নিবন্ধনের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত বিএনএম ও বিএসপি। তাদের বিষয়ে আপত্তির জন্য ১০ দিন সময় দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
Published : 16 Jul 2023, 02:38 PM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দুটি দলকে নিবন্ধন দিতে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করেছে নির্বাচন কমিশন।
এর মধ্যে নেই আলোচিত নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদের দুই পক্ষের কেউ বা জামায়াতে ইসলামী থেকে বের হয়ে গঠন করা এবি পার্টি।
রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে কমিশন সভা শেষে এ বিষয়টি জানানো হয়।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, “দুটি দল প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে। এখন গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। আপত্তি নিষ্পত্তি করে ২৬ শে জুলাইয়ের পর চূড়ান্ত করা হবে।”
দল দুটি হচ্ছে আলোচনায় না থাকা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি, মাঠ পর্যায়ে অফিস-কমিটির কার্যকারিতা, প্রয়োজনীয় তথ্য ও দলিল যাচাই, তদন্ত শেষে এই দুটি দল নির্বাচিত হয়েছে বলেও জানান ইসি সচিব।
এসব দলের বিষয়ে কারো কোনো দাবি বা আপত্তি আছে কিনা তা জানাতে ১০ দিন সময়ও দিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। জানানো হয়েছে, আপত্তি পেলে দুই পক্ষের শুনানি শেষে নিষ্পত্তি করা হবে। আর আপত্তি না পেলে নিবন্ধন বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করা হবে।
জানতে চাইলে বিএনএম এর আহ্বায়ক আব্দুর রহমান রোববার বলেন, “চূড়ান্ত নিবন্ধন পাওয়ার পর নির্বাচন নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। ১৯৭৮ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জাগদল, ছাত্রদল ও বিএনপি করে এসেছি। ষষ্ঠ ও সপ্তম সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-১ থেকে নির্বাচন করেছি। আমরা কোনো দল ভাঙাগড়ার জন্য কাজ করছি না। ২০০৬ এ নতুন দল করে এখন নির্বাচনে অংশ নেব।"
২০২২ সালের মে মাসে নতুন দলের নিবন্ধন আবেদন চায় ইসি। তিন মাসের সময় দিলেও তাতে সাড়া না পেয়ে অক্টোবর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।
নির্ধারিত সময়ে শখানেক নতুন দল নিবন্ধন পেতে আবেদন করে। এরমধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে ঝরে পড়ে ৮৭টি আবেদন, টিতে থাকে ১২ টি দল।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরেজমিন যে ১২ দলের তথ্য যাচাই করে নির্বাচন কমিশন। নিবন্ধনের জন্য বিবেচিত দুই দল ছাড়াও তারা এবি পার্টি, বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি (বিএইচপি), গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ সনাতন পার্টি- বিএসপি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ মাইনোরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি), ডেমোক্রেটিক পার্টি ও বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) বিষয়ে যাচাইবাছাই করে।
গত বছরের নভেম্বরে প্রাথমিক পর্যালোচনা শুরু হয় এবং চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মাঠ পর্যায়ে তদন্তে নামে কমিশন। দুই মাস ধরে সরেজমিন তদন্ত করে কর্মকর্তারা।
এবছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সংসদ নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।
এ লক্ষ্যে চলতি বছরের জুনের মধ্যে নতুন দলগুলোর নিবন্ধন কাজ শেষ করার কথা ছিল। তা পিছিয়ে মধ্য জুলাই পার হল নিবন্ধন দেওয়ার কাজ।
বর্তমানে ইসির কাছে নিবন্ধিত দল রয়েছে ৪২। সবশেষ আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ জাসদ।
বিএনএম, বিডিপি, এবি পার্টি ও নাগরিক ঐক্য- এই চারটি দলের শীর্ষ নেতারা এক সময় বিএনপি, জামায়াত ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ছিলেন। পরবর্তীতে কেউ বহিষ্কৃত হয়েছেন বা আগের দল থেকে সরে নতুন দল গড়ায় ব্যস্ত হন।
নিবন্ধনের জন্য বিবেচনা থেকে বাদ পড়া নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এক সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তিনি দলে অবস্থান হারান, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নও পাননি। পরে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে গঠন করেন নাগরিক ঐক্য।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ভোটে যান মান্না। এই জোট ঘোষণা না দিয়ে অকার্যকর হয়ে যাওয়ার পর এখন বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে আছেন মান্না।
জামায়াতে ইসলামী থেকে বেরিয়ে আসাদের নিয়ে গড়া দল আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। দলটির আহ্বায়ক হিসেবে আছেন জামায়াতে ইসলামী থেকে পদত্যাগকারী এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী, যিনি একজন সাবেক সচিব। আর ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু এ দলের সদস্য সচিব।
গত কয়েক মাসে রাজনীতিতে আলোচনায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের উদ্যোগে গঠন করা গণঅধিকার পরিষদ।
নুর এক সময় ছাত্রলীগ করতেন। তবে ২০১৭ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নেমে নিজের সংগঠনের বিরাগভাজন হন। ২০১৮ সালে সরকার প্রথম শ্রেণির চাকরিতে কোটা তুলে দেওয়ার পর নুর ডাকসু নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন। এরপর কোটা সংস্কারের জন্য গঠন করা কমিটিকে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক দলে রূপ দেন, গঠন করেন গণ অধিকার পরিষদ।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে আছে এই পরিষদও। তবে অনুদানের টাকার হিসাব না দেওয়া এবং ইসরায়েলি নাগরিক মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে বিরোধে দল ভেঙে দুই টুকরো হয়ে গেছে।
এর একাংশের নেতৃত্বে আছেন নুর, আরেক অংশের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া, যিনি আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে।