হকারদের পাঁচটি সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী ফুটপাতে ব্যবসা করার সুযোগের দাবিতে এদিনও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
Published : 28 Feb 2024, 07:14 PM
যতই আন্দোলন হোক, কাউকে অবৈধভাবে ফুটপাতে বসতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন চট্টগ্রামের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
বুধবার বিকেলে নগরীর আদালত ভবন এলাকায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে কোভিড-১৯ রিকভারি প্রজেক্টের আওতায় প্রথম পর্যায়ে নগরীর ৬৬ কিলোমিটার রাস্তায় এলইডি বাতি স্থাপন কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র এই হুঁশিয়ারি দেন।
এর আগে দুপুরে হকারদের পাঁচটি সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী নগরীর টাইগার পাস এলাকায় সড়কে অবস্থান নিয়ে মামলা প্রত্যাহার ও ফুটপাতে ব্যবসা করার সুযোগের দাবিতে বিক্ষোভ করে।
তারা টাইগার পাস থেকে লালখান বাজারমুখী মূল সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ বিআরটিসিমুখী সড়কে অংশ নেয়। প্রায় ২০ মিনিট অবস্থানের পর ওই এলাকা ছেড়ে যান হকাররা।
বিকালের অনুষ্ঠানে ফুটপাত রক্ষায় অনড় অবস্থান জানিয়ে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “অবৈধভাবে ফুটপাত দখলকারীদের জনস্বার্থে উচ্ছেদ করেছি৷ অবৈধভাবে রাস্তা দখলের জন্য চাপ তৈরি করতে একটি মহল আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে৷ কার আন্দোলন? কিসের আন্দোলন?
“জনগণের ফুটপাত দখল করার অধিকার ওদের কে দিয়েছে? যত আন্দোলনই করেন না কেন, আমি ফুটপাতে অবৈধভাবে বসতে দেব না৷”
গত ৮ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নগরীর বিআরটিসি ফলমণ্ডি এলাকা থেকে নিউ মার্কেটের আমতল পর্যন্ত ফুটপাতে অভিযান চালিয়ে হাজারখানেক হকারকে উচ্ছেদ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
উচ্ছেদের চার দিনের মাথায় ১২ ফেব্রুয়ারি ফুটপাত পুনর্দখল ঠেকাতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অভিযানকালে নগরীর রেলস্টেশন এলাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
রেলওয়ে স্টেশন, বিআরটিসি ফলমণ্ডি এলাকা থেকে নিউ মার্কেটের আমতল পর্যন্ত এলাকায় সংঘর্ষে পুলিশ, হকার ও সিটি করপোরেশনের কর্মীসহ প্রায় ১৫ জন আহত হন। ভাঙচুর করা হয় করপোরেশনের কয়েকটি গাড়ি।
ওই ঘটনায় পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আলাদা দুটি মামলা করা হয়। দুই মামলায় আসামির তালিকায় ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়, যাদের মধ্যে শ্রমিক লীগ, হকার্স লীগসহ হকারদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের নাম রয়েছে।
এরপর ১৮ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি হকার সংগঠনের নেতারা নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সাথে দেখা করে উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসনের দাবি জানান।
সেদিন হকার নেতাদের সাথে সাক্ষাতে ফুটপাত দখলমুক্ত করার পাশাপাশি উচ্ছেদ হওয়া হকারদের পুনর্বাসনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার দাবি জানান মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী।
এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি নগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ বিবৃতি দিয়ে পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদের ঘটনার প্রতিবাদ জানান।
উচ্ছেদের পর থেকেই বিআরটিসি থেকে নিউ মার্কেট হয়ে জিপিও এবং আমতলা পর্যন্ত এলাকায় হকাররা নতুন করে বসার চেষ্টা করছেন।
মঙ্গলবার এসব এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, হকাররা দোকান না বসালেও ফুটপাতের কয়েকটি স্থানে চৌকি রেখেছেন। হকার সংগঠনগুলোর লোকজন এবং ভাসমান এসব দোকানের মালিক ও কর্মচারীরা বিভিন্ন ফুটপাতে অবস্থান নিয়ে আছেন।
ইতোমধ্যে ওইসব এলাকায় নালা পরিষ্কার ও সংস্কার, পাকা ফুলের টব নির্মাণ এবং ফুটপাত সংস্কারের কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
বুধবারের অনুষ্ঠানে মেয়র রেজাউল বলেন, “আমি পুরো নগরীর আলোকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। প্রাথমিকভাবে আজ ৬৬ কিলোমিটার রাস্তায় এলইডি বাতি স্থাপনের কাজ শুরু হল। পর্যায়ক্রমে পুরো নগরীকে আলোকায়ন করা হবে৷
“আলোকায়নে গুরত্ব দেওয়া হচ্ছে নান্দনিকতায়ও৷ প্রজাপতি ও নৌকার আদলে বাতি দিয়ে শহরের রাতের সৌন্দর্যে ভিন্ন মাত্রা যোগ করা হচ্ছে৷”
কিছু কিছু এলাকায় তার চুরির কারণে নগরবাসী কষ্ট পাচ্ছে জানিয়ে চুরি ঠেকাতে নগরবাসীর সহযোগিতা চান মেয়র রেজাউল।
তিনি বলেন, “নগরীর ঝুলন্ত তারের জঞ্জাল সরাব৷ লালখানবাজারে ইতোমধ্যে ঝুলন্ত তার মাটির নিচে নিয়ে গেছি৷ দেড় বছরের মধ্যে নগরীর সব তার মাটির নিচে নেওয়া আমাদের লক্ষ্য।”
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, আবদুস সালাম মাসুম ও নূর মোস্তফা টিনু, মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম, চসিকের বিদ্যুৎ উপবিভাগের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পুরনো খবর
হকার উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসন জরুরি: চট্টগ্রাম নগর বিএনপি
ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ: চট্টগ্রামে হকার-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ১৫
ফুটপাত উদ্ধারে ‘ব্যাপক অভিযানে’ নামছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন