ঢাকার চার পাশে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় গরমের অনুভূতি বেশি দাবি করে বিএনপি নেতা বলেন, “এটা একমাত্র লুটেরা গণবিরোধী থাকলেই এ রকম অবস্থা হয়।”
Published : 25 Apr 2024, 08:05 PM
উপকূলীয় এলাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে নারিকেল গাছে ফল না ধরার কথা জানতে পেরেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। দাবি করেছেন, নদীতে মাছও পাওয়া যাচ্ছে না এ কারণে।
তাপমাত্রার চেয়ে গরমের অনুভূতি বেশি থাকার পেছনে নদী ভরাটকে কারণ হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেছেন, “লুটেরা গণবিরোধী সরকার ক্ষমতায় থাকলে এমন হয়।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পথচারীদের মধ্যে পানি ও স্যালাইন বিতরণে অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা এসব কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির এই আয়োজনে রিজভী বলেন, “আমাদের দেশের বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদেরা বার বার সরকারকে বলেছেন, ‘কয়লা দিয়ে তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদন কইরেন না।’ কিন্তু ‘উন্নয়নের ফানুসের নামে’ টাকা লুটের মহাআয়োজন-মহাসমারোহ চলছে। তাই শেখ হাসিনা গণবিরোধী প্রজেক্টগুলো করতে একটুও দেরি করে না। উনি দুর্নীতির প্রজেক্টকে বাস্তবায়ন করার জন্যই এসব গণবিরোধী বিভিন্ন প্রকল্প নিয়েছেন।
“সমুদ্রে পাড়ে পটুয়াখালীর কলাপাড়া-কুয়াকাটা এলাকায় তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র করা হচ্ছে। আমি শুনেছি, পটুয়াখালীসহ বৃহত্তর বরিশালের উপকূলীয় অঞ্চলে নারিকেল গাছের আর নারিকেল ধরছে না। অথচ একসময় এসব এলাকায় নারিকেল রাস্তার ওপর পড়ে থাকত।
“তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কারণে এখন সেখানে গাছে নারিকেল হচ্ছে না, যা হচ্ছে তাও আবার শুকিয়ে যাচ্ছে, সেখানে নদীতেও মাছ থাকছে না।”
সুন্দরবনের কাছে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে সেখানকার জীব-বৈচিত্র্যের ‘চরম ক্ষতি হয়েছে’ দাবি করেন রিজভী।
গরমে সরকারের ‘দায়’
তীব্র গরমের অনুভূতির পেছনেও সরকারের দায় দেখতে পেয়েছেন বিএনপি নেতা। বলেছেন, “ঢাকায় গতকালের অফিশিয়াল টেম্পারেচার ছিল ৩৯ ডিগ্রি। কিন্তু তাপমাত্রা অনুভবে মনে হয়েছে ৪১ ডিগ্রি। এত তাপমাত্রা ঢাকায় আগে শোনা যায়নি।
“ঢাকার চারদিকে নদী, একদিকে বুড়িগঙ্গা, আরেকদিকে শীতলক্ষ্যা, একদিকে ধলেশ্বরী, আরেকদিকে তুরাগ নদী। নদীগুলো এখন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এটা একমাত্র লুটেরা গণবিরোধী থাকলেই এরকম অবস্থা হয়।”
ফরিদপুরে ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্টের ২ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন অভিযোগ করে রিজভী বলেন, “এগুলোর মধ্য দিয়েই (নদী ভরাট) তো টাকা আসে।
“সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ছোট ভাই ‘১৫ হাজার কোটি টাকা অর্জন করেছেন’, আজকের পত্রিকায় সংবাদ আছে, এই টাকা কোত্থেকে আসে তাদের?”
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, কানাডা, ইউরোপ, দুবাইয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বাড়ি-ঘর আছে দাবি করে বিএনপি নেতা বলেন, “সেকেন্ড হোম, ফার্স্ট হোম, লাস্ট হোম, ওদের হোমের আর শেষ নাই। কিন্তু আল্টিমেন্টলি যে আজিমপুরের হোমে (কবরস্থানে) যেতে হবে এটা আওয়ামী লীগের নেতারা ভুলে গেছেন বলেই আজকে তারা স্বর্গরাজ্যে বাস করছে।”
উপজেলাতেও ‘ডামি নির্বাচন’
বিএনপির বর্জনে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ঘোষণা না করে উন্মুক্ত করে দেওয়ার কৌশল নিয়েও কথা বলেন রিজভী। গত ৭ জানুয়ারি বিএনপির বর্জনে সংসদ নির্বাচনেও নৌকা মার্কার বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে নেতাদের বাধা দেয়নি ক্ষমতাসীন দল।
বিএনপি নেতা বলেন, “শেখ হাসিনা আরেকটা ‘ডামি প্রার্থী’ দিয়ে ‘ডামি উপজেলা নির্বাচন’ করছেন। আরে বাপরে বাপরে। এই নির্বাচনে কি ফুর্তি তাদের!”
এই নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের কারণে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই সুযোগ পাচ্ছেন না বলেও দাবি করেন তিনি। বলেন, “আওয়ামী লীগের এমপির শালা (শ্যালক), এমপির ছোট ভাই, এমপির স্ত্রী, এরা হচ্ছে ক্যান্ডিডেট।
“একজন মন্ত্রী আছেন নাটোরের সিংড়ায়। তার পরম আত্মীয়কে নির্বাচন করতে হবে। এজন্য তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে অপহরণ করেছে। যে গাড়ি দিয়ে অপহরণ করেছে সেই গাড়ি থেকে রিভলভার পড়ে গিয়েছে, পুলিশ সেই ব্যাপারে নিশ্চুপ।”
প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় ‘এমপি-রাজ’ তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “ডামি এমপির স্ত্রী, তার শালিকা, শ্যালক এদের দিয়ে সংসদীয় এলাকায় এমপি রাজ তৈরি করা হয়েছে।”
‘মানসিক ভারসাম্য হারালে এই কথা বলে’
বিএনপিকে মানসিকভাবে বাধা দিতে তাদের কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগও কর্মসূচি দেয় বলে আগের দিন ক্ষমতাসীন দলের নেতা ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যেরও প্রতিক্রিয়া দেন রিজভী।
তিনি বলেন, “বাহ! আসলে মানসিকভাবে ভারসাম্য যারা হারায়, তারাই এ রকম কথা বলতে পারে।
“এসব তো করে পাড়া-মহল্লার গুন্ডারা, একজন একটা কিছু করছে, সেখানে পাল্টা হামলা করে, কারো বাড়িতে যদি বিয়ের অনুষ্ঠান হয় সেখানে গিয়ে চাঁদা চায়। ওবায়দুল কাদের এখন ‘সন্ত্রাসীদের মন্ত্রী’ ‘গুন্ডাদের মন্ত্রী’। বিএনপির কর্মসূচি দিলে উনি পাল্টা কর্মসূচি দেন।”
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মীর সরাফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, ইশরাক হোসেন, আমিনুল হকও উপস্থিত ছিলেন।