সিটিজেনস ব্যাংকের এমডি ও সিইও মোহাম্মদ মাসুম বলেন, “মাস শেষে বাড়তি টাকা থাকলে তখন মানুষ সঞ্চয় করে। তবে জিনিসপত্রের এত দাম যে, মাস শেষে আর বাড়তি টাকা থাকে না।”
Published : 19 Nov 2024, 04:21 PM
গত বছরের তুলনায় চলতি বছর সেপ্টেম্বরে ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমেছে।
আগের বছর একই মাসে এই প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ হলেও এবার তা ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ।
অর্থাৎ, গতবছরের তুলনায় এ বছর সেপ্টেম্বরে আমানত কমার হার ২ দশমিক ২৪ শতাংশ পয়েন্ট।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছর সেপ্টেম্বরে ব্যাংক খাতে আমানত দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা।
গতবছর একই সময় আমানতের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ডিমান্ড ডিপোজিট ও টাইম ডিপোজিট- দুই ধরণের আমানতেই প্রবৃদ্ধি কমেছে।
ডিমান্ড ডিপোজিটে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ, যা গতবছর ছিল ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ।
আর টাইম ডিপোজিটে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ।
সিটিজেনস ব্যাংকের এমডি ও সিইও মোহাম্মদ মাসুম মনে করেন, আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পেছনে দুইটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, তখনই আমানত ব্যাংকে আসে যখন মাস শেষে মানুষের হাতে উদ্বৃত্ত টাকা থাকে। আড়াই বছর ধরে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে মাস শেষে মানুষের হাতে উদ্বৃত্ত টাকা থাকছে না।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মাস শেষে বাড়তি টাকা থাকলে তখন মানুষ সঞ্চয় করে। তবে জিনিসপত্রের এত দাম যে, মাস শেষে আর বাড়তি টাকা থাকে না। তাই আমানতের প্রবৃদ্ধি কমেছে।”
আস্থাহীনতার কারণে মানুষ এখন ব্যাংকে টাকা রাখতে সাহস পাচ্ছে না। একে আমানত কমার দ্বিতীয় কারণ হিসেবে দেখছেন তিনি।
মাসুম বলেন, “ব্যাংক নিয়ে আস্থার অভাব রয়েছে জনমনে। কোনো খাত নিয়ে আস্থার সংকট তৈরি হলে সেখানে টাকা আসবে কম। এজন্য আমানতের প্রবৃদ্ধি কমেছে।”
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় ধীরে ধীরে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থা ফিরছে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মঙ্গলবার যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের একেবারে কাছে ছিল।
চলতি বছর সেপ্টেম্বরে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ; যা গতবছর সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ ছিল।
দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি অক্টোবরে আবার বেড়ে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছায়।
পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
পূবালী ব্যাংকের এমডি ও সিইও মোহাম্মদ আলীও মনে করেন, আস্থাহীনতার কারণে ব্যাংক খাত থেকে আমানত তুলে নিয়েছেন গ্রাহকরা। আর উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে মানুষের সঞ্চয় কমিয়ে দিয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, “আমানত প্রবৃদ্ধি চলতি বছর সেপ্টেম্বরে যা এসেছে তার চেয়ে ২-১ শতাংশ বেশি হতে পারত। প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে তাতে বোঝা যায়, এ খাত নিয়ে আস্থার এক ধরণের অভাব রয়েছে। আর উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মাস শেষে সঞ্চয় করা গ্রাহকদের জন্য কষ্টকর হচ্ছে।”
বিনিয়োগ সরছে ট্রেজারি বন্ডে, ব্যাংক আমানতে 'ভাটা