“দলের গঠনতন্ত্র যদি আমাদের সংবিধানের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ হয়, তাহলে তো কোনো সুযোগ নেই।”
Published : 29 Aug 2022, 06:07 PM
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামীর ভিন্ন নামে ইসিতে তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগও নেই।
নতুন দল নিবন্ধন দিতে নির্বাচন কমিশনের প্রক্রিয়া চলার মধ্যে সোমবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে একথা বলেন তিনি।
২০১৩ সালে উচ্চ আদালত জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণার নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন নিবন্ধনের জন্য আবেদন চেয়েছে ইসি। আগ্রহী দলগুলোর জন্য অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। জামায়াত থেকে বেরিয়ে গঠিত দল এ বি পার্টি নিবন্ধনের আবেদন করতে যাচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
যদি নতুন করে আবেদন করে একই মানুষ, কিন্তু ভিন্ন দল; তাহলে কি সুযোগ আছে-এমন প্রশ্নে আলমগীর বলেন, “একই মানুষ আসবে কি না, তা তো আর বলতে পারব না। যারা আবেদন করছেন, যদি দেখি যে ক্রাইটেরিয়া মেলে না, তাহলে তো দিতে পারব না।”
জামায়াতের ‘সংস্কারপন্থিদের’ নতুন দল এবি পার্টি
ইসিতে দল নিবন্ধনের জন্য পাঁচ হাজার টাকা ফি দিয়ে আবেদন করতে হয়। সেই সঙ্গে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী তিনটি শর্তের অন্তত একটি পূরণ করতে হয়।
শর্তগুলো হলো- দলটির একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত দলিল প্রদর্শন।
অন্য নামে কি নিবন্ধন পাওয়ার সুযোগ আছে- আবার প্রশ্ন করা হলে আলমগীর বলেন, “অন্য নামে হলেও তো জিনিস একই। দলের গঠনতন্ত্র যদি আমাদের সংবিধানের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ হয়, তাহলে তো কোনো সুযোগ নেই।”
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরুর সময় অন্য ৩৮টি দলের সঙ্গে নিবন্ধিত হয়েছিল জামায়াত।
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারেী এই দলটিকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে একটি রিট আবেদন করেন।
তাতে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুসারে শর্ত পূরণ না হওয়ায় জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধন পেতে পারে না।
জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের গেজেট এলো ৫ বছর পর
ওই রিট আবেদনের শুনানি শেষে হাই কোর্ট ২০১৩ সালের ১ অগাস্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। ফলে বিএনপির জোট শরিক এই দলটির দলীয় পরিচয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়।
নিবন্ধন না থাকলেও রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে কোনো বাধা নেই। নিবন্ধন দলের কেউ নির্বাচন করতে চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ আছে।
তবে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে দাঁড়ানো জামায়াতকে আইনিভাবে নিষিদ্ধ করার দাবিও রয়েছে।
একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে ‘ক্রিমিনাল দল’ আখ্যায়িত করা হয়েছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত আন্দর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক রায়ে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উস্কানি, হত্যাকাণ্ডে সায় ও সহযোগিতা দেওয়ার দায়ে জামায়াতে ইসলামীর তখনকার আমির গোলাম আযমকে টানা ৯০ বছর অথবা আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলটির পাঁচ শীর্ষ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।