এসপি বলেন, “আমাদের পুলিশের অনেক অস্ত্র খোয়া গেছে। এ অস্ত্রগুলো কীভাবে কাদের কাছে গেল, সেগুলো অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়।”
Published : 06 Mar 2025, 02:45 PM
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ‘গণপিটুনিতে’ জামায়াতের দুই কর্মী হত্যার পর ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া পিস্তলটি নগরীর কোতোয়ালী থানা থেকে লুট হওয়া পুলিশের অস্ত্র বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সনতু।
তিনি বলেছেন, “সেখানে একই ধরনের আরও অনেক অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। পুলিশের অনেক অস্ত্র খোয়া গেছে। এ অস্ত্রগুলো কীভাবে কাদের কাছে গেল, সেগুলো অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে।”
সোমবার রাতে সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা চূড়ামনি গ্রামে ‘ডাকাত সন্দেহে’ দুই জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিল পাঁচজন।
নিহতরা হলেন- পাশের কাঞ্চনা ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. নেজাম উদ্দিন ও আবু সালেক; যাদেরকে নিজেদের কর্মী দাবি করে জামায়াত ইসলামী বলছে, হত্যাকাণ্ডটি ছিল ‘পরিকল্পিত’।
পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আধিপত্য বিস্তারে অভ্যন্তরীণ বিরোধে খুন হয় নেজাম ও সালেক। ঘটনার দিন তারা সাতটি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে সেখানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের অস্ত্র প্রদর্শন করেছিলেন।”
ঘটনার দিনসহ নিহতরা সেখানে গত তিন মাসে নয়বার গিয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা চাঁদার জন্য নিয়মিত সেখানে যেতেন বলে পুলিশ তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে। চার-পাঁচ দিন আগেও তারা সেখানে গিয়ে এক মেম্বারের স্ত্রীকে থাপ্পড় মেরেছিলেন; যার কারণে জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।”
সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি জায়েদ হোসেন মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিহত দুজনই ওই এলাকার পরিচিত ব্যক্তি। তাদের না চিনে গণপিটুন দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। সালিশী বিচারের নামে ফন্দি করে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।”
জামায়াত নেতা জায়েদের ভাষ্য, ফ্যাসিস্টদের চক্রান্তে জেনেশুনে এ হত্যাকাণ্ড ঘটনানো হয়েছে। মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা কাউকে সেখানে যেতে দেয়নি। সড়কে গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়েছিল। পরে মারধর করে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর মাইকে ডাকাত হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সনতু বলেন, “অনেকেই অনেক রাজনৈতিক কথা বলছেন। বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের কোনো ব্যক্তি বা চেয়ারম্যানের উপস্থিতি ছিল কি না… আসলে আমরা কিন্তু এ ধরনের কোনো ব্যক্তি বা চেয়ারম্যানের উপস্থিতি খুঁজে পাইনি। এমনকি সেখানে তাদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের শক্ত অবস্থানও আমরা খুঁজে পাইনি।
পুলিশ সুপারের ভাষ্য, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সদস্যদের ধরতে পুলিশ নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। সেখানে তাদের থাকার কোনো সুযোগ নেই।
‘ঘটনার দিন গুলি ছুঁড়েছিল নেজাম’
পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার দিন নেজাম সেখানে গিয়ে অস্ত্র ওপেন করেছিল। হত্যাকাণ্ডের পর সেখান থেকে যে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছিল, সেটি সিএমপি’র কোতোয়ালী থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র। সেখানে অনেক অস্ত্র প্রদর্শিত হয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছিল, সব একই ধরনের পিস্তল।
“আমাদের পুলিশের অনেক অস্ত্র খোয়া গেছে। এ অস্ত্রগুলো কীভাবে কাদের কাছে গেল, সেগুলো অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। এগুলো আমাদের খুঁজতে হচ্ছে এবং এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
পুলিশ সুপার বলেন, “কোনো অবস্থাতে ভাবার সুযোগ নেই- প্রশাসন নির্বিকার হয়ে গেছে। আমরা আমাদের মত প্রকৃত সত্য ঘটনা উদঘাটনের জন্য যা কিছু দরকার, সবগুলো করব। সেজন্য একটু সময় নিচ্ছি। প্রকৃত ঘটনা কী, সেটা আমাদের উদঘাটন করা দরকার।”
মামলা হয়নি তিন দিনেও
এদিকে হত্যাকাণ্ডের তিন দিনেও কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় দুইটি পক্ষ আছে।
“একটা পক্ষ যারা আহত হয়েছেন এবং আরেকটি পক্ষ যারা মারা গেছে। কোনো পক্ষ থেকেই কোনো মামলা হয়নি। যেহেতু সেখানে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, সিআরপিসি ও পিআরবি অনুযায়ী পুলিশের পক্ষ থেকে একটি অস্ত্র মামলা করা হয়েছে।”
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, বিগত সরকারের আমলে দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকা নেজাম ৫ অগাস্ট পরবর্তী সময়ে দেশে আসেন। সাতকানিয়ার কাঞ্চনা ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন তিনি। এওচিয়ার সাবেক এক চেয়ারম্যানের মাছের খামার ও ইটভাটা লুটের অভিযোগও আছে নেজামের বিরুদ্ধে।
এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে দখল-বেদখলের সঙ্গে জড়িত ছিল বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ।
স্থানীয়দের ভাষ্য, ঘটনার দিন কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে নেজাম ও সালেক দলবল নিয়ে সোমবার রাতে ছনখোলা গ্রামে প্রবেশ করে। এসময় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায় এবং মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
ঘটনার পর সাতকানিয়ার ওসি জাহেদুল ইসলামও জানিয়েছিলেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশা, একটি পিস্তল ও আট রাউন্ড গুলির খোসা জব্দ করেছেন তারা।
নিহত সালেকের বিরুদ্ধে দুইটি হত্যা, বিস্ফোরকসহ পাঁচটি ও নেজামের বিরুদ্ধে একটি মামলা আছে বলে পুলিশের ভাষ্য।
সাতকানিয়ায় গণপিটুনি: নিহতদের ঘটনাস্থলে যাওয়ার কারণ খুঁজছে পুলিশ
সাতকানিয়ায় গণপিটুনি: নিহত দুজনকে নিজেদের কর্মী দাবি জামায়াতের