কথায় কথায় তপ্ত বাক্য বিনিময় করার অভ্যাসে সম্পর্কে ক্ষতি হয়।
Published : 31 Jul 2024, 04:47 PM
নিজের কোনো চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে কথা বলার সময় যখন তখন রেগে যাওয়ার মানে হল, নিজের মধ্যে আগ্রাসী মনোভাব বেশি।
বন্ধুদের আড্ডা, পরিবারের কারও সাথে সাধারণ কথাবার্তায় গলা উঁচু হয়ে যাওয়াকে বলা হচ্ছে ‘অ্যাগ্রেসিভ কমিউনিকেইশন’।
এই বিষয়ে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক মনোবিজ্ঞানি ডেভিড টিজাল ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “নিজের চাহিদা, আকাঙ্ক্ষা, মতামত জোর করে প্রকাশ করা আর অন্যরা কী ভাবলো সেটা অগ্রাহ্য করাকে বলা হচ্ছে ঝগড়াটে বা ‘অ্যাগ্রেসিভ কমিউনিকেইশন’।”
পাশাপাশি তর্কে জয় পাওয়া বা কথাবার্তায় নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার স্বার্থে দমনীয় মনোভাবও প্রকাশ পায়।
যোগাযোগের চার ধরন
সাধারণত কারও সাথে যোগাযোগ করার প্রক্রিয়াকে চারটি ধরনে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে ‘অ্যাগ্রেসিভ কমিউনিকেইশন’ হল স্থূল, শত্রুভাব ও ইচ্ছাকৃত ঝগড়ার মনোভাব প্রকাশ করে।
ডা. টিজাল বলেন, “অন্যকে দোষ দিয়ে কথা বলাও এক ধরনের ঝগড়াটে মনোভাব প্রকাশ পায়।”
কথাবর্তায় বা যোগাযোগে অন্যান্য প্রকারগুলো হল-
অ্যাসার্টিভ বা দৃঢ় যোগাযোগ: যেখানে নিজের প্রয়োজন, আকাঙ্ক্ষা, মূল্যবোধ দৃঢ়ভাবে অন্যের প্রতি সম্মান রেখেই প্রকাশ করা হয়।
প্যাসিভ বা অপ্রতিরোধী যোগাযোগ: যেখানে ব্যক্তি তার মনোভাব, প্রয়োজন বা অনুভূতি প্রকাশে সংঘর্ষের ভয়ে গড়রাজী থাকে বা প্রকাশ করে না।
প্যাসিভ-অ্যাগ্রেসিভ: ওপরের দুটি ধরনের মিশ্রণে এই ধরনের যোগাযোগ করা হয়। যেখানে প্রত্যক্ষভাবে অপ্রতিরোধী মনোভাব থাকলেও পরোক্ষভাবে তিক্ত প্রকাশ করে। সেটা হতে পারে ব্যঙ্গ করা, কালক্ষেপন করা বা পেছনে কথা বলা।
ঝগড়াটে কথাবার্তার কারণ
বিপদে পড়লে দেহে ‘কর্টিসল’ ও ‘অ্যাড্রেনালিন’ এই দুই ধরনের স্ট্রেস বা চাপের হরমোন নিঃসরণ ঘটে। ফলে হঠাৎ বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে হয় মুখোমুখি লড়তে বা নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা চালায় মানুষ।
তবে যেখানে তাৎক্ষণিক বিপদের সম্ভাবনা নেই সেখানে এই ধরনো মনোভাব ঝগড়ার পরিস্থিতি তৈরি করে। যেমন- পারিবারিক কোনো আলোচনা।
মার্কিন মনোবিজ্ঞানি সুজেট ব্রে’র মতে ঝগড়াটে কথাবার্তার লক্ষণের মধ্যে রয়েছে-
সম্পর্কে প্রভাব
তিক্ত শব্দ ব্যবহার বা কড়া কথাবার্তা যে কোনো ধরনের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়, আস্থা হারায়।
ডা. টিজাল বলেন, “অ্যাগ্রেসিভ কমিউনিকেইশন’ স্বাস্থকর নয়। এটা একটা সম্পর্কেকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।”
নিজের মধ্যে ঝগড়াটে কথাবলার মনোভাব আছে কি-না বোঝার উপায়
ডা. টিজাল জানান- মৌখিত, অঙ্গভঙ্গী ও মানসিক লক্ষণ বিবেচনা করে চিহ্নিত করা যায়, কারও মধ্যে ঝগড়াটে মনোভাব আছে কিনা।
মৌখিক লক্ষণ: কঠোর ভাষা, অভিযোগ, দাবি, বাধা, চিৎকার করা।
অ-মৌখিক লক্ষণ: মারমুখি আচরণ ও মুখোভঙ্গী, অন্যের ব্যক্তিগত গণ্ডি দখল করা, আগ্রাসী দেহভঙ্গী।
আচরণগত লক্ষণ: দমনীয় কথাবার্তা, প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া।
মানসিক লক্ষণ: নিয়ন্ত্রণের অভিপ্রায় কাজ করা, সমালোচনার জবাব না দেওয়া।
ঝগড়াটে মনোভাব দূর করার পন্থা
মেজাজ খারাপ হতে থাকলে বা তিক্ত বাক্য বিনিময়ের পরিস্থিতি তৈরি হলে, নিজেকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গভীর নিঃশ্বাস নেওয়ার পরামর্শ দেন ডা. ব্রে।
তিনি বলেন, “অ্যাগ্রেসিভ কমিউনিকেইশন’য়ে ‘তুমি’ শব্দটা বেশি ব্যবহার হয়। ‘তুমি বোকা’, ‘তুমি গাধা’, ‘তুমি সারাক্ষণই এরকম কাজ কর’ ইত্যাদি।”
বরং কথার ধরন পরিবর্তনের চেষ্টা করতে হবে। যেমন ‘তুমি সবসময় এমনই কর’ এর পরিবর্তে বলা যায়, ‘আমার প্রয়োজনটা তুমি যখন মনে রাখ না তখন তো খারাপ লাগে’।
এভাবে ‘তুমি’র জায়গায় যখন ‘আমি’ ব্যবহার করা হয় তখন ঝগড়াটে মনোভাবের বিষয়টা অনেকাংশে কমে যায়। এক্ষেত্রে তিনটি সূত্র মনে রাখার পরামর্শ দেন ডা. ব্রে-
নিজের ঝগড়াটে আচরণ বন্ধ করতে
ওপরের বিষয়গুলো যদি নিজের সাথে মিলে যায় তবে এই অভ্যাস পরিবর্তন করার জন্য কয়েকটি বিষয় অনুসরণ করার পরামর্শ দেন ডা. ব্রে।
এছাড়া নমনীয় মনোভাব, শরীর শিথিল রাখার চেষ্টা, আগ্রাসী না হওয়া, অন্যের অনুভূতি সম্মান দেওয়া, কোনো কিছু মানা করতে হলে সাধারণভাবে পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলা। রেগে যেতে থাকলে আপাতত কথা বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করে পরে কথা বলার মতো বিষয়গুলো ঝগড়াটে মানসিকতা পরিহার করতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন
ঝগড়া থেকেও ভালো কিছু হতে পারে, তবে…