বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে-বিপক্ষের সমাবেশ নিয়ে সংঘর্ষে রক্তাক্ত বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নের পরিস্থিতি দুই দিনেও স্বাভাবিক হয়নি।
Published : 06 Apr 2016, 09:44 PM
পুলিশ বা প্রশাসনের কেউ নিহত চারজনের পরিবারের সদস্যদের খোঁজ নিতে বুধবার গণ্ডামারায় যায়নি। সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বিরোধিতা করে বিক্ষোভ হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম নগরীতে সমাবেশ হয়েছে বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের দাবিতে।
এছাড়া সোমবারের ওই ঘটনায় গুলিতে আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন দুইজনকে এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে হাতকড়া পরিয়েছে পুলিশ; যাদের একজন সেদিন হারান দুই চাচাকে।
গণ্ডামারায় বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী সমাবেশ গুলিতে চারজন নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও জড়িতদের বিচার চেয়ে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে বুধবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় ‘চট্টগ্রামস্থ বাঁশখালী ছাত্র ঐক্য ফোরাম’।
হরতালে বাঁশখালী উপজেলা সদরে অন্যান্য দিনের মতই যানবাহন চলেছে। সমুদ্র তীরবর্তী গণ্ডামারায় সচরাচর কম যানবাহন চলে। বুধবার তার সংখ্যা ছিল আরও কম।
সোমবার বিকালে বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নের বড়ঘোনা এলাকায় এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতায় স্থানীয়রা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ালে চারজন নিহত হন, আহত হন পুলিশসহ কমপক্ষে ১৯ জন।
বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী গ্রামবাসীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে চারজন নিহতের ঘটনায় ছয় হাজার জনকে আসামি তিনটি মামলা হয়েছে। নিহত তিনজনের দুই পরিবার দুটি এবং সরকারি কাজে বাধা ও হামলার অভিযোগে অন্য মামলাটি করেছে পুলিশ।
বুধবার দিনভর গণ্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনা ও পশ্চিম গণ্ডামারাসহ এলাকার অন্য কোথাও পুলিশ বা স্থানীয় প্রশাসনের কাউকে দেখা যায়নি।
দুপুরে পশ্চিম গণ্ডামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জড়ো হয় বিক্ষোভ করে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বিরোধিতাকারী স্থানীয়রা। এসময় তারা কালো ব্যাজ ধারণ করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্লোগান দেয়।
এনএসএন কনসোর্টিয়ামের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন এবং কো-চেয়ারম্যান বাহাদুর আলম হিরণের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ জানায় স্থানীয়রা।
আহত জহিরুল-খালেকের হাতে হাতকড়া
ওই ঘটনায় নিহত দুজন মরতুজা আলী ও আনোয়ারুল ইসলাম ওরফে আংকুর আলীর ভাই বদি আহমদের ছেলে আবদুল খালেক।
চমেক হাসপাতালের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে জহিরুল ও ক্যাজুয়ালটিতে খালেক ভর্তি আছেন।
বুধবার পুলিশ তাদের হাতকড়া পরিয়ে দেয় সরকারি কাজে বাধা ও হামলার অভিযোগে করা মামলায়।
খালেকের বাবা বদি আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ছেলেকে হাতকড়া পরিয়ে দিয়েছে। সে নড়তে-চড়তে পারছে না।
“আহত হলো সে, সে বলে আসামি! এখন কী করব? কারে কী বলব?”
এ প্রসঙ্গে বাঁশখালী থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওরা মামলার আসামি। তাই তাদের হাতে হাতকড়া পরানো হয়েছে।”
বাঁশখালীতে ডাকা হরতালে কোনো প্রভাব পড়েনি দাবি করে তিনি বলেন, “বাঁশখালীতে কোথাও হরতাল হয়নি। স্বাভাবিকভাবে গাড়ি চলেছে।”
বুধবার পুলিশ সদস্যদের গণ্ডামারায় না যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন ওসি স্বপন।
সরকারি কাজে বাধা ও হামলার অভিযোগে করা পুলিশের মামলাসহ দুই মামলার আসামি গণ্ডামারায় ‘ভিটামাটি রক্ষাকারী এলাকাবাসী’র আহ্বায়ক বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী।
বুধবার তিনি এলাকায় ছিলেন; দুপুরের বিক্ষোভে তাকে দেখা যায়নি।
লিয়াকত আলীকে গ্রেপ্তার করা হবে কি না- জানতে চাইলে ‘হাসি দিয়ে’ উত্তর এড়িয়ে যান ওসি।
নগরীতে ‘উন্নয়নের দালালদের’ সমাবেশ
সমাবেশ থেকে অবিলম্বে লিয়াকতের গ্রেপ্তার ও ফাঁসি দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হারিছ মো. শিকদার, মো. ইব্রাহিম উদ্দিন আহমদ, মোশাররফ হোসেন, মো. ইব্রাহিম সোহেল ও সরওয়ার খান সাইমুম।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ৪০ জনের বেশিরভাগ ছিল কিশোর। তাদের হাতে থাকা ব্যানার-ফেস্টুনে ছিল লিয়াকতের ছবি ও তার ফাঁসির দাবি।
সমাবেশে ইব্রাহিম সোহেল বলেন, “বাঁশখালীর উন্নয়ন যারা চায় না তারাই দাঙ্গা লাগিয়ে মানুষ মেরেছে। আমরা কারও দালাল না, উন্নয়নের দালাল।”
মানববন্ধন চলাকালে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকারী এস আলম গ্রুপের এক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি কোনো কথা বলতে অসম্মতি জানান।
সমাবেশে অংশ নেওয়া কয়েকজন কিশোরের কাছে তাদের বাড়ি বাঁশখালী কি না- জানতে চাইলে তারা ‘না-সূচক’ জবাব দেয়।
কয়লাভিত্তিক বেসরকারি ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জমি নেওয়াকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ ছিল। তবে একটি অংশ ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে অবস্থান নিলে দুই পক্ষে উত্তেজনা দেখা দেয়।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতাকারীরা সোমবার ‘বসতভিটা রক্ষা কমিটি’র ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিলে অন্য পক্ষও পাল্টা সমাবেশ ডাকে। উত্তেজনা এড়াতে স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছিল।