নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে ফলাফল হতে পারে উল্টো। বাড়তে পারে বেশি খাওয়ার ঝোঁক।
Published : 07 Apr 2024, 04:55 PM
নানান কারণে স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞরা নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করতে মানা করেন।
“দেহের প্রয়োজনীয় শক্তির চেয়ে কম ক্যালরি বা পুষ্টি উপাদান গ্রহণে বিশেষ খাবার বেছে নেওয়াকে বলা হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস”- সিএনএন ডটকম’য়ে ব্যাখ্যা করেন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের রকভিলে অবস্থিত ‘দি ইটিং ডিজঅর্ডার সেন্টার’য়ের প্রতিষ্ঠাতা জেনিফার রোলিন।
“এই ধরনের খাদ্যাভ্যাস বেশি দিন বজায় রাখা সম্ভব হয় না”- মন্তব্য করেন রোলিন।
এরফলে হয়ত প্রয়োজনীয় ক্যালরি বা পুষ্টি মিলবে না। অথবা অনিয়ন্ত্রিত স্বভাব গড়ে ওঠার কারণে অস্বাস্থ্যকর খাবারের সাথে দেহের সম্পর্ক তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
তাহলে কীভাবে বুঝবেন নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসে আছেন নাকি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করে মনও ভরছেন?
আর সেটা বোঝার জন্য নিজেকেই তিনটা প্রশ্ন করতে পারেন।
বার বার খাবারের কথা চিন্তা করেন কি?
খাবার নিয়ে কতটা ভাবেন- এই বিষয় খেয়াল করলে নিজের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে অনেকটাই আন্দাজ করা যায়।
নর্থ ক্যারোলিনা নিবাসী পুষ্টিবিদ নাটালি মোকারি এই বিষয়ে একই প্রতিবেদনে বলেন, “স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার খাওয়ার পর বাকিটা সময় অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকা হয়। তবে নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসে থাকলে কী খাচ্ছেন না খাচ্ছেন সেই বিষয়ে মন আচ্ছন্ন থাকে।”
আর কোনো খাবার খেয়ে ফেলার পর জাগতে পারে লজ্জাবোধ।
সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস প্রভাব ফেলে। মনে তৃপ্তি আসে কম। আর কী খাব, না খাব- এই ভাবনাটা যেন ‘ফুলটাইম জব’য়ের আকার ধারণ করে।
মোকারির ভাষায়, “কারও ক্ষেত্রে যে কারণে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। ফলে কমতে পারে উপভোগ করার ক্ষমতা।”
আর এভাবে দেহে খাবারের প্রভাব পড়া সঠিক পন্থা নয়।
কতটা কঠোর?
খাবারের বিষয়ে কতটা অনমনীয় সেটার বোঝার ভালো একটি পন্থা হল, এই প্রশ্নটা করা।
রোলিন বলেন, “ভালো বোধ করার জন্য পছন্দসই খাবার বেছে নেওয়া বা খাওয়ার পন্থার সাথে খাবার গ্রহণের নিয়ম বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণ করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।”
খাবারের ক্ষেত্রে অনমনীয় আচরণের জন্য অনুশোচনা বোধ সৃষ্টি হতে পারে।
কোনো কোনো স্বাস্থ্যসমস্যার ক্ষেত্রে কিছু খাবার একেবারেই বাদ দিতে হয়। এছাড়া খাদ্য গ্রহণে ভারসাম্য বজায় রাখার পন্থা রয়েছে।
যেমন- যদি পনির খাওয়া কমাতে চান, তাহলে কী একেবারেই খাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন? নাকি ফল, সবজি ও বাদাম যোগ করে খান যাতে পনির কম গ্রহণ করা হয়?
রোলিন বলেন, “কোনো খাবার বাদ দেওয়ার পরিবর্তে বরং অন্য খাবার যুক্ত করে সেই নির্দিষ্ট খাবার কম গ্রহণ করার পন্থা বেশি উপকারী।”
অল্প একটু খেয়ে দেখতে ইচ্ছে হয় কি?
এই ক্ষেত্রে মোকারি, ৮০/২০ নিয়ম অনুসরণ করতে পছন্দ করেন।
একটি নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাস বা স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য সব ধরনের খাবার নিয়ে ৮০ শতাংশ সময় ভাবনা-চিন্তায় মগ্ন থাকতে হবে তারপর ২০ শতাংশ সময় ভাবনায় আরও নমনীয় হতে হবে।
এই পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস নিয়ে মানসিকতা দূর করা সম্ভব।
তিনি বলেন, “নির্দিষ্ট কিছু খাবার গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করলে সেই খাবারগুলোর প্রতি এক ধরনের দুর্ভিক্ষ অনুভব করা শুরু করবে।”
“নির্দিষ্ট কিছু খাবার গ্রহণে কোনো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার লক্ষণ হল- অতিমাত্রায় নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস”- বলেন রোলিন।
আর সেটা দৈহিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হলেও, পরে খেয়ে ফেললে মানসিকভাবে লজ্জাবোধের নিয়ন্ত্রণ হয় না।
নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস থেকে সরে আসার পন্থা
স্বাস্থ্যের কথা ভেবে যদি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হয় তবে স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
মোকারি এবং রোলিন- দুজনেরই মন্তব্য হল, “একমাত্র স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরাই আপনার দেহের আকার, ওজন, আকৃতি, প্রয়োজন অনুযায়ী কী ধরনের খাদ্যাভ্যাসে থাকবেন সে বিষয়ে সুপরামর্শ দিতে পারবেন।”
নির্দিষ্ট শারীরিক সমস্যা, যেমন- অ্যালার্জির জন্য হয়ত বেশ কয়েকটি খাবার একেবারে বাদ দিতে হয়। তবে সেটাও করতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
খাদ্যাভ্যাসের প্রধান উদ্দেশ্য হবে শরীরের প্রয়োজন বোঝা। আর সেই হিসেবে মানসিকভাবে চাপে না থেকে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া।
আরও পড়ুন