শীতের সময় বিষণ্ন আর একাকী অনুভূতির মানে হলে ‘স্যাড’য়ে ভোগা।
Published : 27 Oct 2022, 08:07 PM
‘সিজনাল এফেক্টিভ ডিজঅর্ডার’ বা ‘এসএডি’ বা ‘স্যাড’- শীত মৌসুম আসার আগে ভুগতেই পারেন যে কেউ।
শীত এসে যাচ্ছে। এই ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা আবহাওয়ার আগমনী বার্তায় গরম পিঠা, ধোঁয়া ওঠা চায়ে চুমুক কিংবা বেড়াতে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো নিয়ে সুখ স্বপ্নে বিভোর আছেন অনেকেই।
তবে দিনের আলো কমে যাওয়া আর শীত শীতভাবের জন্য আলসেমি করা এক কথা, আর মন খারাপ লাগা আরেক বিষয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে বলা হচ্ছে মৌসুমি বিষণ্নতায় ভোগা বা ‘সিজনাল এফেক্টিভ ডিজঅর্ডার’ বা ‘এসএডি’ বা ‘স্যাড’। ছোট করে বলা যায়- ‘সিজনাল ডিপ্রেশন’।
যে কারণে ‘স্যাড’ লাগে
পুরোপুরি ব্যাখ্যা পাওয়া না গেলেও যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনি (এনএলএম) জানাচ্ছে- সূর্যালোকের পরিমাণ কমা, ঘুম আর জেগে ওঠার চক্রাকার সূচি মানে ‘সার্কাডিয়ান রিদম’য়ে ব্যাঘাত এমনকি বংশগত কারণও থাকতে পারে এর পেছনে।
তবে আশার কথা হল এই মৌসুমি বিষণ্নতা কাটিয়ে ফুরফুরে মেজাজের জন্য সকালে কয়েকটি অভ্যাস সহজেই রপ্ত করা যায়।
“দিনের বেশিরভাগ সময় কাজে লাগানো, মানে সূর্যের আলো যখন থেকে শুরু সেই সময়ে থেকেই ঘুম থেকে উঠে কাজ শুরু করলে শীতের এই বিষণ্নতা রোধ করা যায়”, ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এভাবেই পরামর্শ দেন ক্যালিফোর্নিার মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. সেরেনিটি সার্সেসিয়ঁন।
প্রতিদিনি একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠা
শুধু কর্মদিবসেই নয়, ছুটির দিনেও একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার পরামর্শ দেন এই মনোবিজ্ঞানি।
তিনি বলেন, “ঘুমের সময় ও পরিমাণ- বেশি অথবা কম হলে ‘স্যাড’ মনোভাব দেখা দিতে পারে।”
ঘুমের রুটিন ঠিক রাখার অভ্যাস গড়তে হবে। সময় মতো ঘুমাতে যাওয়া আর ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস থাকলে শরীরে অবসাদ জমতে পারে না।
প্রাকৃতিক আলোতে ঘুম ভাঙা
সূর্যের আলোর মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে।
তাই ডা. সার্সেসিয়ঁন বলেন, “ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘুম থেকে উঠতে হবে তা নয়, বরং রোদ যাতে সকালে ঘরে ঢুকতে পারে এজন্য ভারী পর্দা সরিয়ে রাখতে হবে। প্রকৃতির আলো ঝলমলে পরিবেশে ঘুম ভাঙলে নিজেকেও সতেজ লাগবে।”
নিজের পছন্দ মতো কর্মচঞ্চল থাকা
সূর্যের আলোর সঙ্গে ঘুম ভাঙার পর কর্মচঞ্চল হওয়ার নানান উপায় রয়েছে। সবচেয়ে ভালো হয় হালকা ব্যায়াম দিয়ে শুরু করা।
ডা. সার্সেসিয়ঁন বলেন, “শরীর মন চাঙা করার জন্য ব্যায়াম দারুণ পদ্ধতি। এর ফলে নানান হরমোন যেমন- ডোপামিন, এপিনেফ্রিন এবং সেরোটোনিন’য়ের নিঃসরণ হয়। যা ‘মেজাজ’ ভালো করে দেয়।”
সকালে সময় থাকলে শরীরচর্চা করা কিংবা দুপুরের খাবারের পর আলোতে একটু হাঁটাহাঁটির অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলেই হল। এরজন্য কঠিন কোনো ব্যায়ামের দরকার নেই। শুধু চাই, মনে করে সময় মতো প্রতিদিনি এই কাজ করা।
পুষ্টিকর সকালের নাস্তা
প্রোটিন, ভিটামিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি আর কার্বস- এই সবের মিলিত উপাদান দিয়ে দিনের শুরুতে পেট ভরতে পারলে সারাদিন যাবেও ভালো।
প্রতিদিন পুষ্টিকর নাস্তার অভ্যাস, সারাদিনের আলসেমি দূরে রাখতে পারে। পাশাপাশি ‘স্যাড’ আক্রমণ করলে যদি রক্তে শর্করার মাত্রা কম ও খিদাভাব থাকে তাহলে অবস্থা আরও খারাপ হয়।
তাই ডা. সার্সেসিয়ঁন পরামর্শ দেন, “দিনের শুরুতে খাবারটা হতে হবে পুষ্টিকর।”
আরও যা করা যায়
দিন ছোট হয়ে যাওয়াতে অনেকই কাজই হয়ত দ্রুত করতে হয়, আবার কিছু কাজ বাকিও থেকে যায়। সব মিলিয়ে মানের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি হতেই পারে।
এই ক্ষেত্রে ডা. সার্সেসিয়ঁন পরামর্শ দেন, “ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ভিটামিন ডি আলাদা করে খাওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি ধ্যান করার অভ্যাস গড়লে মন হবে শান্ত।”
আর ভাবতে হবে, গরমের দিনের মতো ঘামতে হচ্ছে না হাঁসফাঁস করতে হচ্ছে না বরং শীতের আমেজ উপভোগ করতে করতে সুন্দর সময় কাটানো যাচ্ছে, এটাই বা কম কি!
আরও পড়ুন
শীতকালে বিছানা ছাড়তে কষ্ট হওয়ার কারণ