জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ হঠাৎ করেই এক চিঠিতে দলের কাউন্সিল আহ্বানের কথা জানিয়েছেন।
যেখানে জাতীয় পার্টিতে চেয়ারম্যানের হাতেই সর্বময় ক্ষমতা, সেখানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দলের কাউন্সিল ডাকার এখতিয়ার তার রয়েছে কি না,তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
রওশন জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার আসনে রয়েছেন।
বুধবার রওশনের স্বাক্ষরে পাঠানো এক চিঠিতে আগামী ২৬ নভেম্বর কাউন্সিল আহ্বান করা হয়েছে বলে তার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।
কাউন্সিলের প্রস্তুতির জন্য দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ ছয়জন কো-চেয়ারম্যানকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করেছেন রওশন। প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন তিনি নিজেই।
অন্য যুগ্ম আহ্বায়করা হলেন, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, আবু হোসেন বাবলা, সালমা ইসলাম। কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে বিরোধী নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহকে।
রওশনের পদক্ষেপ নিয়ে কথা বলতে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে কল করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
রওশন নেতাকর্মীদের উদ্দেশে লেখা ওই চিঠিতে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, কাজী জাফর আহমেদ ও নাজিউর রহমান মঞ্জুর জাতীয় পার্টিতে যেসব নেতা-কর্মী চলে গিয়েছিলেন, তাদের ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
তার এ চিঠির প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের প্রেস সচিব খন্দকার দেলেয়ার জালালী এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ এমপি জাতীয় পার্টির যে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন, তা সম্পূর্ণ অবৈধ, অনৈতিক ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থি।
“গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটি গঠন ও কাউন্সিল ঘোষণার কোনো এখতিয়ার নেই জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষকের। কাউন্সিলে গঠিত একটি বৈধ কমিটি ভেঙে দেওয়ার কোনো ক্ষমতা জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ছাড়া আর কারও নেই।”
জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এবং সালমা ইসলাম কাউন্সিল ঘোষণার বিষয়ে ‘অবগত নন’ বলে দাবি করেছেন দেলোয়ার জালালী।
তিন বছর আগে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর দলে কর্তৃত্ব নিয়ে দেবর-ভাবি কাদের ও রওশনের বিরোধ দেখা দিয়েছিল, পরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে সমঝোতা হয়।
তাতে রওশনকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পাশাপাশি দলে প্রধান পৃষ্ঠপোষকের পদ দেওয়া হয়। আর কাদের দলের চেয়ারম্যানের পদ রাখার পাশাপাশি সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার আসন নেন।
৮০ বছর বয়সী রওশন গত কিছু দিন ধরেই অসুস্থ। ফুসফুসের জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) টানা ৮৪ দিন থাকার পর গত বছর থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন তিনি।
ছয় মাস পর গত জুন মাসে দেশে ফিরে সংসদের বাজেট অধিবেশনে যোগ দেন রওশন। ওই সময় রাজধানীর একটি হোটেলে মতবিনিময় সভা করে তিনি অভিযোগ করেন, অসুস্থতার সময়ে দলীয় নেতাদের কেউ তার খবর নেননি। আর এরশাদের মৃত্যুর পর দলটিও এলোমেলো হয়ে পড়েছে।
এরপর ৪ জুলাই আবার ব্যাংক যান রওশন।