নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগের মধ্যে যে কোনো মুহূর্তে ভোট বাতিলের ক্ষমতা চাইছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এটিসহ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) বেশ সংস্কারের প্রস্তাব সরকারকে দিচ্ছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
তা সোমবার আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
আরপিও’র প্রস্তাবিত খসড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে যে কোনো পর্যায়ে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণিত হলে ভোট বাতিল, নির্বাচনী কাজে অবৈধভাবে বাধা ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার যোগসাজশ এবং পোলিং এজেন্টদের ভীতি প্রদর্শন বা বাধার ঘটনা দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা, দলের সব স্তরের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব রাখতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় দেওয়াসহ প্রায় এক ডজন ছোটে খাটো সংস্কারের সুপারিশ করা হচ্ছে।
আরপিও সংশোধনের এ সংক্রান্ত খসড়া প্রস্তাব রোববার কমিশন সভায় অনুমোদন হয়েছে। সরকার চাইলে আইন সংশোধন হতে পারে।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।
ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলসহ সব ধরনের অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করছে ইসি। ধারাবাহিকভাবে কমিশনে প্রাপ্ত কিছু সুপারিশের পাশাপাশি সংলাপ থেকে পাওয়া কিছু প্রস্তাবও ইসি গ্রহণ করেছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, আরপিওর ৭, ১২, ১৫, ২৫, ৩১, ৩৬, ৪৪, ৮৪, ৯০, ৯১ অনুচ্ছেদসহ বেশ কিছু ধারা-উপধারায় সংযোজন-বিয়োজন ও করণিক সংশোধনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার বলেন, “ভোটের সময় কোনো অভিযোগ পেলে কমিশন খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে পারে বিদ্যমান আইনে। এখন ভোটের সময়ের পরে থেকে ফলাফল প্রকাশের পর, এমনকি গেজেট প্রকাশের আগে নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ের অভিযোগ কমিশন তদন্ত করে অনিয়মের প্রমাণ পেলে ভোট বাতিল করতে পারবে- এজন্য ৯১ অনুচ্ছেদে দুটি উপধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।”
তিনি জানান, নির্বাচনের যে কোনো মুহূর্তে পেশিশক্তি বা অন্যবিধ যে কোনো কারণে নির্বাচন বন্ধ/বাতিল জন্য এ প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিধির অধীনে কারো প্রার্থিতা বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেন নতুন করে ওই নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্যও প্রস্তাব রয়েছে।
এছাড়া কোনো ব্যক্তি অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কোনো ব্যক্তিকে নির্বাচনী কাজে বাধা দিলে বা বাধার চেষ্টা করলে শাস্তির আওতায় আনতে ৪৪ অনুচ্ছেদে উপধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
ভোট কেন্দ্রে পেশি শক্তির ব্যবহার প্রতিরোধে ২৫ অনুচ্ছেদে নতুন প্রস্তাব করা হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তা অশোক জানান, দায়িত্বশীল কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার অবহেলা বা দায়ীদের পাশাপাশি প্রভাব বিস্তারকারীদের সাজার প্রস্তাব; ভোট গণনার বিবরণী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও এজেন্টদের দেওয়া বাধ্যতামূলক করা, প্রার্থীদের আয়কর সনদ জমা দেওয়া, এবং মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন খেলাপি বিল ও ঋণ পরিশোধ করেই প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রাখা সংক্রান্ত প্রস্তাবও যাচ্ছে।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার প্রতিশ্রুতি ২০২০ সালে শেষ হয়েছে। নিবন্ধন শর্ত প্রতিপালনে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় দলগুলোকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় দিতে খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে।
সেই সঙ্গে দলের সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমার সময় এক বছর থেকে কমিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে জমার বিধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের জানান, সংলাপে আসা বিভিন্ন সুপারিশও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। যতটুকু সংশোধনী আনা প্রয়োজন বলে ইসি মনে করেছে ততটুকু সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে।
১৯৭২ সালে দ্য রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অর্ডার- আরপিও শীর্ষক নির্বাচনী আইনটি (১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নং- ১৫৫) ইংরেজিতে প্রণয়ন করা হয়।
কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন আরপিওর ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি বাংলায় রূপান্তরের উদ্যোগ নেয়। এই ধারাবাহিকতায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯৪ ক অনুচ্ছেদের দেওয়া ক্ষমতাবলে ২০১২ সালে ১ জুলাই বাংলাপাঠ গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়।
তৎকালীন কমিশন বিদায়ের আগে আইন সংস্কারে উদ্যোগী হলেও নিজেদের দ্বন্দ্বে তা আর এগোয়নি।
১৯৭২ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ প্রণয়নের পর এ পর্যন্ত ১২ বার সংশোধন এসেছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন অনুচ্ছেদে অন্তত ২১০টি বিষয়ে সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের পাশাপাশি ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনেও (ইভিএম) ভোট গ্রহণের বিধান রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন হয়।