”কিছু ব্যাংক হয়ত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলবে। কিন্তু আমরা কোনো ব্যাংক বন্ধ করে দেব না,” বলেন অর্থ উপদেষ্টা।
Published : 21 Nov 2024, 01:37 AM
ঢাকার একজন আইনজীবী শরীয়াহভিত্তিক একটি ব্যাংক থেকে ডিপিএসের বিপরীতে ঋণ নিয়েছিলেন। সেই টাকা স্থানান্তর করেন ওই শাখাতেই তার মেয়ের অ্যাকাউন্টে। প্রথম দফায় হাজার পঞ্চাশেক তুলতে পারলেও এখন আর টাকা পাচ্ছেন না।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বাসাবোর ওই শাখা থেকে অক্টোবর থেকে মাসে শুধু পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে ওই আইনজীবীকে, ব্যক্তিগত তথ্য বলে যিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি।
তিনি বলেন, জরুরি প্রয়োজনে ঋণটা নিতে হয়েছিল। অথচ গত সেপ্টেম্বরের পর সেই অর্থ তুলতেই পারছেন না। এখন মাসের ১৯ থেকে ২৩ তারিখ পাঁচ হাজার টাকার একটা চেক জমা নিচ্ছে ব্যাংক; আর টাকা দিচ্ছে ২৫ তারিখ। একজন গ্রাহককে মাসে শুধু একবারই টাকা দেওয়া হচ্ছে। ব্যবস্থাপকের সঙ্গে দেখা করেও লাভ হয়নি।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ওই আইনজীবীকে বলেছেন, “আপনারা তো জানেন সবকিছু। সবাই একসঙ্গে টাকা তুলতে আসায় এমনটি হচ্ছে। আমার কিছুই করার নেই।”
ঋণের টাকা তুলতে না পারলেও এর বিপরীতে ঠিকই সুদ গুনতে হবে ওই গ্রাহককে। এ নিয়ে ক্ষোভ ও বিরক্তির শেষ নেই তার।
ওই আইনজীবীর মত লাখো গ্রাহক এখন বেশ কয়েকটি ব্যাংক থেকে জরুরি দরকারে নিজের অর্থ তুলতে পারছেন না। এমনকি কিছু ব্যাংকার যেমন নিজের বেতনের টাকা তুলতে পারছেন না; তেমনি এসব ব্যাংকে ‘স্যালারি অ্যাকাউন্ট’ থাকা অন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরও টাকা পেতে নাজেহাল হতে হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, গ্রাহককে টাকা দিতে না পেরে প্রকাশ্যে কান্না করছেন ব্যবস্থাপক, সেই ভিডিও ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে; নিজের জমানো টাকা তুলতে না পেরে ব্যাংকে তালা দিয়েছেন গ্রাহকরা। নিজের বাসার নিচে দামি একাধিক গাড়ি ফেলে আত্মগোপনে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক – ব্যাংক খাত ঘিরে নজিরবিহীন এমন সব ঘটনার দেখা মিলেছে সাম্প্রতিক সময়ে।
বিভিন্ন ব্যাংক নিয়ে দুর্দশার একের পর এক এমন চিত্র সামনে আসতে থাকায় পুরো ব্যাংক খাত নিয়ে সব শ্রেণি পেশার গ্রাহকের মধ্যে ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক খাত নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে; সাধারণের মধ্যে ছড়িয়েছে ভীতি। ব্যাংকের শাখায় দিনের পর দিন ঘুরে টাকা না পাওয়ায় তাদের সেই ভয় ব্যাংক খাত নিয়ে আস্থাহীনতা তৈরি করেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে সরকারের পালাবদলের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকও অনেকগুলো ব্যাংকের ধুঁকতে থাকার বিষয়টি সামনে এনেছে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একের পর এক অনিয়ম, জালিয়াতি ও প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা বের করে বিদেশে পাচার করার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। এসব তথ্য প্রকাশ হতে থাকলে গ্রাহক সেসব ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এতে কিছু ব্যাংকের হাড্ডিসার খোলস বেরিয়ে আসে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে অনিয়মের জের টানছে ব্যাংক খাত। কয়েক দশক ধরে এ নিয়ে নানান আলোচনা-সমালোচনা হলেও কোনও সরকারই যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। খেলাপি ঋণ আর লুটপাটে প্রথম দিকে সরকারি মালিকানার ব্যাংক এবং পরে বেসরকারি খাতের ব্যাংক রুগ্ন হয়েছে, কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। নানা উদ্যোগ কাগজ কলমেই রয়ে গেছে, কেতাবি আলোচনা হয়েছে দিনের পর দিন; ইতিবাচক ফল আসেছি।
কতটা খারাপ?
সবশেষ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শুরু হওয়া আস্থাহীনতার জের টানতে হচ্ছে এখন পুরো খাতকে। পালাবদলের তিন মাস পরও দুর্দশাগ্রস্ত এসব ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারছেন না গ্রাহক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমনটা আর দেখা যায়নি। এতে করে ব্যাংক খাতের ভঙ্গুর অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বাইরে থেকে দৃশ্যমান এমন চিত্রের সঙ্গে ভেতরে ভেতরে ব্যাংকের নাজুক অবস্থার তথ্যও বেরিয়ে আসছে একের পর এক। তারল্য সংকটের পাশাপাশি খেলাপি ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছে অনেক ব্যাংক; মূলধন ঘাটতিতে নাজুক অবস্থায় পড়েছে আরও কিছু। এরমধ্যে কিছু ব্যাংক নির্ঝঞ্জাট থাকলেও পুরো খাতের দুর্নামের রেশ টানতে হচ্ছে। একের পর এক ব্যাংক দুর্বল হতে থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকও চাপে পড়েছে।
খারাপ অবস্থায় চলে যাওয়া ব্যাংকগুলোকে টেনে তোলার পাশাপাশি সেগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে টাকার জোগানের ব্যবস্থাও করতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। তারল্য সহায়তা দেওয়ার অংশ হিসেবে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সাতটি ব্যাংককে এবং তৃতীয় সপ্তাহে আরও দুটি ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে টাকা।
এরমধ্যে বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে লোকসানের তথ্য দিয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ ইসলামী ব্যাংক। সাম্প্রতিক কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো প্রান্তিকে লোকসানে পড়েছে ব্যাংকটি। পর্ষদের নিয়ন্ত্রণে বদল আসার পর আগের সরকারের সুবিধা পাওয়া এক্সিম ব্যাংকও সবশেষ সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে লোকসানে পড়েছে।
সবশেষ গত সোমবার ১৭ ব্যাংকের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়ে দিয়েছে মূলধন ঘাটতিতে থাকা কোনো ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পারবে না। নিয়ম অনুযায়ী কোনো ব্যাংকে মূলধন ঘাটতি থাকলে লভ্যাংশ দেওয়ার নিয়ম নেই।
ওই বৈঠকে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বলে খবরে এসেছে। ব্যাংকগুলোর বেশির ভাগ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। এগুলোর শেয়ারের বিনিয়োগকারীরা পড়েছেন বেকায়দায়।
ক্ষমতার পালাবদলের ডামাডোলের মধ্যে ব্যাংক বাঁচানোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে গত তিন মাসে অনেকগুলো ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে নতুন করে গড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগীদের সরিয়ে পুরনো অংশীদার বা উদ্যোক্তাদের ব্যাংকের পরিচালনায় ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অনেক স্বতন্ত্র পরিচালকদের।
আগের সরকারের সুবিধাভোগী অনেক ব্যাংক উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন। অনেকে বিদেশে পালিয়ে গেছেন, কেউ কেউ আত্মগোপনে রয়েছেন। এমনকি কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যবস্থাপনার শীর্ষস্থানীয় পদে দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তাদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়া ও আত্মগোপন বা পলাতক থাকার খবরও এসেছে; তারা সেই থেকে কর্মস্থলে যাওয়া বন্ধ কর দিয়েছেন।
ব্যাংকার ও বিশ্লেষকরা বলছেন, নামিদামিসহ এক সময় গ্রাহকদের মধ্যে ভালো সাড়া ফেলা অনেকগুলো ব্যাংকসহ নতুন কিছু ব্যাংকের ভেতরের আর্থিক অবস্থা ভঙ্গুর হওয়ার এসব তথ্য ও ঘটনাবলীতেই ফুটে ওঠে ব্যাংক খাতের বর্তমান অবস্থার চিত্র।
তারা বলছেন, দেশের প্রধান এ আর্থিক খাতের অবস্থা নিরূপণ করতে গেলে দেখা যাবে খাতটির বেশির ভাগ সূচক ভালো অবস্থানে নেই।
