শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা

বড়দেরই নয়, ছোটদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও হেলাফেলার বিষয় নয়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2020, 12:27 PM
Updated : 20 Oct 2020, 12:27 PM

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার হার মোটেই কম নয়। এদের মধে বেশিরভাগই আক্রান্ত হয় শৌচাগার ব্যবহারের অভ্যাস করানোর সময়, যখন শিশুর বয়স হয় দুই থেকে তিন বছর।

আর এই রোগে আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসায় যত দেরি হবে, ততই বিষয়টি সামলানো শিশুর জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে, শারীরিক ও মানসিক দুভাবেই।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিস্তারিত জানিয়েছেন ভারতের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ পেডিয়াট্রিক গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি’র পরিচালক এবং কমনওয়েলথ অ্যাসেসিয়েশন অফ পেডিয়াট্রিক গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশন’য়ের প্রেসিডেন্ট ডা. নিলম মোহন এবং ‘অ্যাবট ইন্ডিয়া’র ‘মেডিকাল ডিরেক্টর’ ডা. শ্রিরুপা দাস।

কোন বয়সের শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়?

এই প্রসঙ্গে ডা. নিলম মোহন বলেন, “শিশুদের মধ্যে দু্ই থেকে চার বছরের শিশুরাই কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত হয় বেশি। যে সময়টায় তাদের ‘পট’য়ে বসানো হয় কিংবা শৌচাগার ব্যবহার করা শেখানো হয়। পরে এই রোগের প্রকোপ দেখা দেয় পরিণত বয়সে, যার প্রধান কারণ অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।

কী কারণে শিশুদের এই রোগ হতে পারে?

ডা. শ্রিরুপা দাস এবিষয়ে বলেন, “এই ব্যাপারটা বাবা-মায়ের জানাটা জরুরি। শৌচাগার ব্যবহার করা শিখতে যে শিশুদের কষ্ট হয় তাদেরই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। তাড়াহুড়ার কারণে মল পুরোপুরি নির্গমন না হওয়া একটা বড় কারণ। বাড়ির বাইরের শৌচাগার হওয়ায় সেখানেও তাড়াহুড়ো থাকতে পারে। মলত্যাগের বেগ চেপে রাখা এবং পানি পানের ঘাটতিও উল্লেখযোগ্য কারণ।”

শিশুর মলত্যাগের অভ্যাসে বাবা-মায়ের নজরদারির গুরুত্ব কতটুকু?

ডা. নিলম মোহন বলেন, “অত্যন্ত জরুরি এবং সেখানে নিয়মিত নজরদারি থাকতে হবে। শিশুদের নিয়মিত ‘বাওয়েল মুভমেন্ট’ না হলে, কোনো সমস্যার ইঙ্গিত টের পেলে উচিত হবে মলত্যাগের অভ্যাস ও ধরনের কয়েকদিনের তালিকা তৈরি করা। সেখানে থাকতে হবে মলের পরিমাণ, রং, ধরন, মলত্যাগের সময় শিশু কোনো অস্বস্তি বোধ করে কি-না, কীভাবে শিশু বসে, বেগ চেপে রাখে কি-না এগুলোসহ যে কোনো তথ্য যা উল্লেখযোগ্য বা অস্বাভাবিক মনে হবে।”

শিশুর দিনে কতবার ‘বাওয়েল মুভমেন্ট’ হবে তা নির্ভর করে বয়সের ওপর। শৈশবের প্রাথমিক বছরগুলোতে দিনে চারবার ও তারও বেশি মলত্যাগ হতে পারে। চার বছর বয়সের পর সাধারণত ৯৮ শতাংশ শিশুর বেগ চেপে রাখার ক্ষমতা তৈরি হয়। সেসময় মলত্যাগের সংখ্যা নেমে আসতে পারে দিনে এক থেকে দুবারে।

ছোট্ট শিশুদের শৌচাগার ব্যবহার শেখানো এবং একটু বড় হওয়ার পর তার অনুশীলন নিয়ে কী উপদেশ দেবেন?

