বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এখন তারেক রহমান

দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ায় চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে বিএনপি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এখন তারেক রহমান; যদিও তিনিও নেই দেশে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2018, 01:33 PM
Updated : 8 Feb 2018, 06:31 PM

বৃহস্পতিবার ঢাকার আদালত জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছর কারাদণ্ডের রায় দেওয়ার পর তাকে বন্দি করা হয়। তাকে রাখা হয়েছে নাজিমউদ্দিন সড়কের পুরনো কারাগারে। 

দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলায় রায়ের প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিকালে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে অন্য নেতাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রায়ের প্রতিক্রিয়া জানানোর পর এক সাংবাদিক ফখরুলের কাছে প্রশ্ন রাখেন, এখন বিএনপি কীভাবে চলবে? খালেদা জিয়া কি দল পরিচালনায় কোনো নির্দেশনা দিয়ে গেছেন?

উত্তরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমাদের গঠনতন্ত্রের দল পরিচালনার সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে। সুতরাং সেই অনুযায়ী দল চলবে।

“এ নিয়ে আপনাদের (সাংবাদিক) মাথা ব্যথার কোনো কারণ নেই। দল তার নিজস্ব গতিতে চলবে।”

গঠনতন্ত্রে কী আছে- প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “গঠনতন্ত্র আপনি পড়ে নিন।”

বিএনপির গঠনতন্ত্রে ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বের পরিধি

বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দলের গঠনতন্ত্রে আছে, চেয়ারপারসন কেনো কারণে সাময়িকভাবে অনুপস্থিত থাকলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করিবেন। এটাই গঠনতন্ত্রের বিধান।”

বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৮ ধারায় রয়েছে, চেয়ারম্যানের সাময়িক অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান।

জাতীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্রে সংশোধন এনে তারেকের জন্য জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যানের পদটি সৃষ্টি করা হয়। তবে তিনি তার আগে থেকেই রয়েছেন বিদেশে; দুটি মামলায় দণ্ডিত তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, “যেহেতু সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দেশের বাইরে আছেন, তার সাথে আলাপ করেই স্থায়ী কমিটি কাজ করবে।”

খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর রাতে তারেক রহমানের একটি বিবৃতি নিয়ে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

হুলিয়া নিয়ে লন্ডনে থাকা তারেকের বক্তৃতা-বিবৃতি প্রচারে হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়া

জরুরি অবস্থার সময় খালেদা জিয়া বন্দি হওয়ার পর সংস্কারপন্থি বলে পরিচিত নেতারা এম সাইফুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছিলেন। পরে অবশ্য তারা হালে পানি পাননি।

এবার রায়ের আগে খালেদা জিয়া সেই ধরনের কোনো তৎপরতার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে যান।

খালেদার মামলায় রায়ের আগে সম্প্রতি বিএনপি গঠনতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। বিএনপি বিষয়টি ইসিকে জানালেও নিজেরা তা খোলসা করেনি।

তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেছেন, বিএনপি তাদের গঠনতন্ত্রে সপ্তম ধারাটি বাদ দিয়েছে।

এই ধারায় রয়েছে, দণ্ডিত ব্যক্তি  বিএনপির কোনো নেতা হতে পারবে না, সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন পাবে না, এমপি হতে পারবে না; কেউ যদি দুর্নীতিবাজ হয় তাহলে বিএনপির সদস্য হতে পারবে না।

ওবায়দুল কাদের বলছেন, খালেদা জিয়া দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছেন বলে আঁচ পেয়ে বিএনপি তড়িঘড়ি করে গঠনতন্ত্রে সংশোধন এনেছে।

বিএনপির ওয়েবসাইটে এখন দেওয়া গঠনতন্ত্রে ৭ ধারায় সদস্য পদ লাভের অযোগ্যতা হিসেবে লেখা আছে, ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ৮ (দালাল আইন) এ দণ্ডিত ব্যক্তি; দেউলিয়া; উন্মাদ; সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ ও কুখ্যাত হিসেবে পরিচিত ব্যক্তি।

‘সঙ্কট আরও ঘনীভূত হবে’

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে মতপার্থক্যের মধ্যে খালেদা জিয়ার এই সাজার রায় দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট আরও বাড়িয়ে তুলল বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার দলীয় নেত্রীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার আগে বৃহস্পতিবার আদালতের পথে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা অত্যন্ত ঘৃণার সঙ্গে এই রায়কে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা মনে করি, এই রায় দেশের যে বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট, তা আরও ঘনীভুত করবে এবং দেশের মানুয়ের এই বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা চলে যাবে।”

‘গণবিচ্ছিন্ন সরকার’ খালেদা জিয়াকে আসন্ন নির্বাচন থেকে দূরে রাখবার জন্য ‘ভুয়া ও  মিথ্যা নথি তৈরি করে’ এই সাজা দিয়েছে বলে দাবি করেন ফখরুল।

তিনি অবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবি করেন।

ফখরুল বলেন, “এই রায়কে কেন্দ্র করে সরকার গত তিন দিন ধরে এক যুদ্ধাবস্থা তৈরি করেছে। সরকারই গোটা পরিবেশকে অস্থিতিশীল করেছে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তারা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করেছে।

“সারা শহরে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা মোড়ে মোড়ে পাহারা বসিয়েছে। তারা পুলিশের সহযোগিতায় আক্রমণও করেছে দেশনেত্রীর বহরের উপর।”

খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি শাহাদাত হোসেনসহ সারাদেশে গ্রেপ্তার সাড়ে ৩ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে তাদের মুক্তির দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল আলম চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।