খেলাপি ঋণ, তারল্য সংকট, মূলধন ঘাটতি-এ তিন সূচক বিশ্লেষণ করলে খারাপ অবস্থানে থাকার ইঙ্গিতই মিলছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে সব শ্রেণি পেশার মানুষের আস্থাহীনতা, এটিই ব্যাংক খাতের দুর্দাশার চিত্রকে সবচেয়ে বেশি ফুটিয়ে তুলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুরও গত ১১ নভেম্বর রাজধানীতে অর্থনীতির এক অনুষ্ঠানে ব্যাংক খাতের দুরাবস্থার চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, “একটি ব্যাংক থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকা যদি এক পরিবার নিয়ে যায়, তাহলে সেই ব্যাংকের কী থাকে? এসব ক্ষেত্রে নতুন কিছু করতে হবে।”
আর্থিক খাতের দুর্বলতার ছাপ দেশের অর্থনীতিতে পড়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আগের সরকারের লুটপাট আর টাকা পাচারের ফল ভোগ করতে হচ্ছে এখন। এই দুরবস্থা থেকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
“অতীতের জের টানা ও সংশোধনমূলক কাজ করতে হচ্ছে আমাদের।”
ব্যাংক খাতের পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি।
কেমন চলছে ব্যাংক খাত: বোঝা যাবে কেমনে?
চলতি বছর বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর সার্বিক অবস্থা মূল্যায়নে ‘ব্যাংকস হেলথ ইনডেক্স (বিএইচআই) অ্যান্ড হিট ম্যাপ' শীর্ষক প্রতিবেদন তৈরি করে। এতে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংকসহ নয়টি ব্যাংক ‘রেড’ জোনে রয়েছে, যা ব্যাংকগুলোর ভঙ্গুর আর্থিক দশাকে সামনে এনেছে।
এ প্রতিবেদনে ‘ইয়েলো’ জোনে আছে ২৯টি ব্যাংক এবং ‘গ্রিন’ জোনে আছে ১৬টি ব্যাংক।
পূবালি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মাদ আলী মনে করেন, ব্যাংকের অবস্থা খারাপ না কি ভালো তা কয়েকটি সূচকের মাধ্যমে যাচাই করা যায়। ব্যাংকের সার্বিক তারল্য অবস্থা কোন অবস্থানে রয়েছে সেটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সূচক।
“ব্যাংকটিতে পর্যাপ্ত নগদ টাকার সরবরাহ রয়েছে কি না সেই বিষয় দেখতে হবে। গ্রাহকদের নগদ টাকা দেওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সিআরআর-এসএলআর মেইনটেইন করতে পারছে কি না সেই বিষয়গুলোর সূচকই বলে দেয় সেই ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে।”
আবার ব্যাংকে আমানতের হার ভালো হলে সেই ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা তুলনামূলক ভালো বলেও তিনি মনে করেন। তার মতে, আমানত বাড়লে সেই ব্যাংকের ওপর গ্রাহকদের আস্থা বেশি থাকে।
তার ভাষ্য, ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ত ও প্রভিশন সঠিকভাবে সংরক্ষণ রাখতে পারার বিষয়টিকে ব্যাংকের অবস্থার ‘প্যারামিটার’ হিসেবে ধরা হয়।
খেলাপি ঋণের পরিমাণকে অন্যতম একটি সূচক হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকলে ব্যাংকের পর্যাপ্ত মূলধনে টান পড়বে ও প্রভিশন সঠিকভাবে রাখতে পারবে না।
একটি ব্যাংকের সামগ্রিক অবস্থা পরিমাপে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত ‘ক্যামেলস রেটিং’ করে থাকে।
ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততা, সম্পদের মান, ব্যবস্থাপনা, উপার্জন ক্ষমতা, তারল্য প্রবাহ ও বাজার ঝুঁকির প্রতি সংবেদনশীলতা- এই ছয় সূচকের অবস্থার ভিত্তিতে এ রেটিং করা হয়।
এটি গোপনীয় প্রতিবেদন হওয়ায় তা প্রকাশ করা হয় না। তবে গত কয়েক বছর ধরে এ তালিকায় খারাপ ব্যাংকের সংখ্যা ১০ থেকে ১২টি বলে খবরে এসেছে। অন্যগুলোর মধ্যে ৮ থেকে ৯টির অবস্থা ‘মোটামুটি ভালো’ এবং বাকিগুলোর অবস্থা ‘সন্তোষজনক’।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্যাংক খাতের বর্তমান যে অবস্থা তাতে ক্যামেলস রেটিংয়ে খারাপ ব্যাংকের সংখ্যা আরও বাড়বে সামনে।
ইতিহাসের সর্বোচ্চে খেলাপি ঋণ