এমন প্রশ্নে ডা. নিলম মোহন বলেন, “শিশুর বয়স ২৪ মাস হওয়ার আগে তাকে শৌচাগার ব্যবহারে অভ্যস্ত করার চেষ্টা করা যাবে না। তিন থেকে চার বছর বয়স হল তা শেখানোর সময়। তবে নির্দিষ্ট বয়স নিয়ে মতান্তর আছে।”

“একজন মানুষকেই এই কাজের দায়িত্ব নিতে হবে এবং ওই ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট নিয়মই অনুসরণ করবে। একটি নির্দিষ্ট স্থান বেছে নেবে এবং একটি নির্দিষ্ট শব্দ ব্যবহার করবে শৌচাগার ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়ার জন্য।”

“যে শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য আছে, তাকে দিনের যেকোনো সময় দুই থেকে তিনবার ভারি খাবার খাওয়ানোর আধা ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ থেকে ১০ মিনিটের জন্য ‘পট’ কিংবা শৌচাগারে বসাতে হবে। ‘অ্যানাল ফিশার’ দেখা দিয়ে থাকলে তার চিকিৎসা করাতে হবে দ্রুত যাতে মলত্যাগ হয় ব্যথামুক্ত।”

“শৌচাগার ‘লো-কমোড’ হলে হাঁটু ভাঁজ করে বসার অভ্যাস করাতে হবে। ‘হাই-কমোড’ হলে পায়ের নিচে পিঁড়ি দিলে ভালো হবে। যেকোনো অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অভ্যাসটি অনুশীলন করার বিনিময়ে কোনো পুরষ্কারের ব্যবস্থা শিশুকে উৎসাহ যোগাবে।”

“শারীরিক কসরতের অনুশীলন শৈশব থেকে রপ্ত করানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এতে হজমশক্তি জোরদার, স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। সামান্য ব্যায়াম যেমন টানা আধাঘণ্টা হাঁটা, উঠবস করা, অদৃশ্য চেয়ারে বসা ইত্যাদি শরীরচর্চাকে খেলা হিসেবে তাদের সামনে উপস্থিত করা উচিত।”

কেমন খাদ্যাভ্যাস সহায়ক হবে?

ডা. নিলম মোহন বলেন, “সুষম খাদ্যাভ্যাস সবকিছুর জন্যই জরুরি, সব বয়সেই। শিশুর সুষম খাদ্যাভ্যাসে প্রধান খাদ্য শ্রেণির সবগুলোর কয়েকটি উপাদান থাকতে হবে।”

বিশেষত, ফল, সবজি এবং ভোজ্য আঁশযুক্ত খাবার যেমন ‘সিরিয়াল’, শষ্যজাতীয় খাবার, ডাল, যব, সালাদ ইত্যাদি। তরল পানে তাদের উৎসাহ বাড়াতে হবে, আর পানি পানের ক্ষেত্রে গুরুত্বটা হবে সবচাইতে বেশি। দুধ অতিরিক্ত খাওয়ানো ঠিক নয়, আর ‘জাঙ্ক ফুড’ যত এড়াতে পারবেন ততই মঙ্গল।

“প্রতিদিনের খাবার একটি নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ানোর অভ্যাস থাকা উচিত। এতে খাবার হজম করার প্রক্রিয়াটা মসৃণ হবে, হজমতন্ত্রের ওপর বাড়তি ধকল যাবে না। খাবার খাওয়ার আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যেই মলত্যাগের বেগ আসবে। তাই স্কুলে যাওয়া শিশুদের সকালের নাস্তাটা আগেভাগে খাওয়ানো উচিত। এতে শৌচকাজটা ঘরেই সেরে ফেলার সময় পাওয়া যাবে। এরপরও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা চোখে পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।”

শিশুর জীবনে এই রোগের প্রভাবটা কেমন?

ডা. শ্রিরুপা দাস বলেন, “পেটে যাওয়া খাবার সঠিকভাবে ভেঙে তার পুষ্টিগুলো গ্রহণ করার জন্য এবং হজম না হওয়া খাবার শরীর থেকে বের করে দেওয়ার জন্য শক্তিশালী হজমতন্ত্রের গুরুত্ব বলে শেষ করা সম্ভব নয়।

শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সিংহভাগ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ৭০ শতাংশ আর ‘সেরোটনিন’ নামক মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনের মাত্রা ৯৫ শতাংশ নির্ভর করে এই প্রক্রিয়ার উপর।

তাই শৈশবে কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত হওয়ার পরিণাম ভয়াবহ মোড় নেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আবার মলত্যাগে অস্বস্তির আতঙ্ক শিশুর শৌচাগার ব্যবহারে ভীতি সৃষ্টি করতে পারে।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন