রওশনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে, তিনি চাপে পড়েছেন: জি এম কাদের

কারা চাপ দিচ্ছে, তা স্পষ্ট করেননি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2022, 11:52 AM
Updated : 7 Sept 2022, 11:52 AM

রওশন এরশাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব ‘যোগাযোগ করেছে’ জানিয়ে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, তাদের মনে হয়েছে যে ‘চাপে পড়ে’ দলের কাউন্সিল ডেকেছেন তিনি।

জাতীয় পার্টিতে বিবাদ নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে বুধবার ঢাকার বনানীতে দলীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে একথা বলেন তিনি।

চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকা জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন চেয়ারম্যান কাদেরকে না জানিয়ে হঠাৎ কাউন্সিল ডাকলে তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা।

প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির কর্তৃত্ব নিয়ে ভাবি রওশনের সঙ্গে দেবর কাদেরের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠেছিল, পরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয় দুজনের।

তারপর কাদের দলের চেয়ারম্যান হন, আর রওশন হন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। তিন বছর পর গত ৩০ অগাস্ট আকস্মিকভাবে রওশনের নামে দলে কাউন্সিলর ডাকা হয়। এর পাল্টায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরাও রওশনকে বাদ দিয়ে কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করতে স্পিকারকে চিঠি দেন।

এই পাল্টাপাল্টি চলার মধ্যে বুধবার প্রথম সাংবাদিকদের সামনে এসে কাদের বলেন, “জাতীয় পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের মনে হয়েছে, তিনি কারও কথায় বা চাপে কাউন্সিল ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন।”

কারা চাপ দিচ্ছে- তাদের পরিচয় স্পষ্ট না করে তিনি বলেন, “অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে বাইরের কিছু মানুষ হয়ত বেগম রওশন এরশাদের নাম ব্যবহার করে ভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে।

“যারা জাতীয় পার্টির কেউ না, কেউ হয়ত ছিল অনেক আগে জাতীয় পার্টিতে, আবার সুর্নিদিষ্ট অভিযোগে কাউকে কাউকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তারা বেগম রওশন এরশাদকে অপব্যবহার করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে।”

Also Read: ঘরে বিবাদ, স্পিকারের দিকে তাকিয়ে জাপা

৮০ বছর বয়সী রওশন ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে গত বছর থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। ছয় মাস পর গত জুন মাসে দেশে ফিরে সংসদের বাজেট অধিবেশনে যোগ দিয়ে আবার ফিরে যান থাইল্যান্ডে।

রওশনের নামে কাউন্সিল ডেকে চিঠি পাঠানো তার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ এক দিন আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, চলতি মাসের শেষ নাগাদ দেশে ফিরতে পারেন রওশন। আর কাউন্সিলের সিদ্ধান্তও তিনি নিয়েছেন, যার ভিত্তিতে প্রস্তুতি চলছে।

রওশনের কাউন্সিল ডাকার এখতিয়ারই নেই বলে জাতীয় পার্টির নেতাদের দাবি। আর কাউন্সিলের প্রস্তুতিতে রওশন যে কমিটি করেছেন, তাতেও দলের পদধারী কোনো নেতার সম্পৃক্ততা নেই।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রওশন পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা বা না করা জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের এখতিয়ার।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জি এম কাদের বলেন, “বেগম রওশন এরশাদ আমাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন। আমার অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার সংবাদে তিনি বারবার ফোন করে খোঁজ খবর নিয়েছেন। তিনি বারবার বলেছেন, ‘আমি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হতে চাই না’। তিনি বারবার সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টি এখন ভালোভাবে চলছে’।”

রওশনকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে বাদ দেওয়ার যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, “অসুস্থতার কারণে দীর্ঘ প্রায় এক বছর বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে তিনি অবদান রাখতে পারছেন না। তাই পার্টির সংসদীয় দল জাতীয় পার্টির ঐক্য রক্ষা ও পার্টিকে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাঁচাতে বেগম রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা না রাখার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

“গেল এক বছরে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল অসুস্থ বিরোধীদলীয় নেতার কর্মকাণ্ড নিয়ে ভাবেনি। এখন জাতীয় পার্টির স্বার্থেই বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল তাদের সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে জাতীয় সংসদের স্পিকারকে জানিয়েছে। এখন বিধি অনুযায়ী স্পিকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।”

Also Read: জাতীয় পার্টির ‘কাউন্সিল’ ডেকে রওশনের চিঠি

জাতীয় পার্টিতে কোনো সংকট নেই দাবি করে জি এম কাদের বলেন, “কোনো ভাঙনের মুখে পড়বে না জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রতিপক্ষ হিসেবে জাতীয় পার্টিকে বারবার ক্ষতি করতে চেয়েছে। যারা পার্টি ছেড়ে গেছে তারা কেউ শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। এভাবে কেউ চলে গেলেও জাতীয় পার্টি দুর্বল হবে না।”

নির্বাচন কমিশন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা কাদের বলেন, “নির্বাচন কমিশন যেন সাজানো নির্বাচন করতে পাঁয়তারা চালাচ্ছে। সংলাপে প্রায় সকল রাজনৈতিক দল ইভিএমের বিরোধিতা করেছে, কিন্তু নির্বাচন কমিশন ইভিএমে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

“দেশের বেশির ভাগ মানুষ মনে করে, ইভিএম হচ্ছে কারচুপির মেশিন। আবার নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি বলছে, সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব নয়। তাই নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে, তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ আছে। মনে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে মাতামাতি করছে।”

নির্বাচনী জোট গঠনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, “নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে জোট গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তখনকার বাস্তবতা ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার কথা বিবেচনা করে জোট গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জাতীয় পার্টি।

“তবে, এখন আমরা ৩০০ আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। দলকে আরও শক্তিশালী করতে নিয়মিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি।”