একের পর এক নানা অনিয়ম ও জালিয়াতি করে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা বের করে নিয়ে গিয়ে ফেরত না দেওয়ায় ব্যাংক খাতে যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন খেলাপি ঋণ বেশি। বিভিন্ন খবর বলছে, ব্যাংকের টাকা শুধু যে ফেরেনি তা নয়, বড় অঙ্ক পাচারও হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকা, যা আগের তিন মাসের তুলনায় আড়াই গুণেরও বেশি। মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। এটি বিতরণ করা ঋণের ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। জুন শেষে যা ছিল ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের পরিমাণ রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বেশি।
বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতির মত বড় রকমের সমস্যা রয়েছে। বড় বড় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গ্রুপ এসব ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আর ফেরত দেননি। তাতে এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়েছে।
“রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাংকগুলোতে দুই ধরনের বড় রকমের সমস্যা রয়েছে। মূলধন ঘাটতি ও খেলাপি ঋণ। এসব ব্যাংকের তারল্যে প্রভাব পড়ে না কারণ এগুলো রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাংক। তবে এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে ৫০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ এসব ব্যাংকে।”
অপরদিকে বেসরকারি ব্যাংকে মোট খেলাপির পরিমাণ ৯৯ হাজার ৯২১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
ব্যাংকাররা বলছেন, ৬০টির অধিক ব্যাংকের মধ্যে হাতে গোনা ১০-১২টি ব্যাংক শক্তিশালী অবস্থানে থাকলেও বেশির ভাগ ব্যাংক হয় খেলাপি ঋণ কিংবা তারল্য সংকটে ভুগছে। আবার চরম মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে কোনো কোনো ব্যাংক।
মূলধন ঘাটতি চরমে
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে- অগ্রণী, জনতা, বেসিক ও রূপালী ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে কৃষি ও রাজশাহী কৃষি ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে মূলধন ঘাটতিতে জর্জরিত।
মূলধন ঘাটতি নিয়ে চলা বেসরকারি ব্যাংকের তালিকাও লম্বা। এগুলোও নিয়ম নীতিকে নানাভাবে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাড় নিয়ে মূলধন ঘাটতি পূরণ করা ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, বছরের পর বছর কোনো রকম মূলধন ছাড়াই সরকারি মালিকানার অধিকাংশ ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনা করছে। সংকট থেকে মুক্তি পেতে এর আগে দফায় দফায় ব্যাংকগুলোকে হাজার হাজার কোটি টাকার মূলধন যোগান দেওয়া হয়েছিল। সাধারণ মানুষের করের টাকায় এ মূলধন দিয়েছিল সরকার। এরপরও মূলধন স্বল্পতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি এসব ব্যাংক। পরে এ তালিকায় একে একে যুক্ত হয়েছে অনেক বেসিরকারি ব্যাংক।
খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণেই মূলধন ঘাটতি বেশি হয়। কেননা খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে ব্যাংকের প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হয় বেশি। তখন ব্যাংকগুলোর মূলধনে টান পড়ে। অতিরিক্ত প্রভিশন রাখতে গিয়ে অনেক ব্যাংক প্রয়োজনীয় মূলধন রাখতে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।
তারল্য সংকট
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকখাতে বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা তারল্য সংকট। মূলত এ সমস্যা প্রকট আকারে ধারণ করেছে ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে।
বিশেষ করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকগুলো থেকে টাকা বের হয়ে যাওয়াই এর মূলে। গ্রাহকদের নিয়মিত টাকা ফেরত দিতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে এসব ব্যাংক।
