মামলায় ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
Published : 09 Mar 2025, 03:01 PM
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ডাকাত সন্দেহে 'গণপিটুনিতে' দুই জামায়াত কর্মী নিহতের ঘটনায় ৪৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
নিহত আবু সালেকের স্ত্রী সুরমি আক্তার বাদী হয়ে রোববার মামলাটি করেছেন বলে সাতকানিয়া থানার ওসি জাহেদুল ইসলাম জানিয়েছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মামলায় ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০/১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।"
মামলার এজাহারে আসামিরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এছাড়া হত্যায় পরিকল্পনাকারী হিসেবে এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিককের নাম দেওয়া হয়েছে মামলায়।
নিহত নেজাম ও সালেককে নিজেদের কর্মী দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামী সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের সেক্রেটারি জায়েদ হোসেন।
এজাহারে সুরমি আক্তার তার স্বামী মো. সালেককে জামায়াত ইসলামীর কর্মী হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং তাকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের 'সম্মুখ সারির যোদ্ধা' হিসেবেও তুলে ধরেছেন। আরো বলা হয়েছে, সালেক এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিচার শালিসও করতেন তিনি।
আর স্থানীয়দের ভাষ্য, গত সরকারের আমলে দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকা নেজাম ৫ অগাস্ট পরবর্তী সময়ে দেশে আসেন। কাঞ্চনা ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেন তিনি। এওচিয়ার সাবেক এক চেয়ারম্যানের মাছের খামার ও ইটভাটা লুটের অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে।
এর আগে পুলিশ জানিয়েছিলেন, গত ৩ মার্চ কাঞ্চনা ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. নেজাম উদ্দিন ও আবু সালেক অটোরিকশা নিয়ে ছনখোলা চূড়ামনি গ্রামে গেলে সেখানে মাইকে ডাকাত ঘোষণা দেওয়া হয়। এলাকাবাসী তাদের ঘিরে গণপিটুনি দিলে দুজনের মৃত্যু হয়।
নিহতদের একজনের কাছ থেকে একটি পিস্তল ও ছয়টি ব্যবহৃত গুলির খোসা পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছিল পুলিশ।
উদ্ধার করা পিস্তলটি সিএমপির কোতোয়ালী থানা থেকে লুট হওয়া পুলিশের অস্ত্র বলে জানিয়েছিলেন চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সনতু।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ছনখোলা এলাকায় আবদুর নূর নামে এক ব্যক্তির অটোরিকশায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার বিচারের দায়িত্ব সালেক ও নেজামকে দেওয়া হলে গত ২২ ফেব্রুয়ারি তারা একটি সালিশ করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করেন এবং সাত লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে দেন।
কিন্তু ওই বিচারে রিকশার মালিক নুর সন্তুষ্ট না হওয়ায় ৩ মার্চ রাতে ছনখোলায় ফের বিষয়টি নিয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়।
মামলায় বলা হয়, “৫ নম্বর আসামি নজরুল ইসলাম মানিকের 'পরিকল্পনায়' হারুন, মমতাজ, কামরুল, আজিজুল ও মাহমুদুল হক অটোরিবশা পোড়ানোর অভিযুক্তদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে দেওয়ার কথা বলে ঘটনাস্থলে যেতে বলেন। এ প্রেক্ষিতে সালেক ও নেজাম তাদের আর কিছু সহযোগীসহ ১১ জন অটোরিকশা নিয়ে ঘটনার দিন ছনখোলা যান।
“টাকা আদায়ের বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় আসামিরা নেজামকে মারধর শুরু করে, সালেক তাকে উদ্ধার করতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে মসজিদের মাইকে 'ডাকাত পড়ার' কথা ঘোষণা দিলে এলাকাবাসী জড়ো হয় এবং পরিকল্পিত ভাবে মারধর করে হত্যা করা হয়।"
নিহত সালেকের বিরুদ্ধে দুইটি হত্যাসহ পাঁচটি মামলা থাকার তথ্য দিয়েছে পুলিশ।
পুরানো খবর:
সাতকানিয়ায় গণপিটুনি: উদ্ধার হওয়া অস্ত্রটি সিএমপি'র কোতোয়ালী থানা
সাতকানিয়ায় গণপিটুনি: নিহতদের ঘটনাস্থলে যাওয়ার কারণ খুঁজছে পুলিশ
সাতকানিয়ায় গণপিটুনি: নিহত দুজনকে নিজেদের কর্মী দাবি জামায়াতের