ভিকি সাহেব গুপ্ত এবং সাগর শিরিযোগেন্দ্র পাল নামের ওই দুই ব্যক্তিকে গুজরাতের ভুজ এলাকার একটি মন্দির থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
Published : 16 Apr 2024, 01:52 PM
মুম্বাইয়ে বলিউড তারকা সালমান খানের বাড়ির সামনে গুলি চালানোর ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আনন্দবাজার লিখেছে, ভিকি সাহেব গুপ্ত এবং সাগর শিরিযোগেন্দ্র পাল নামের ওই দুই ব্যক্তিকে গুজরাটের ভুজ এলাকার একটি মন্দির থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুজনই বিহারের বাসিন্দা।
তারা গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের দলের সদস্য বলে পুলিশের ভাষ্য।
মুম্বাই পুলিশ বলছে, ভিকি সাহেব এবং শিরিযোগেন্দ্র কয়েকদিন আগে মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলার একটি জায়গা থেকে দুটি বাইক ভাড়া নেন। এরপর সালমানের খামারবাড়ি পানভেল এলাকার ভাড়াবাড়িতে বাইক দুটো এনে রাখেন তারা। ঘটনার দিন রোববার ভোরে ওই বাইকে করেই সালমানের গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের সামনে এসে চার রাউন্ড গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান তারা, যে দৃশ্য ধরা পড়েছে সালমানের বাড়ির সিসি ক্যামেরায়।
গুলি চালানোর দায় স্বীকার করে নতুন আরেকটি হুমকি দিয়েছেন গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই।
এই গ্যাংস্টারের ভাষ্য, “এরপর গুলি আর বাড়ির সামনে হবে না। এবং সালমান নিজেকে বাঁচাতে আর কোনো সুযোগও পাবেন না।“
আনন্দবাজার লিখেছে, সোশাল মিডিয়ায় বিষ্ণোইয়ের ভাই আনমোল বিষ্ণোই একটি চিঠি পোস্ট করছেন। হুমকির ওই চিঠির নিচে লরেন্স বিষ্ণোই, গোল্ডি ব্রার, রোহিত গোদারা এবং কালা জটরি-এই চারজনের নাম দেওয়া আছে।
হিন্দিতে লেখা চিঠির বাংলা করলে দাঁড়ায়, “আমদের উপর হওয়া অত্যাচারের নিষ্পত্তি চাই। যদি তুমি সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে নামতে চাও, তাই হবে। আজ যা হয়েছে, তা শুধুই একটা ঝলক ছিল সালমান খান। যাতে তুমি বুঝতে পার, আমরা কত দূর যেতে পারি। এটাই ছিল তোমাকে দেওয়া শেষ সুযোগ।
“এরপর গুলিটা তোমার বাড়ির বাইরে চলবে না… দাউদ ও ছোটা শাকিল নামের যে দুজনকে তুমি ভগবান মানো, সেই নামের দুটি কুকুর পুষেছি বাড়িতে। বাকি বেশি কথা বলার লোক আমি নই। জয় শ্রী রাম।’’
রোববার গুলির ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরই সোশাল মিডিয়ায় ওই হুমকির চিঠি আসে।
১৯৯৮ সালে কৃষ্ণসার হরিণ শিকারে সালমানের নাম জড়িয়েছিল। এর ‘বদলা নিতে’ ২০১১ সালে ‘রেডি’ সিনেমার শুটিংয়ের মাঝে সালমান খানকে হত্যার হুমকি দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন লরেন্স বিষ্ণোই।
এরপর ২০১৮ সালে সালমানকে হত্যার জন্য বিষ্ণোই তার সহযোগী সম্পত নেহরাকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু সে সময় অস্ত্রের জটিলতায় পরিকল্পনা মাফিক কাজ সারতে পারেনি খুনিরা।
ওই ঘটনার পর ২০২২ সালে সকালে হাঁটতে বেরিয়ে হুমকির চিঠি আসে সালমন খানের হাতে। ওই চিঠিতে সালমানের বাবা সেলিম খানকে মেরে ফেলার হুমকি ছিল।
এরপর গত বছরের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে পুরনো ‘শত্রু’ কানাডাভিত্তিক এক গ্যাংস্টার গোল্ডি ব্রারের কাছ থেকে ই-মেইলে খুনের ‘হুমকি’ আসে সালমানের কাছে।
মোহিত মার্গ নামের এক ব্যক্তির মেইলে লিখেছিলেন, “গোল্ডি ভাই (গোল্ডি ব্রার) আপনার (সালামন) সঙ্গে কথা বলতে চান। এজন্য একটি সময় নির্ধারণ করতে হবে। সামনাসামনি গোল্ডি ভাই কথা বলবেন। হিসাব মেটাতে হবে।“
এবার হুমকি নয়, সালমানের বাড়ির সামনে গুলি
‘শেষবার সাবধান করছি’, সালমানকে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের হুমকি
ওই চিঠিতে বিষ্ণোইয়ের একটি সাক্ষাৎকার দেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তার দুদিন আগে কারাগারে বসে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই বলেছিলেন, ক্ষমা না চাইলে সালমান খানকে হত্যার চিন্তাভাবনা থেকে তিনি সরছেন না।
২০২১ সালে থেকে তিহার জেলে বন্দি আছেন বিষ্ণোই। তবে সে সময় পুলিশের কাছে হত্যার হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। এরপর গত বছরে শেষ নাগাদ সালমানকে হত্যায় বিষ্ণোইয়ের ছক বেরিয়ে আসে দিল্লি ও পাঞ্জাব পুলিশের তদন্তে।
সে সময় ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) জানিয়েছিল, জেলবন্দি বিষ্ণোই যে ১০ জনকে ‘খতমের তালিকা’য় রেখেছেন, তাদের মধ্যে প্রথমেই রয়েছে সালমনের নাম।
সে সময় পুলিশ জানিয়েছিল, বিষ্ণোইয়ের লোকজন সালমানকে পানভেলে তার খামারবাড়িতে হত্যার পরিকল্পনা এঁটেছিল। সেইমত তারা খামারবাড়িতে নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছিল। কিন্তু পাঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসেওয়ালা হত্যায় অন্যতম সন্দেহভাজন কপিল পণ্ডিতকে গ্রেপ্তারের পর তাকে জেরা করে পুলিশ ওই পরিকল্পনা জেনে যায়।
এরপর সালমানের নিরাপত্তা বাড়নো হয়। তা ছাড়াও এই বলিউড তারকাকে ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। কিছু দিন আগে একটি বুলেট প্রতিরোধী গাড়িও কিনেছেন সালমান।