সরকার বদলের আগে এগুলোকে বিশেষ ব্যবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক নগদ অর্থ সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে। সরকার পতনের পর এসব শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকসহ আরও অনেকগুলো ব্যাংক গ্রাহকদের দিনের পর দিন টাকা দিতে পারছে না।
বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় গ্রাহক অসন্তোষ, বিক্ষোভ, ব্যাংকারদের নাজেহাল হওয়ার খবর এসেছে। গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে না পেরে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) আগারগাঁও শাখা ম্যানেজারের কান্নাকাটির ভিডিও ছড়িয়েছে ইন্টারনেটে।
কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না: অর্থ উপদেষ্টা
জুলাই-সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ বাড়ল ৭৪ হাজার কোটি টাকা
পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এগুলোকে সংকট থেকে উত্তরণে বিশেষ ব্যবস্থায় নিজে গ্যারান্টার হয়ে অন্য ব্যাংক থেকে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করে। কয়েক দফায় এসব ব্যাংককে টাকা সরবরাহ করে পরিস্থিতি ভালো করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এখনও সবাই চাহিদা অনুযায়ী টাকা পাচ্ছেন না; এমনকি ব্যাংকারসহ অন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও বেতনের টাকা তুলতে পারছেন না।
এসব ব্যাংকের দেশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শাখাগুলোতে আমানতও আসছে না।
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর এখন যে অবস্থা তা খারাপ বললেও কম বলা হবে। এসব ব্যাংককে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছে।”
মূলত সরকার পতনের পর ব্যাংকগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন ভীতি সঞ্চার হয়েছিল জনমনে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও সাইফুল আলমের (এস আলম) নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম ও টাকা পাচারের কথা তুলে ধরে সেগুলোর দুর্দশার প্রকট চিত্র সামনে আনা হয়। সরকার পতনের শেষ সময়ে এস আলম গ্রুপ ব্যাপক টাকা তোলার চেষ্টাও চালায়।
এতে গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এসব ব্যাংক যেকোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমন গুজব ও গুঞ্জনে তারা ঢালাওভাবে আমানত তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালালে ব্যাংকগুলো টাকা দিতে ব্যর্থ হয়।
মূল্যস্ফীতির চাপে হাতে থাকছে না টাকা, ব্যাংক আমানতের প্রবৃদ্ধিতেও
দুর্বল সাত ব্যাংক পেল সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা
তবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে এসে মাসে ব্যাংক খাতের বাইরে চলে যাওয়া টাকা কিছুটা ফিরতে শুরু করে। গ্রাহক দুর্বল ব্যাংক থেকে টাকা তুলে অন্য ব্যাংকে যেমন টাকা রাখছিলেন, তেমনি নিজের কাছে নগদ টাকা বেশিদিন রাখার ঝুঁকিও নিতে চাইছিলেন না। যেসব কারণে অক্টোবরে সোয়া চার হাজার কোটি টাকা ফেরত এসেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে।
এটি ব্যাংকখাতের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তিনি বলেন, ফেরত আসার কারণ হচ্ছে কিছুটা আস্থা বাড়ছে।
গ্রাহক আস্থা তলানিতে
দেশের ব্যাংকগুলো নিয়ে নানা খবরে বিভ্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাংলাদেশি স্বজনকে পাঠান ঢাকায় তার ব্যাংক হিসাব থাকা ব্যাংকের শাখায় খোঁজখবর নিতে। ওই শাখায় ২০ বছরের বেশি সময় ধরে তার হিসাবে ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়ারা প্রতি মাসের ভাড়া জমা দেন। সেই অর্থ খুব একটা তোলা হয় না তার; জমতে জমতে তা বড় অঙ্ক দাঁড়িয়েছে। এ কারণে দুশ্চিন্তাও বেশি।
শাখা ব্যবস্থাপক ওই স্বজনকে পরিস্থিতি তুলে ধরে সব টাকা একেবারে দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান। প্রবাসী সেই অ্যাকাউন্টধারীর সঙ্গে কয়েক দফায় কথা বলে বোঝাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে সপ্তাহে ৫০ হাজার টাকার মত দেওয়ার আশ্বাস দেন।
