অস্বস্তিকর হলেও এই সমস্যা মারাত্মক রোগের লক্ষণও হতে পারে।
Published : 09 Jan 2025, 12:23 PM
রাতে ঘুম না আসার নানান কারণের মধ্যে থাকতে পারে- আশপাশের আওয়াজ, দুশ্চিন্তা, অ্যাসিড রিফ্লাক্স কিংবা মন খারাপ।
তবে মলদ্বারে চুলকানির সমস্যার কারণে ঘুম না আসলে অবশ্যই সাবধান হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
এই বিষয়ে নিউ ইয়র্ক সিটি ভিত্তিক গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট এলেনা ইভানিনা ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “হালকা চুলকানি তেমন কোনো বিষয় না। তবে মলদ্বারে অবিরাম চুলকানি হওয়াকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয় ‘প্রুরাইটাস আনি’। আর এটা হওয়ার নানান কারণ রয়েছে।”
চুলকানি হতে পারে জ্বালাধর্মী, অস্বস্তি, ব্যথাযুক্ত বা মলদ্বারের চামড়া মোটা অনুভূত হওয়া। কৃমি, ত্বকের সমস্যা থেকে শুরু করে অন্তর্বাসের কারণেও এমন হতে পারে।
ত্বকের সংক্রমণ
দেহের যেখানেই চামড়া আছে সেখানেই দেখা দিতে পারে ‘সোরায়সিস’ এবং ‘একজিমা’।
ইভানিনা বলেন, “যদিও সাধারণত সোরায়সিস দেখা দিতে পারে হাঁটু, কনুই, দেহে ও মাথায়। তবে মলদ্বারের আশপাশেও হতে পারে।”
যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ইন্টেগ্রেটিভ গাট হেল্থ’য়ের এই প্রতিষ্ঠাতা আরও বলেন, “একজিমা হওয়ার লক্ষণের মধ্যে আছে চুলকানি, মলদ্বারের আশপাশ ফুলে যাওয়া এবং পশ্চাদ্দেশের মাঝে চুলকনো।”
রাতে দেহের তাপমাত্রা ও ত্বকের আর্দ্রতার পরিবর্তনের কারণে দুই সমস্যাই দেখা দিতে পারে। আর ঘুমের মধ্যে অবচেতন অবস্থায় চুলকালে, চুলকানি আরও বাড়তে থাকে।
মানে চুলকিয়ে আরাম পেতে গিয়ে ত্বককে আরও অস্বস্তিতে ফেলা হয়।
সমাধান: চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন হবে।
যৌনবাহিত রোগ
যৌননাঙ্গ ও মলদ্বর- দুটোই আক্রান্ত হতে পারে যৌনবাহিত রোগে।
ডা. ইভানিনা বলেন, “সাধারণ রোগের মধ্যে আছে- গনরিয়া, সিফিলিস, ক্লুমিডিয়া, হিম্যানপাপিলোমাভাইরাস, জেনিটাল ওর্টস, হার্পিস সিম্প্লেক্স ভাইরাস।”
এরসব রোগে চুলকানির সাথে অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে-
ব্যথা
পেট খালি থাকার পরও বারবার মল ত্যাগের তাড়না জাগা
বেশি টয়লেটে যাওয়ার তাড়না অনুভব
রক্তপাত বা নিঃসরণ
জ্বালা করা
প্রদাহ
সমাধান: যদি এরকম লক্ষণ দেখা দেয় তবে অবশ্যই চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে চিকিৎসা নিতে হবে।
কৃমির সমস্যা
‘পিনওয়ার্মস’ বা কেঁচোকৃমিতে আক্রান্ত হলেও মলদ্বার চুলকাতে পারে।
ডা. ইভানিনা বলেন, “এই ক্ষুদ্র, চিকন, সাদা কৃমি (আকার খুব বেশি স্ট্যাপলার পিনের সমান) মানবদেহের মলাশয়ে বাস করতে পারে। যখন আক্রান্ত ব্যক্তি ঘুমায় তখন স্ত্রী কৃমি অন্ত্র থেকে বের হয়ে মলদ্বারে এসে আশপাশের চামড়ায় ডিম পাড়ে।”
যেহেতু রাতেই এই কাজটা করে তাই ঘুমের সময় মলদ্বরে চুলকানি অনুভূত হয়। এটা খুবই ছোঁয়াচে আর স্কুল পড়ুয়া শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
অন্য আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস ধরা বা বাথরুমের মেঝে থেকে কৃমিতে আক্রান্ত হতে পারে।
সমাধান: পরজীবী-মল পরীক্ষার মাধ্যমে এই সমস্যা ধরা যায় না। তবে নিজেই পরীক্ষা করা সম্ভব।
ডা. ইভানিনা বলেন, “ঘুমানোর তিন ঘণ্টা পর মলদ্বারের ত্বক পরীক্ষা করতে হবে সেখানে কোনো কৃমি দেখা যায় কিনা। অথবা স্বচ্ছ টেপ মলদ্বারের ত্বকে লাগিয়ে উঠিয়ে আনলে কৃমির ডিম দেখা সম্ভব হবে। এজন্য পরীক্ষাটা সকালে ঘুম থেকে উঠেই করতে হবে।”
তবে সুখের বিষয় হল এটা মারাত্মক কোনো অসুখ নয়। ওষুধের মাধ্যমেই সহজেই সমাধান করা সম্ভব। এজন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
অস্বস্তিকর প্রসাধনী
যদি সংবেদনশীল ত্বক হয় তবে সুগন্ধি সাবান, পাউডার, লোশন বা ক্রিম মলদ্বারে চুলকানি তৈরি করতে পারে। এমনকি খসখসে টিস্যু এর জন্য দায়ী হয়।
সমাধান: রং-গন্ধহীন সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে। এমনকি টিস্যুও।
পোশাক/ অন্তর্বাস
সারাদিনের ব্যবহার করা অন্তর্বাস বা রাতে শোয়ার পোশাক থেকে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডা. ইভানিনা বলেন, “পোশাক বেশি আঁটসাঁট হলে কাপড়ের ভেতর তাপ ও আর্দ্রতা আটকে থাকে। ফলে তৈরি হয় ঘামময় পরিবেশ। আর ঘামার কারণে চুলকানি হয়। হতে পারে ইস্টের সংক্রমণ।”
সমাধান: এজন্য ঢিলেঢালা, হালকা, বাতাস চলাচল করে এরকম রাতের পোশাক পরে ঘুমাতে হবে। অন্তর্বাসের ক্ষেত্রে বেশি আঁটসাঁট পরা যাবে না। আর বাতাস চলাচল করে এমন কাপড় হতে হবে।
অর্শরোগ
অর্শ বা হেমোরয়েডস হল মলনালী। অনেক্ষণ বসে থাকলে বা বেশি চাপ দিয়ে মলত্যাগ করার সময় এই নালী ফুলে যেতে পারে। যাকে বলে অর্শরোগ।
ডা. ইভানিনা বলেন, “এর ফলে দেখা দেয় রক্তপাত, ব্যথা বা চুলকানি। পাশাপাশি রাতে ঘুমানোর সময় দপদপ করতে পারে। কারণ যে কোনো ঘুমের ভঙ্গীতেই চাপ পড়তে পারে নিম্নাঙ্গে “
সমাধান: মলাশয় পরীক্ষার মাধ্যমে ডাক্তার সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি দিতে পারবে। সেগুলো হতে পারে- মল নরম করা, কুসুম গরম পানিতে নিম্নাঙ্গ ডুবিয়ে রাখা বা গোসল। মারাত্মক হলে অস্ত্রোপচারের দরকার হতে পারে।
খাবারের কারণে
ডা. ইভানিনা বলেন, “অদ্ভূত হলেও সত্যি যে, রাতের কোনো খাবার থেকেও এই চুলকানি হতে পারে। যেমন- সিট্রাস বা টকফল, টমেটো, ঝাল ও দুগ্ধজাত খাবার।”
এগুলো সবই পশ্চাদ্দেশে চুলকানি তৈরি করতে পারে। এছাড়া ক্যাফিন যুক্ত খাবার ও পানীয়, যেমন – চা বা কফি ও চকলেট থেকেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ ক্যাফিন পায়ুপথের পেশি শিথিল করে মলের নিঃসরণ ঘটিয়ে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।
সমাধান: এক্ষেত্রে নিজেকে খুঁজে বের করতে কোনো খাবার খাওয়ার পর এরকম হচ্ছে। কয়েকদিন পরপর একটি করে খাবার বাদ দিয়ে দেখতে হবে পরখ করতে হবে।
অন্যান্য সমস্যা
উপরের কারণগুলো ছাড়াও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত কারণে মলদ্বারে চুলকানি হতে পারে। ডা. ইভানিনা’র মতে সেগুলো হল-
ইস্টের সংক্রমণ
অ্যানাল ফিশার (পায়ুপথের আবরণ ছিড়ে যাওয়া)
দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া
ডায়াবেটিস
লিভার ডিজিজ বা যকৃতের রোগ
লিউকেমিয়া (রক্তের ক্যান্সার)
লিম্ফোমা (লিম্ফেটিক সিস্টেম বা রসবাহী ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু হওয়া ক্যান্সার)
কিডনি বা বৃক্ক অকার্যকর হওয়া (যখন একেবারেই রক্ত পরিশোধন করতে পারে না)।
অ্যানিমিয়া বা লৌহের ঘাটতি, যাকে বলে রক্তশূন্যতা।
থাইরয়েড সমস্যা।
আরও পড়ুন