সবার আগে জননিরাপত্তা– এই ভাবনা প্রাধান্য দিয়ে সরকার-প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে সামাজিক শক্তির মেলবন্ধন অত্যন্ত জরুরি এ কথাও বলা হয়েছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিনির্ধারকদের সক্রিয়তাও অত্যন্ত প্রয়োজন।
Published : 05 Mar 2025, 04:19 PM
জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে মানবাধিকারে আঘাত লাগে তা অনস্বীকার্য। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এ সরকারের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অর্থাৎ জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খুন-ডাকাতি-ছিনতাইসহ বহুমাত্রিক দুষ্কর্মের পরিসর ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক সরকারের শাসনামলে যে বিষয়গুলো ক্ষতের ওপর ক্ষত সৃষ্টি করছিল এর অন্যতম জননিরাপত্তাহীনতা। জুলাই-অগাস্টের অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনকালে অন্তত এর পুনরাবৃত্তি হবে না। কিন্তু এই প্রত্যাশা হোঁচট খেয়েছে। 'মব জাস্টিস' বাড়তে থাকল এবং তা সঙ্গত কারণেই নানা প্রশ্নও দাঁড়াল। ৫ অগাস্টের পর বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের অনেকের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে এবং বিএনপি তাদের নেতাকর্মী অনেককে বহিষ্কার করে দুর্নাম ঘোচানোর পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু সুফল মেলেনি বহু ক্ষেত্রেই।
অপরাধের লাগাম টানতে শুরু হয় যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান ‘ডেভিল হান্ট’। এই অভিযানও যথেষ্ট ফলদায়ক হয়নি। এরই মধ্যে ৩ মার্চ একটি দৈনিকের শীর্ষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপরাধ বৃদ্ধির শঙ্কায় অভিযান আরও জোরদার করা হলেও 'ডেবিল হান্ট' নামটি আর থাকছে না এই অভিযানের। ২ মার্চ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সচিবালয়ের সভাকক্ষে কোর কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয় ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, মহাসড়কে ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও জাল টাকার কারবারসহ নানামাত্রিক অপরাধের রাশ টানতে অভিযান জোরদার করা হবে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চলমান রমজান ও ঈদ সামনে রেখে জননিরাপত্তা আরও হুমকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এমন আশঙ্কা সামনে রেখে সরকারের পক্ষ থেকে যখন নিরাপত্তা জোরদার করতে বলা হচ্ছে, তখন 'মব জাস্টিস' বাড়তে থাকল এবং তা সঙ্গত কারণেই নানা প্রশ্নও দাঁড় করাল। 'মব' বা দঙ্গল কতটা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে এর সাম্প্রতিক সর্বশেষ নজির রাজধানীর লালমাটিয়ার ঘটনাটি। কদিন আগে সেখানে চায়ের দোকানে বসে দুই তরুণী ধূমপান করছিল। তখন একজন পুরুষ আরও কয়েকজনকে জড়ো করে মেয়ে দুটির উপর হামলে পরে এবং শারীরিক নির্যাতন করে । এর প্রতিক্রিয়া এবং প্রতিবাদ সামাজিক যোগাযোগ ও সংবাদমাধ্যমে হয়েছে । হামলাকারীদের কবল থেকে আক্রান্তদের পুলিশ উদ্ধার করলেও ওই দঙ্গলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর পরের দিন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য আক্রমণকারীদের মধ্যে আইনের শাসনের ভয় তো নয়ই, উপরন্তু উৎসাহিত হওয়ার মতো যেন প্রেরণাদায়ক। অপরাধীরা এমন উৎসাহ-প্রেরণা অতীতে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল অনেকের বক্তব্য কিংবা কর্মকাণ্ডে পেয়েছে। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বেশি গুরুত্ব দেন ‘প্রকাশ্য স্থানে সিগারেট খাওয়া নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য আইনত নিষিদ্ধ’– এ বিষয়ে, নারীর ওপর আক্রমণ যেন অতি সাধারণ। আরও বিস্ময়কর, একেবারে অনাবশ্যকভাবে তিনি বলছিলেন, ‘তখন কিছু লোক নামাজ পড়তে যাচ্ছিল’। প্রকাশ্যে নারীনিগ্রহের অপরাধ তিনি কার্যত উপেক্ষা করে অপরাধীদের আস্কারা দিলেন– অনেকেরই এ অভিযোগ উপেক্ষা করার মতো কি? নারী নির্যাতন-নিপীড়নের অনেক ক্ষেত্রেই দায়িত্বশীল কারো কারো দায়িত্বহীনতার অভিঘাত সমাজে আরও কত প্রকটভাবে দৃশ্যমান হয়েছে তা আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতায় আছে। ধূমপান জনস্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর– এটা তো নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য। মানছি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও সেটাই বলেছেন। কিন্তু ধূমপানের জন্য কোনো পুরুষ মারধর খেয়েছে, এমন কোনো ঘটনা কি উপদেষ্টা মহোদয়ের জানা আছে। যদি তিনি ধূমপান নিরোধের জন্য আইনটি সম্পর্কে উপদেষ্টা ভালোভাবে অবগত নন। আইনে কোনটাকে পাবলিক স্পেস বলা হয়েছে, তা নিয়ে জেনে নিতে পারেন এখনও। এই যখন অবস্থা তখন শান্তিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা অথবা জননিরাপত্তার চাদরে সবাই আচ্ছাদিত তা বলার অবকাশ থাকে কি? এই অবস্থায় মবের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার অপছায়া বিস্তৃত হবে এটাই তো স্বাভাবিক।