এমন অবস্থায় ওই প্রবাসী ওই ব্যাংকে ভরসা পাচ্ছিলেন না বলে টাকা তুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। এখন কোনো সপ্তাহে টাকা তুলতে পারছেন, কোনো সপ্তাহে পারছেন না। এভাবে দুই মাস ধরে সেখান থেকে টাকা তুলে অন্য ব্যাংকে গিয়ে রাখছেন।
তার মত অনেক গ্রাহকের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হওয়ায় তারা এক ব্যাংক থেকে টাকা তুলে অন্যখানে রাখছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে তা উঠে আসায় এ প্রবণতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা।
সংবাদ সম্মেলন করে গত ৬ নভেম্বর তিনি বলেন, “সব গ্রাহক একসঙ্গে এখন ব্যাংকে যাচ্ছেন, তাই টাকা পাচ্ছেন না। আগের চাইতে এখন ব্যাংকে অনেক বেশি সংখ্যক গ্রাহক টাকা উত্তোলন করতে যান। বাংলাদেশ ব্যাংক আস্থার জায়গা তৈরি করতে চায়। আমানতকারীদের আস্থা ধরে রাখার বিষয়ে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও দায়িত্ব রয়েছে।”
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো বিশেষ করে এস আলমের মালিকানায় থাকা ব্যাংকগুলোর গ্রাহকরা বেশি ভুগছেন। সঙ্গে যোগ হয়েছে অনিয়মের কারণে দুর্বল হয়ে পড়া আরও কয়েকটি ব্যাংক।
এসব ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থাকা শাখা থেকে গত সপ্তাহে ১০ হাজার টাকার বেশি তোলা যায়নি। অন্য শাখা থেকে টাকা দেওয়া এখনও বন্ধ।
এ পরিস্থিতি চার মাসে গড়ানোর কারণে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।
সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক আব্দুর রহিম বৃহস্পতিবার বলছিলেন, গত সপ্তাহজুড়ে ঘুরেও ৩০ হাজার টাকা তুলতে পারেননি তিনি। তার অ্যাকাউন্ট দোহার শাখায়। সেখানে গেলে টাকা না থাকায় মতিঝিল শাখায় যেতে বলা হয়।
বিনিয়োগ সরছে ট্রেজারি বন্ডে, ব্যাংক আমানতে 'ভাটা'
সিলেটে টাকা না পেয়ে ব্যাংকে তালা, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
“এখন এ শাখায় এসেও টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ তারা বলছেন যে শাখায় খোলা হয়েছে সেই শাখা ছাড়া টাকা দেওয়া হবে না। আমার রোগী হাসপাতালে ভর্তি। এখন আমি টাকা পাব কোথায়। নিজের টাকা পেতে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হবে কেন।"
ব্যাংকটির দিলকুশার প্রিন্সিপাল শাখার ব্যবস্থাপক মো. মোতাল্লেব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নগদ টাকা উত্তোলন হচ্ছে বেশি। আমানত জমা পড়ছে কম। এতে নগদ টাকার সংকট তৈরি হয়েছে।
সব ব্যাংকই একই কাতারে নয়
সূচকগুলোর সার্বিক বিচারে ব্যাংকসহ পুরো আর্থিক খাতের দুর্বলতার চিত্র প্রকট আকারে দেখা দিলেও সব ব্যাংক যে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে তা নয়। অন্যগুলোর দুরবস্থার জের টানতে হলেও সেগুলো ভালো অবস্থায় রয়েছে। দেশে বর্তমানে কার্যক্রমে থাকা ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে সেগুলোর সংখ্যা হাতে গোনা।
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, অতি সরলীকরণের সুযোগ নেই যে পুরো খাতের অবস্থাই খারাপ। বরং ব্যাংক খাতের বড় একটি অংশ বড় রকমের সমস্যার মধ্যে রয়েছে।
তবে ব্যাংকাররা বলছেন, বাড়তে থাকা আমানতের সুদহার এবং ঋণের হার বাড়তে থাকায় সেগুলোর ব্যবসাও চাপে পড়েছে। আমানত পেতে বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে। অথচ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির বিবেচনায় বিনিয়োগ কমায় উদ্যোক্তা ও শিল্প কারখানা থেকে ঋণের চাহিদা কমে গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে ভালো ব্যাংকেও। এতে আয় কমেছে অনেক ব্যাংকের।
ডলার বাজারে অস্থিরতা, উচ্চ সুদহার
