি দিয়েছে। দলের সাংগঠনিক নিয়ম মেনেই আমরা তাদের অব্যাহতি দিয়েছি।”

তিনি বলেন, “বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী এখনও কেউ দল ছেড়ে যায়নি। কারণ জাতীয় পার্টি এখন কারও দালালি রাজনীতি করে না। জাতীয় পার্টি এখন নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।”

‘ইভিএম হলেও নির্বাচন করব’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত আছেন জানিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, “পার্লামেন্টে অবশ্যই যাব, জাতীয় পার্টি কখনোই নির্বাচন বর্জন করে নাই।

“দুর্দিনেও আমরা নির্বাচন করেছি, ১৯৯০ সালেও আমরা নির্বাচন করেছি। আমি বিশ্বাস করি, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে বিশ্বাস করে, আমি সেই লক্ষ্যেই আছি।”

তিনি বলেন, “আগামী জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই করবো, ইভিএম হলেও নির্বাচন করব। সারা বিশ্বে এখন ইভিএম এ নির্বাচন হচ্ছে। কাজেই আমাদের দেশে এটা হবে, এটা তো নতুন কথা নয়।”

ভিডিও বার্তায় এ মাসেই ব্যাংকক থেকে দেশে ফেরার কথা জানান রওশন।