ঝগড়া থেকেও ভালো কিছু হতে পারে, তবে…

ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে ঠিক মতো ঝগড়া করতে পারলে স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক বজায় থাকে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2022, 10:20 AM
Updated : 29 May 2022, 10:20 AM

ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে ঝগড়া করা সময় ‘অল ইজ ফেয়ার ইন লাভ অ্যান্ড ওয়ার’ একথা মাথায় থাকলে বিপদ। তর্ক যদি বেঁধেই যায় তবে তার সমাধান আনতে হলে কথায় ভালোবাসার ইঙ্গিত থাকতে হবে, আবার মনের কথা ইনিয়েবিনিয়ে নয়, সরাসরি প্রকাশ করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটি’র ‘সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক জিম ম্যাকনাল্টি দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করছেন নবদম্পতি ও গভীর প্রেমের সম্পর্কে থাকা যুগলদের।

সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত এক প্রিতিবেদনে তিনি বলেন, “আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখেছি, মানুষ সবচাইতে বেশি উপকৃত হয় যখন তারা সোজাসাপ্টা কথা বলে। ঘুরিয়ে কথা বলা, ইঙ্গিত দেওয়া, খোটা দেওয়া ইত্যাদি কখনই উপকার হয় না বরং হিতে বিপরীত হয়।”

দুজন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কোথাও না কোথাও ভিন্ন হবেই। এক্ষেত্রে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি মুখ ফুটে বলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তা বলতে হবে এমনভাবে যা শুনেই বোঝা যায়, বুঝে নিতে না হয়।

ম্যাকনাল্টি আরও বলেন, “প্রিয়জনের সঙ্গে ঝগড়া করা যখন এতই ঝামেলার তবে না করাই ভালো। ফলে তারা বাকবিতণ্ডা এড়িয়ে চলেন, আর এখানেই হয় বড় ভুল। স্বামী স্ত্রী ঝগড়া এড়িয়ে চলছেন তার মানে হল ঝগড়া বাঁধার মতো কিছু ঘটেছে বা ঘটছে কিন্তু তা নিয়ে তারা আলাপ করছেন না।”

“নিজের জীবনসঙ্গীকে সবসময় বলি, কোনো বিষয় যদি তোমার ভালো না লাগে তবে আমাকে সরাসরি বলো। বিষয়টা আমার জানা থাকলে আমি তা সমাধানের চেষ্টা করতে পারবো। কিন্তু আমি যদি নাই জানি, তবে আমার কিছু করার উপায় থাকে না।”

যুক্তরাষ্টের ফিলাডেলফিয়ার আরেক সনদস্বীকৃত ‘কাপলস অ্যান্ড সেক্স থেরাপিস্ট’ কেইটলিন ক্যান্টর বলেন, “তর্ক এড়িয়ে চলা থেকে কখনই ভালো কিছু আসা সম্ভব নয়। তর্ক করে, ঝগড়া করে যদি মতোবিরোধের শেকড় খুঁজে বের করতে পারেন, নিজেদের সম্পর্কে নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারেন তবে সেটাই সম্পর্কের জন্য স্বাস্থ্যকর।”

সময় নির্ধারণ করা

ম্যাকনাল্টি বলেন, “ঝগড়াগুলো বাঁধে ঘটনাক্রমে। কোনো কথা বা ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে ‘আমি আর সহ্য করতে পারছি না’ এমন বাক্য বিনিময়ের মাধ্যমে শুরু হয় ঝগড়া। মাথায় যখন প্রচণ্ড রাগ তখন মুখের কথা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। আর এসময় রাগের মাথায় বলে ফেলা কথাগুলোর পরে নিজেরই অনুশোচনা হয়।”

এক্ষেত্রে বুদ্ধিমানের কাজ হবে যখনই দেখবেন মানসিক চাপ সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে তখন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনায় বসার জন্য সময় নির্ধারণ করুন। এমন সময় যখন দুজনেই মেজাজ শান্ত, অন্য কোনো বিষয় নিয়ে মানসিক চাপ কাজ করছে না।

তবে এমন অভ্যাস তৈরি করা আরও কঠিন। কারণ মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত মতবিরোধ জমিয়ে রাখে যতক্ষণ না তা বিস্ফোরক আকার ধারন করছে।

আর বিস্ফোরণ তখনই হয় যখন সে বিরক্ত, ক্ষুধার্ত, ক্রান্ত, রাগান্বিত।

“তাই বিস্ফোরক আলোচনা শুরু হয়ে গেলে মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে ঝগড়া বিরতি দিন। পরে ঠাণ্ডা মাথায় আলোচনায় বসুন”, পরামর্শ দেন ম্যানাল্টি।

