সমস্যায় ভোগার আগেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
Published : 26 Apr 2024, 04:06 PM
প্রজনন প্রক্রিয়া নারীদের স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক- যা উর্বরতা, ঋতুস্রাব ও সামগ্রিক সুস্থতায় ভূমিকা রাখে।
নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে জীবনযাত্রার উন্নয়ন, পেশাদার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা ও সক্রিয় কৌশল অনুশীলন অন্তর্ভুক্ত।
হিন্দুস্থানটাইমসে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ভারতের ‘ভারানাসি বিড়লা ফার্টিলিটি অ্যান্ড আইভিএফ’য়ের স্বাস্থ্য পরামর্শক ডা. দ্বীপিকা মিশ্রা বলেন, “নারীদের সাধারণ কিছু প্রজনন সমস্যার মধ্যে রয়েছে মেনোরেজিয়া (ভারী রক্তপাত), ডিসমেনোরিয়া (বেদনাদায়ক মাসিক) এবং অনিয়মিত মাসিক।”
এছাড়াও ‘পিসিওএস’য়ে ভোগেন অনেক নারী যা একটা সাধারণ ধরনের হরমোনের ভারসাম্যহীনতা। এরফলে অনিয়মিত মাসিক, ওভারিয়ান সিস্ট এবং উর্বরতা ত্রুটির মতো নানান সমস্যা দেখা দেয়।
তিনি আরও বলেন, “এছাড়াও কিছু জটিলতা নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপরে প্রভাব রাখে। জরায়ু ফাইব্রোয়েডস বা লিওমাইয়োমা (জরায়ুর পেশি স্তর থেকে অ-ক্যান্সারধর্মী কোষের বৃদ্ধি) এবং এন্ডোমেট্রিওসিস (জরায়ুর আস্তরণে কোষের বৃদ্ধি)। পাশাপাশি গর্ভাবস্থা ও উর্বরতা সংশ্লিষ্ট সমস্যাও নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে।”
দিল্লির ইন্দিরামপুরের ‘নোভা আইভিএফ ফার্টিলিটি’র উর্বরতা বিশেষজ্ঞ ডা. নেহা ত্রিপাঠি মহিলাদের প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষায় কয়েকটি উপায় অনুসরণের পরামর্শ দেন।
নিয়মিত স্ক্রিনিং/ পরীক্ষা করা
নিয়মিত ‘গাইনেকোলজিকল’ পর্যবেক্ষণ যেমন- প্যাপ স্মিয়ারস, মেমোগ্রামস এবং এইচপিভি স্ক্রিনিং ইত্যাদি প্রাথমিক পর্যায়ে অস্বাভাবিকতা শনাক্ত করতে সহায়তা করে। যা পরে চিকিৎসাকে ফলপ্রসূ করে তোলে।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা
পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং স্বাস্থ্যকর ঘুমের রুটিন নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য সুস্থ ও যে কোনো সমস্যা থেকে সুরক্ষিত রাখে।
ব্যথা বা অস্বস্তি ব্যবস্থাপনা
শারীরিক যে কোনো সমস্যা, ব্যথা অথবা অস্বাভাবিক নিঃসরণ দেখা দিলে বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন।
ধূমপান ও অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ
ধূমপান এবং বেশি অ্যালকোহল গ্রহণ প্রজনন স্বাস্থ্যের ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
নিরাপদ যৌন ব্যবস্থা
নিরাপদ যৌন ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সংক্রমণ এড়িয়ে চলা যায়। আর নানান প্রজনন স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকেও সুরক্ষিত থাকা যায়।
প্রতিষেধক গ্রহণ
‘এইচপিভি’র প্রতিষেধক বা টিকা গ্রহণ করা প্রজনন স্বাস্থ্যের জটিলতা কমাতে ভূমিকা রাখে।
বিকল্প মাসিক পণ্য
পরিবেশ বান্ধব মাসিকের পণ্য যেমন- মিন্সট্রুয়াল কাপ অথবা কাপড়ের প্যাড ব্যবহার আরামদায়ক এবং পরিবেশবান্ধব।
প্রয়োজনীয় সাহায্য গ্রহণ
প্রয়োজনে বন্ধু, পরিবার অথবা স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে থাকেন এমন ব্যক্তি বা সংস্থার কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করতে হবে। প্রজনন স্বাস্থ্যের সমস্যা খুঁজে বের করা এবং সচেতন হওয়ার মাধ্যমে সুস্থতায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
ভারতের নইদার ‘মাদারহুড হাসপাতাল’য়ের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মঞ্জু গুপ্তা বলেন, “নানান কারণে নারীদের সাধারণ প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে রয়েছে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, সংক্রমণ, কাঠামোগত অস্বাভাবিকতা, জীবনযাত্রা ও বংশগতি।”
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
হরমোনের ঘাটতির ফলে ‘পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস)’, অনিয়মিত মাসিক, ডিম্বাশয়ে সিস্ট এবং উর্বরতায় জটিলতা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও অনিয়মিত মাসিক এবং অস্বাভাবিক হরমোনের মাত্রা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে।
সংক্রমণ
যৌন-বাহিত সংক্রমণ যেমন- পেল্ভিক বা শ্রোণী সংক্রান্ত প্রদাহের কারণ ক্ল্যামেডিয়া এবং গনরিয়া। দীর্ঘমেয়াদে শ্রোণীদেশে ব্যথা, দাগ ও বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে।
মূত্রনালীর সংক্রমণও প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব রাখে।
জীবনযাত্রা
ধূমপান, অতিরিক্ত অ্যালকোহল, অপুষ্টি, মানসিক চাপ এবং পরিবেশের দূষণ প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপরে প্রভাব রাখে। এগুলো মাসিক চক্র, হরমোনের মাত্রা ও সার্বিক উর্বরতায় প্রভাব ফেলে।
বংশগতি
অনেক নারী বংশগতভাবেই প্রজনন সমস্যা প্রবণ হয়ে থাকেন। যেমন- কারও পরিবারে ‘এন্ডোমেট্রিওসিস’ বা ‘পিসিওএস’য়ের ইতিহাস থাকলে তারও একই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডা. মঞ্জু জোর দিয়ে বলেন, “নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের সাধারণ সমস্যা সমাধানের জন্য এর কারণ, ইতিহাস, লক্ষণ ও ঝুঁকিগুলো ভালোমতো জানা প্রয়োজন। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা এই অবস্থা নির্ণয়ের জন্য পেল্ভিক পরীক্ষা, আল্ট্রাসাউন্ড ইমেজিং, হরমোনের স্তর মূল্যায়ণসহ নানান রকমের পরীক্ষা করে থাকেন।”
তিনি আরও বলেন, “চিকিৎসা পদ্ধতি, ওষুধ, জীবনযাত্রার পরিবর্তন, অস্ত্রোপচার এবং উর্বরতা চিকিৎসার সাথে জড়িত। এগুলো রোগী ও তার অবস্থা ভেদে আলাদা হয়ে থাকে। নিয়মিত গাইনোকোলজিকল স্ক্রিনিং ও প্রতিরোধক ব্যবস্থা নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসহ সামগ্রিক সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”
আরও পড়ুন
নারীদের সাধারণত যেসব পুষ্টি ঘাটতি হয়