বাঁশখালীর গণ্ডামারায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সংঘর্ষের নেপথ্যে ‘রাজনৈতিক ইন্ধন’ আছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী।
Published : 07 Apr 2016, 04:46 PM
বাঁশখালীর বিদ্যুৎকেন্দ্র: পর্যাপ্ত সর্তকতা না থাকলে ‘ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদি’
বাঁশখালীর গণ্ডামারা এখনও থমথমে
দুই চাচা হারানোর পর হাসপাতালে হাতকড়া
বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র: প্রভাব নিয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রকাশের দাবি
বাঁশখালীতে বুধবার হরতালের ডাক স্থানীয় ছাত্র সংগঠনের
ভিটে-পেশা হারানোর শঙ্কা থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা
বাঁশখালীতে হতাহতের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি
এক মিছিলে দুই ভাইকে হারালেন বাঁশখালীর বদি
বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর নাসিরাবাদের রহমান নগরে নিজের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে এই আওয়ামী লীগ নেতা অভিযোগ করেন, গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী ‘চাঁদা না পেয়ে’ এলাকার ‘সরল মানুষকে উসকানি দিয়ে’ এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ পাওয়া এস আলম গ্রুপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ক্ষুব্ধ সাংসদ পাল্টা প্রশ্ন করেন- “আঁই কি ফইন্ন্যির পোয়া না?”
বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে-বিপক্ষের সমাবেশ নিয়ে সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার পর তিন দিনেও নিজের নির্বাচনী এলাকায় না গিয়ে চট্টগ্রাম শহরে এই সংবাদ সম্মেলন করেন মোস্তাফিজুর।
গণ্ডামারা ইউনিয়নের বড়ঘোনায় ‘১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র’ যৌথভাবে নির্মাণ করছে এস আলম গ্রুপ ও চীনের একটি প্রতিষ্ঠান। তবে ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে স্থানীয়দের একটি অংশ এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করে আসছেন। তাদের অভিযোগ, এস আলম গ্রুপ পুনর্বাসনের সুযোগ না দিয়ে জোর করে জমি অধিগ্রহণ করছে।
স্থানীয়দের অন্য একটি অংশ ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে অবস্থান নিলে দুই পক্ষে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতাকারীরা সোমবার ‘বসতভিটা রক্ষা কমিটি’র ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিলে অন্য পক্ষও পাল্টা সমাবেশ ডাকে।
উত্তেজনা এড়াতে স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। এরপরও দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ালে গুলিতে চারজন নিহত হন। তারা সবাই ভিটামাটি রক্ষা কমিটির ডাকে সমাবেশে যোগ দিতে মিছিলে গিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গণ্ডামারায় ১৪৪ ধারা জারির বিষয়ে তিনি ‘কিছুই জানতেন না’।
“প্রশাসন আমাকে বলেনি যে ১৪৪ ধারা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন আমাকে জিজ্ঞেসও করেনি। ১৪৪ ধারা দেওয়া হয়েছে শান্তির জন্য।”
ঘটনার তিন দিন পরও এলাকায় না যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “সোমবার ঢাকায় ছিলাম। পরদিন বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেলে আহতদের দেখতে গিয়েছি। ততোক্ষণে নিহতদের দাফন হয়ে গেছে। আগামীকাল এলাকায় যাব।”
গত সপ্তাহে নগরীর একটি হোটেলে ওই অনুষ্ঠানে এস আলমের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কেন্দ্র নির্মাণের পক্ষ-বিপক্ষের লোকজনও উপস্থিত ছিলেন।
ওই সভায় কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ‘প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র’ দেখানো হয় বলে দাবি করেন মোস্তাফিজুর। তিনি অভিযোগের আঙুল তোলেন ‘ভিটামাটি রক্ষাকারী এলাকাবাসী’র আহ্বায়ক বিএনপি নেতা লিয়াকত আলীর দিকে।
সাংসদ বলেন, লিয়াকত আলীর সঙ্গে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা নিয়ে কিছুদিন আগে এক বিয়ের অনুষ্ঠানেও তার কথা হয়েছে।
“লিয়াকত এস আলমের কাছ থেকে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা নিয়ে জমি দেয়নি। ওই টাকায় লিয়াকত অস্ত্র কিনেছে। সেই এক নম্বর দায়ী।
“তাকে টেলিফোনে বলেছি- যদি কেন্দ্রের কারণে পরিবেশের ক্ষতি হয়, তাহলে আসো আলোচনা করি। সে আসেনি।”
‘লিয়াকতের লোকরাই গুলি করেছে’
গণ্ডামারার বাসিন্দাদের দাবি, এস আলম গ্রুপের ‘ভাড়া করা সন্ত্রাসীরা’ সেদিন সংঘর্ষের সময় গুলি শুরু করেছিল। পরে কেন্দ্রবিরোধীরা ধাওয়া দিলে পুলিশ টিয়ার শেল ও গুলি ছোড়ে।
তবে এ বিষয়ে সাংসদের দাবি ভিন্ন।
তিনি বলেন, “লিয়াকত স্থানীয়দের বারবার উসকানি দিয়ে পুলিশকে এমনভাবে ঘিরে ফেলেছিল, পুলিশ গুলি করতে বাধ্য হয়েছে। এতে সেখানে প্রাণহানি ঘটেছে।”
এরপর সাংসদ আবার বলেন, “যারা মারা গেছে তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলেছি। লিয়াকতের পক্ষের লোকদের গুলিতেই মানুষের মৃত্যু হয়েছে।”
মোস্তাফিজুরের দাবি, যে এলাকায় আন্দোলন তা প্রকল্প এলাকা থেকে চার কিলোমিটার দূরে। যারা জমি বিক্রি করেছেন তাদের কোনো ‘ক্ষোভ নেই’, তারা এস আলমের ‘পক্ষে’।
“জানাজায় গিয়ে জাফরুল ইসলাম চৌধুরী (বাঁশখালীর সাবেক সাংসদ) ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (নগর বিএনপি সভাপতি) বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বলে এসেছে। তাদের খালেদা জিয়া পাঠিয়েছে,” বলেন সাংসদ।
নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে অনুদান ও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা সরকারের পক্ষে করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভবিষ্যত জানতে চাইলে সংসদ সদস্য বলেন, “যদি পরিবেশ দূষণ না করে তাহলে সন্ত্রাসী কাজের জন্য কী প্রকল্প বন্ধ থাকবে? এ বিষয়ে এস আলম ও সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।”