মাস ছয়েক ধরে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে জনমনে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তোলার মতো অনেক প্রতিবেদনই প্রকাশিত হয়েছে, অনেক কিছু হয়তো প্রকাশ করতে পারেনি সংবাদমাধ্যম, যতটুকু প্রকাশ হয়েছে, সেটুকুই বিস্ময়কর এবং যুগপৎ প্রশ্নবোধক। খুব দূরের ঘটনা নয়। নিকট অতীতে ঢাকার আজিমপুরে যে লোমহর্ষক ঘটনা দুর্বৃত্তরা ঘটিয়েছে, তাতে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জাগে, তাদের দাপিয়ে বেড়ানোর পেছনে কোন শক্তি ক্রীড়াশীল? আজিমপুরে মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টারের বাসায় সশস্ত্র ডাকাত দল সাতসকালে ঢুকে মালামাল লুণ্ঠনের পাশাপাশি আট মাসের শিশু জাইফাকে তুলে নিয়ে যায়। স্বস্তির বিষয় হলো, র্যাব অপহৃত শিশুটিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে দ্রুততম সময়ে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তাদের এই তৎপরতাকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি দৈনিকে লিখেছিলাম, কিন্তু একই সঙ্গে এ প্রশ্নও রেখেছিলাম; যৌথ বাহিনীর অভিযান চলাকালেও দুর্বৃত্তদের দৌরাত্ম্যের অবসান ঘটানো যাচ্ছে না কেন? প্রশ্নটি এখনো সমান্তরালে জারি আছে বলেই মনে করি। ওই ঘটনার পর জননিরাপত্তাহানিজনিত আরও বহু ঘটনাই ঘটেছে। এই সময়ের মধ্যে রাজধানীর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে কয়টি খুন-খারাবির ঘটনা ঘটেছে, তাতে দেখা যায়, হত্যাকাণ্ডের পরও দুর্বৃত্তরা আরও বেশি নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছে।
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ইতোমধ্যে অনেককেই গ্রেপ্তার হয়েছে এবং আগ্নেয়াস্ত্রসহ গোলাবারুদও কম উদ্ধার হয়নি। তারপরও পুলিশের লুণ্ঠিত অনেক অস্ত্র এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। যৌথ বাহিনী সারা দেশে অভিযান অব্যাহত রেখেছে বটে, কিন্তু এর বিপরীতে সমাজবিরোধী চক্র অর্থাৎ দুর্বৃত্তরাও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় সমান্তরালে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি কিংবা জননিরাপত্তায় উদ্বেগের যে রেখাপাত ক্রমেই গাঢ় হচ্ছে, এর নিরসনকল্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর পরিকল্পনা নতুন করে সাজানো প্রয়োজন এবং সর্বত্র সাঁড়াশি অভিযানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে, এই তাগিদ ইতিমধ্যে নানা মহল থেকে সরকারকে দেওয়া হয়েছে। সবার আগে জননিরাপত্তা– এই ভাবনা প্রাধান্য দিয়ে সরকার-প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে সামাজিক শক্তির মেলবন্ধন অত্যন্ত জরুরি এ কথাও বলা হয়েছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিনির্ধারকদের সক্রিয়তাও অত্যন্ত প্রয়োজন। রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে দৃঢ় ঐক্যের সূত্রপাত ঘটিয়ে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে বিকল্প পথ অনুসন্ধান করতে হবে। যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে সাধারণ মানুষ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ডুবছে।
বিদ্যমান বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এ-ও মনে করি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, কারণ ও করণীয় দিকনির্দেশনা প্রত্যেকটি বিষয় সমান্তরালে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের উৎসে নজর দিতে হবে যথাযথ প্রতিবিধান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে। একই সঙ্গে এই সত্যও প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, অপরাধী যত কৌশলই অবলম্বন করুক না কেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তাদের ধরা পড়তেই হবে এবং বিচারে প্রাপ্য দণ্ডটুকুও ভোগ করতে হবে। এ ধারণা সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঠেকানোর পাশাপাশি জনমনে শান্তি ফেরানোর পথ অনেকটাই কণ্টকমুক্ত হবে, শান্তিপ্রিয়দের এই প্রত্যাশায় যাতে চির না ধরে তা নিশ্চিত করার দায় সরকারেরই।