আবেগ নিয়ন্ত্রণ

ঝগড়ায় এই বিরতি দেওয়া সুবাদে পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার অনুভূতি বোঝার সময় পাবেন। পুরো বিষয়টা নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তার করুন এবং সমাধানের উপার চিন্তা করুন।

“তবে এসময় পুরানো কোনো সমস্যা টেনে আনা চলবে না”, বলেন ম্যাকনাল্টি।

তিনি আরও বলেন, “এখন এমনও পরিস্থিতি হয় যে কোনো একটা বিষয় নিয়ে আপনার রাগ হচ্ছে কিন্তু ঠিক কেনো রাগ হচ্ছে সেটা আপনি নিজেও বুঝতে পারছেন না।”

এমন পরিস্থিতিতে তৃতীয় কোনো বিশেষজ্ঞ পক্ষের সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে। কারণ আপনি হয়ত শুধু এই একটি ঘটনা নিয়ে ভাবছেন না, অন্যকোনো মনকষ্ট আপনার চিন্তাকে প্রভাবিত করছে।

আবার মেনে নেওয়া যায় না এমন কোনো ঘটনা ক্রমাগত ঘটতে থাকলে তখনও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শুধু বলা নয়, শুনতেও হবে

বাকবিতণ্ডার ফলাফল ইতিবাচক করার উপায় হিসেবে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করাকেই মূখ্য মনে করেন সিংহভাগ মানুষ। তবে কথা শোনাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কথাগুলো যেমন তাকে শুনতে হবে তেমনি তার কথাগুলোও আপনার শুনতে হবে।

ক্যান্টর বলেন, “কারও কথা শোনার পাশাপাশি আবেগও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আপনার সঙ্গী যদি এমন কিছু বলেন যা আপনার পছন্দ না তখন তেলে বেগুনে জ্বলে না উঠে তার সেই কথার ভালোমন্দ বাছবিচার করতে হবে।”

মনে রাখতে হবে ঝগড়ার মাঝে সব কথাই হয়ত নেতিবাচক শোনাবে। কিন্তু অপরপক্ষের কথা শুনে এবং বুঝে তার উত্তর দিলেই মতবিরোধ এড়ানো সহজ হবে।

ম্যাকনাল্টি বলছেন, “সঙ্গীর কথা শুনে তা থেকে আপনি কী বুঝেছেন সেটাই তাকে পুনরায় জানান। অনেকক্ষেত্রেই দেখবেন আপনি যা বুঝেছেন আসলে আপনার সঙ্গী তা বোঝাতে চাননি। তবে সেখানে কথার ধরন যেন দোষারোপের মতো কিংবা জেরা করার মতো না শোনায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।”

শব্দচয়নে সাবধান

ক্যান্টর বলেন, “‘তোমার আচরণে, তোমায় কথায় আমি কষ্ট পেয়েছি’ এই বাক্যগুলো যখন ব্যবহার করা হয় তখন তা দোষারোপের মতো শোনায়। এর বদলে যদি বলা হয় ‘তুমি যখন এই কাজটি কর, ওই কথাটি বলো তখন আমি কষ্ট পাই’, তাহলে কিছুটা নরম শোনায়।”

“কিন্তু রাগের মাথায় এভাবে কথা বলা সহজ নয়, মাথায়ই আসে না। আর সেজন্যই রাগ দমানোর জন্য সময় নিতে হবে।”

অঙ্গভঙ্গিও গুরুত্বপূর্ণ

ম্যাকনাল্টি বলেন, “কিছু না বলেও একজন মানুষকে অপমান করা যায়। সঙ্গীর কথা শুনে মুখের বিরক্তি প্রকাশ করা, চোখ ঘোরানো, তাচ্ছিল্য করা ইত্যাদি তেমনই কিছু অঙ্গভঙ্গি।”

ক্যান্টোর বলেন, “যদি খাদের কিনারাতেই চলে আসে মেজাজ তবে গভীরভাবে শ্বাস নিন। আর শ্বাসপ্রশ্বাসের দিকে নজর দিতে পারলে নিজেকে শান্ত করাও সহজ হয়।”

অন্যের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছেন, কথা শুনছেন- এটা প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে শুধু মুখের কথা নয়, অঙ্গভঙ্গীতেও প্রকাশ পেতে হবে।

আরও পড়ুন