দুই বছরের বেশি সময় ধরে মুদ্রা বাজারের অস্থিরতা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কিছুটা কমে এলেও বৈদেশিক লেনদেনের প্রধান মুদ্রা ডলারের দর এখনও চড়া। চাহিদা অনুযায়ী ডলার এখনও মিলছে না। ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা যেমন পাচ্ছেন না, তেমনি সরকারও তার বকেয়া পরিশোধে ডলার সংকটের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে।
এতে ব্যবসা কমে যাওয়াসহ ব্যাংকগুলোকে ঘিরে নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বেশ কিছু দিন ধরে। পুরো খাতেই এর প্রভাব পড়েছে।
এক ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আরেকটিতে রাখা বন্ধ করতে হবে: মুখপাত্র
ব্যাংক খাতের উন্নয়নে তিন টাস্কফোর্স গঠনের 'সিদ্ধান্ত'
চলতি বছর মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করলে ডলারের দর এক লাফে ৭ টাকা বেড়ে ১১৭ টাকা হয়। ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দর বাড়ায় রেমিটেন্স আসাও বাড়ছে। অগাস্ট থেকে অক্টোবর টানা তিন মাস দুই বিলিয়নের ওপর রেমিটেন্স এসেছে। ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে প্রবাসীদের আস্থা কিছুটা ফিরছে। তবে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোতে রেমিটেন্সের জোয়ারে ভাটা পড়েছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান রেমিটেন্স বাড়তে থাকার প্রবণতাকে পুরো খাতের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। ব্যাংক খাতে যে অনাস্থা তৈরি হয়েছিল সেটাও ধীরে ধীরে কাটছে বলে মনে করছেন। তবে অনেক জায়গায় জরুরিভিত্তিতে সংস্কারের তাগাদা দিয়েছেন।
সংকট কাটবে কীভাবে
দীর্ঘদিন থেকে নানা সমস্যা-সংকুলতার মধ্য দিয়ে যাওয়া ব্যাংক খাতের সমস্যার সমাধানে নানা পদক্ষেপের কথা বলে আসছে আগের সরকারগুলো। সংস্কার কমিশন, টাস্কফোর্স গঠনসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা খারাপের দিকেই গেছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকে চেয়ারম্যান হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করা অর্থনীতিবিদ ও গবেষক জায়েদ বখত বলেন, ব্যাংক খাতের দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠা একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। সেই মোতাবেক পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ একটি বড় সমস্যা। ঋণ নিয়ে যারা আর ফেরত দেননি তাদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাদের কাছ থেকে যত দ্রুত সম্ভব টাকা আদায় করতে হবে।
তার ভাষ্য, এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন মোতাবেক যেসব ব্যাংকে যত রকম সমস্যা রয়েছে তা সমাধান করতে হবে। সরকারের উচিত বাংলাদেশ ব্যাংক যদি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে সেজন্য তাদের পূর্ণ সহায়তা করা।
কয়েকটি ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে ভোগান্তি
ব্যাংক, পুঁজিবাজার ও রাজস্ব খাতের সংস্কার সবার আগে: অর্থ উপদেষ্টা
”কারণ আগে আমরা দেখেছি বাংলাদেশ ব্যাংক নানা কারণে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম হতেন না।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের দীর্ঘদিনের দুর্দশা কাটাতে টাস্কফোর্স গঠন করেছে। ব্যাংক কমিশন গঠন করার কথাও বলেছে।
অর্থ উপদেষ্টা ও সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও অনিয়মের কারণে অনেকগুলো ব্যাংকে সমস্যা দেখা দিলেও কোনোটি বন্ধ হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন।
তিনি বলেন, “আমরা এখন সিমটম দেখে সংস্কারের পদক্ষেপ নিচ্ছি। ম্যানেজমেন্ট খারাপ ছিল, গভর্নেন্স করাপ্ট ছিল। কতগুলো ব্যাংক ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ইসলামী ব্যাংক দেশের বিগেস্ট ব্যাংক, এটা কিন্তু ফিরে আসার পথে। কিছু ব্যাংক হয়ত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলবে। কিন্তু আমরা কোনো ব্যাংক বন্ধ করে দেব না।
“আমরা একটি পায়ের ছাপ রেখে যাব। আমরা এমন জায়গা দিয়ে হাঁটব, যেখানে রাস্তা তৈরির দিক নির্দেশ করবে। আমরা কিছু সংস্কার করে যাব।”