যে কোনো স্থিতিশীল সমাজের অন্যতম শর্ত জননিরাপত্তা। টেকসই উন্নয়নের সঙ্গেও জননিরাপত্তার বিষয়টি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। জননিরাপত্তা-সামাজিক শৃঙ্খলা এবং প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে নিয়মনীতির যথাযথ প্রতিপালন ইত্যাদি জরুরি বিষয় হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। অপরাধ সমাজের অন্যতম গুরুতর ব্যাধি এবং এই ব্যাধি উন্নয়ন-অগ্রগতির অন্যতম প্রতিবন্ধক। স্বাধীনতার পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ে এ রকম তিক্ত অভিজ্ঞতা ইতঃপূর্বে আমাদের সঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে সমাজে অপরাধ বৃদ্ধির মতো উদ্বেগজনক পরিস্থিতির উদ্ভব কিংবা জিইয়ে থাকা অনেকটাই অপ্রত্যাশিত।
অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শুধু সামাজিক অস্থিরতাই প্রত্যক্ষ কারণ নয়, এর সঙ্গে রাজনৈতিক ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলোও সম্পৃক্ত অতীত ও বর্তমানের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে তা প্রতীয়মান হয়। তা ছাড়া প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগে অনেক ক্ষেত্রেই এর সদ্ব্যবহার না করে সমাজের কিংবা প্রজন্মের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অপব্যবহারে মেতে উঠেছে। আমাদের অভিজ্ঞতায় এ-ও আছে, রাজনৈতিক হীনস্বার্থ চরিতার্থকরণের জন্যও কোনো কোনো রাজনীতিক সমাজবিরোধীদের নানাভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন এবং এর বিরূপ প্রভাব ভয়াবহ হয়ে ওঠে। বিদ্যমান পরিস্থিতির পেছনে এর কোনো যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। একই সঙ্গে প্রয়োজন দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ। দুঃখজনকভাবে আমাদের সমাজে ‘বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি’ শব্দযুগল বহুল প্রচলিত হয়ে পড়েছে। আমরা দেখছি অনেক ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির আশা ছেড়ে দিয়েছেন ভুক্তভোগী। এর পেছনে মুখ্যত দায়ী বিচারপ্রক্রিয়ার অন্যতম জরুরি অনুষঙ্গ সুষ্ঠু তদন্ত কার্যক্রমে অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্ব এবং অভিযোগপত্র গঠনে ধীরগতি। এই উপসর্গগুলো জিইয়ে রেখে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা যে সহজ নয় এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নতুন করে নিষ্প্রয়োজন।
প্রায় ১৮ কোটির এই অতি জনঘনত্বের দেশটিতে নতুন করে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে এর নিরসন করতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যদি দ্রুত স্বাভাবিক করা না যায় এবং জননিরাপত্তা নিয়ে যদি অস্থিরতা বিরাজ করতেই থাকে তাহলে অন্যান্য ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত পুলিশসহ অন্য সব বাহিনীকেও সমান্তরালে আরও কার্যকর করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। পুলিশ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সম্পর্কের বন্ধনের ঘাটতি দূর করে মৈত্রীর সেতুবন্ধ গড়ে তোলাও বাঞ্ছনীয়। এ রকম পরিস্থিতিতে প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জনস্বার্থে এ ক্ষেত্রে গৃহীত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দূরদর্শী হতেই হবে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করায় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর দায় অনেক বেশি, তবে রাজনীতিকসহ সমাজ প্রতিনিধিদের দায়ও কম নয়।
কিছু দিন আগে কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর জামিনে মুক্তি পাওয়ার ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দেয়। সংবাদমাধ্যমে অনেকেরই আশঙ্কা জানা গিয়েছিল, যেখানে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কারাগারে থেকেই ঢাকার অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করত, সেখানে জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর তা আরও পাকাপোক্ত হবে। জামিন পাওয়াকে অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার বলে সংশ্লিষ্টরা সাফাই গাইতে পারেন। কিন্তু দেখতে হবে জামিন পাওয়া ব্যক্তি আরও অনেক ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে পড়ে কি না। যারা কারাগারে থেকে অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে, উদ্দীষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করে, তারা বাইরে এসে কী করবে, সেটা অনুমান করা কঠিন কিছু নয়। নিকট অতীতে জনমনে এ ব্যাপারে যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল তা এখনও জারি আছে। পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কারাগার থেকে বের হয়ে আসা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর যে অঙ্গীকার করেছিলেন, এর প্রতিপালন তারা কতটা করতে সক্ষম হয়েছেন এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ জরুরি। তারা যেন ভুলে না যান যে জনগণের নিরাপত্তা কিংবা জানমাল রক্ষার দায়িত্ব সরকারেরই।